ঝিনাইদহে লাখে ১৬-২২ জন আত্মহত্যা করে
#ঝিনাইদহের চোখঃ
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে দেশে গলায় ফাঁস দিয়ে ও বিষপানে ৫৪ হাজার ৩৯ জন আত্মহত্যা করে।
এর মধ্যে গত বছর ১১ হাজার ৪৮৪ জন, ২০১৭ সালে ১১ হাজার ৩৭, ২০১৬ সালে ১০ হাজার ৬৮৫, ২০১৫ সালে ১০ হাজার ৬২৭ এবং ২০১৪ সালে ১০ হাজার ২০৬ জন আত্মহত্যা করে। এর বাইরে অন্যান্য উপায়ে আত্মহত্যার ঘটনাও রয়েছে।
মামলা দায়েরের ভিত্তিতে তৈরি করা এই পরিসংখ্যান বলছে, প্রত্যেক বছরই আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে চলছে। তবে তা ঠেকাতে সরকারি পর্যায়ে কোনো উদ্যোগ নেই।
এদিকে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম বলছে, গত ৬ মাসে ধর্ষণের পর বিচার না পেয়ে ১০টি শিশু আত্মহত্যা করেছে। এ সময়ে নানা কারণে ১৩৩ শিশু আত্মহত্যা করে এবং অন্তত ১০ শিশু আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও প্রাণে বেঁচে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশে আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সোসাইটি ফর ভলান্টারি অ্যাক্টিভিটিস (শোভা) বলছে, ১৯৭২ সাল থেকে ‘৮৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বে প্রতি লাখে ৪ জন মানুষ আত্মহত্যা করত। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তা ১০ জনে ছিল। বর্তমানে সেই সংখ্যা ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশে প্রতি লাখে গড়ে ৭ জন আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় এই হার লাখে ১৬ থেকে ২২ জন।
শোভা ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যা প্রতিরোধে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। ওই এলাকায় আত্মহত্যার কারণ ও তা প্রতিরোধের উপায় নিয়েও সংস্থাটি গবেষণা করে আসছে। এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরামর্শক জাহিদুর ইসলাম বলেন, ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। গত বছর ওই জেলার ৬টি উপজেলায় ৩৯৬ জন আত্মহত্যা করে। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে সেই সংখ্যা ১৫৬ জন।
ওই জেলায় সর্বোচ্চ আত্মহত্যার কারণ কী? জাহিদুর বলেন, ঝিনাইদহে নদী ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, খরা বা বন্যার মতো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় ওই এলাকার মানুষের প্রতিকূল পরিবেশে সংগ্রাম বা কষ্ট সহ্য করার মানসিকতা কম। এ ছাড়া প্রাকৃতিক কারণেই এখানকার কিছু মানুষ আগ্রাসী মনোভাবের। ঝিনাইদহ ও আশপাশের জেলাগুলোর মানুষ অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ এবং তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও কম। আশপাশের আত্মহত্যার ঘটনাও তাদের প্রভাবিত করে। এর বাইরে অন্যান্য জেলার মতো সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক কারণও এখানে রয়েছে।