মধ্যরাত ,একলা মেয়ে ও ফ্যান্টাসি!—মাহবুব হাসান, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া
#ঝিনাইদহের চোখঃ
রাত ১১ টা ৪০ মিনিট। কুয়ালালামপুর আন্তজার্তিক বিমানবন্দরের বাস স্টেশনে বসে আছি।এলইডি স্ক্রিনের লেখাতে চোখ মেলাতেই দেখলাম স্টার শাটলের ৫২০৯৮৩২ কোচ ছাড়বে ১২টা ০১ মিনিটে।ফোনে মাত্র ৫% চার্জ আছে।আর পাওয়ার ব্যাংকটাও গতকাল থেকে নষ্ট হয়ে গেছে।সেলাঙ্গর প্রদেশের আমপাং এলাকায় থাকি আমি। এখান থেকে বাসে পুডুরায়া পর্যন্ত,এরপর বাস বা ট্রেনে করে তারপর বাসাতে ফিরতে হবে।চিন্তাটা এখানেই!স্বাভাবিকভাবে রাত ১২ টার পর ট্রেন ও বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।ভরসা শুধুমাত্র গ্রাব ও মাই কারের ওপর(রাইড শেয়ারিং এপ্স)!ফোনে চার্জ না থাকায় পড়ে গেলাম দুঃশ্চিন্তায়!এতো রাতে চোখে রীতিমত সর্ষে ফুল দেখছি আর নিজের প্রতি বিরক্ত হচ্ছি! কেনো যে আসার আগে একটা নতুন পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে নিলাম না!
স্ক্রিনের লেখায় ১২টা ০১মিনিট,বোর্ডিং শুরু!এতোটাই খারাপ লাগছে যে,নিজের সিট নাম্বারটাও ঠিকমত দেখিনি। দ্বিতীয় সারির ৩য় কলামের জানালার পাশের সিটে বসে গেলাম।নাহ! কিছুই ভালো লাগছেনা! কেমনে যে কি করবো!আর এই মধ্যে রাতে বাস থেকে নেমে ট্যাক্সির কথা চিন্তাও করতে পারছিনা!
হঠাৎ পাশে অপরিচিত একটা মেয়ে এসে বসলো।বেশ এলোমেলো ও অপ্রস্তুত ভাবেই সিটে বসে ছিলাম ।মেয়েটার উপস্থিতিতে একটু নড়ে চড়ে বসলাম।কিছুক্ষণ পর বাস ছাড়লো।বিমানবন্দর থেকে ঘন্টাখানেকের একটু বেশি লাগবে পুডুরায়া পৌঁছাতে!মনে দ্বিধা নিয়েই মেয়েটাকে জিজ্ঞাস করলাম-ডু ইউ হ্যাভ পাওয়ার ব্যাংক? জবাব আসলো-‘’সরি,আই ডোন্ট ইউজ পাওয়ার ব্যাংক”।মনে মনে ভাবলাম,ক্ষ্যাত নাকি,স্মার্টফোন ব্যবহার করে আর পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করেনা!
মুহুর্তেই তিনি জিজ্ঞাস করলেন-‘হোয়ার ইউ ও্যান্ট টু গো”,জবাব দিলাম। এরপর আর একটা দুইটা বাক্য বিনিময় হলো! দুই জনেই চুপ! স্বাভাবিকভাবে মালয় মেয়েরা বিদেশি ছেলেদের সাথে পাবলিক প্লেস বা পরিবহনের কথা বলতে মোটেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না,তাই আমিও আগ বাড়িয়ে কথা বলছিনা! কিছুক্ষণ পরে মেয়েটা আমার সম্পর্কে ,আমার পরিবারের সম্পর্কে, কতদিন এখানে আছি,কি করি,ফিউচার প্লান কি-সবই জিজ্ঞাস করতে লাগলো। আমিও খোলস ছেড়ে বের হলাম! এ কথা সে কথার ফাঁকে মেয়েটা আমাকে বললো সে বাস থেকে নামার পর সেভেন ইলেভেন ( চেইন শপ) থেকে সিমকার্ড কিনবে এবং এরপর আমাকে সাহায্য করবে গাড়ি বুকিং দিতে! ভালো কথা! কথার পৃষ্ঠে কথা চলছে আর হাইওয়ে দিয়ে বাস ছুটে চলেছে গন্তব্যের দিকে।
রাত ১টা ৩৫ মিনিট।বাস গন্তব্যের কাছাকাছি,একটু আধটু চিন্তাও হচ্ছে কি যে করবো এখন।আর পুডুয়ারা এলাকাটা বাঙ্গালী অধ্যুষ্যিত তারপরেও এই মাঝরাতে খুব বেশি নিরাপদ না। বাস থামলো, মেয়েটা আমার আগেই নেমে বক্সে থাকা লাগেজ কালেক্ট করছে আর আমি অপেক্ষায় আছি মেয়েটার……!
(চলবে)