জানা-অজানা

ছড়াচ্ছে অ্যানথ্রাক্স, যেসব বিষয় জেনে রাখা জরুরি

#ঝিনাইদহের চোখঃ

আবার ছড়িয়ে পড়ছে অ্যানথ্রাক্স। সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় অ্যানথ্রাক্স রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এজন্য এই রোগ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।

অ্যানথ্রাক্স নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে রোগটি সম্পর্কে আদ্যোপান্ত উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মানুষের অ্যানথ্রাক্স মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা-এক ধরনের অ্যানথ্রাক্স হয় পরিপাকতন্ত্রে, আরেক ধরনের অ্যানথ্রাক্স শরীরের বাইরের অংশে সংক্রমণ ঘটায়।

পরিপাকতন্ত্রে অ্যানথ্রাক্স জীবাণুর সংক্রমণ হলে সাধারণত হালকা জ্বর, মাংসপেশীতে ব্যথা, গলা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে বাংলাদেশে যে অ্যানথ্রাক্স দেখা যায় তা শরীরের বাইরের অংশে প্রভাব ফেলে। এ ধরনের অ্যানথ্রাক্সে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোঁড়া বা গোটা হয়ে থাকে। ফোঁড়া ঠিক হয়ে গেলে হাতে, মুখে বা কাঁধের চামড়ায় দাগ দেখা যেতে পারে।

যেসব এলাকায় গবাদিপশু পালন করা হয় সেসব এলাকাতেই সাধারণত অ্যানথ্রাক্সের প্রকোপ বেশি দেখা যায় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা জানান, বাংলাদেশে সাধারণত কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকাতেই অ্যানথ্রাক্স হয়ে থাকে। আর অ্যানথ্রাক্স গরু, ছাগল, মহিষ-এই ধরনের প্রাণীর মধ্যে প্রথম দেখা যায়। এসব প্রাণীর মাধ্যমেই অ্যানথ্রাক্স মানুষের মধ্যে ছড়ায়। মূলত অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস কাটার সময় মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স ছড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।

সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, ‘পশু জবাই করা, সেটির মাংস কাটাকাটি করা এবং মাংস ধোয়া বা রান্নার সময় অনেকক্ষণ মাংস, রক্ত ও হাড্ডির সংস্পর্শে থাকতে হয়। সে সময় আক্রান্ত পশুর রক্তের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে অ্যানথ্রাক্স।’

মাংস কাটাকাটির সময় মানুষের শরীরের চামড়ায় কোনোরকম ক্ষত থাকলে তার দেহে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু প্রবেশ করার সম্ভাবনা বেশি তাকে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে পশুর অ্যানথ্রাক্স হলেও অনেকসময় তা জবাই করে মাংস কম দামে বিক্রি করে ফেলা হয়। ওই মাংস কাটাকাটি করার সময় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’

তবে আইইডিসিআরের এই পরিচালক নিশ্চিত করেন, পশু থেকে মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ হলেও মানুষ থেকে অন্য মানুষের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ হয় না।

ফ্লোরাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস খেয়ে পরিপাকতন্ত্রে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশে সাধারণত যেভাবে মাংস রান্না করে খাওয়া হয় তাতে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু মাংসে টিকে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে বিদেশে ‘হাফ ডান’ অবস্থায় মাংস রান্না করে খাওয়া হয়, সেই পদ্ধতিতে রান্না করলে মাংসে জীবাণু থাকার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে যেভাবে মাংস রান্না করা হয়, ওই পদ্ধতিতে রান্না করলে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু থাকার সম্ভাবনা খুব কম থাকে বলে বলছেন আইইডিসিআরের এই কর্মকর্তা। তবে, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস না খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে দুই ধরনের পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন মীরজাদী সাবরিনা। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, যাদের গরু, মহিষ, ছাগলের মতো গবাদি পশু রয়েছে, তারা যেন তাদের পশুকে নিয়মিত অ্যানথ্রাক্সের টীকা দেন তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পশুর যদি অ্যানথ্রাক্স হয়েই যায়, সেক্ষেত্রে পশুকে দ্রুত মাটির নিচে পুঁতে ফেলা প্রয়োজন।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button