মহাকাশ জয়ী গর্বিত ১১ মুসলিম নভোচারী
ঝিনাইদহের চোখঃ
মহাকাশ নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ অনেক বেশি। সে কারণেই মহাকাশ নিয়ে মানুষের গবেষণার শেষ নেই। মৃত্যুকে নিশ্চিত জেনেও মানুষ এ মহাকাশ ভ্রমণের দুঃসাহসিক অভিযানে অংশগ্রহণ করে। মহাকাশ জয়ের এ অভিযানে অন্যদের পাশাপাশি অবদান রেখেছে গর্বিত ১১ মুসলিম নভোচারী।
সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর মহাকাশ ভ্রমণে গিয়ে ৩ অক্টোবর ফিরে এসেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুসলিম নভোচারী হাজ্জা আল-মানসুরি। তারা মুসলিম বিশ্বের জন্য গর্ব। গর্বিত ১১ জন মুসলিম মহাকাশ নভোচারির সদস্যরা হলেন-
>> সুলতান বিন সালমান আল-সৌদি (সৌদি আরব)
সুলতান বিন সালমান প্রথম মুসলিম নভোচারী। যিনি মহাকাশ ভ্রমণের সৌভাগ্য অর্জন করেন। তিনি প্রথম মুসলিম ও আরব নাগরিক হিসেবে ১৯৮৫ সালের ১৭ জুন ‘এসটিএস-৫১ জি’ মহাকাশযানে এ ভ্রমণ করেন। ১৯৫৬ সালের ২৭ জুন জন্ম নেয়া সুলতান বিন সালমান ২৯ বছর বয়সে মহাকাশ ভ্রমণ করেন।
>> মোহাম্মদ ফরিস (সিরিয়া)
মোহাম্মাদ ফারিস দ্বিতীয় মুসলিম মহাকাশ নভোচারী। যিনি ১৯৮৭ সালের ২২ জুলাই ‘মীর ইপি-১’ মহাকাশযানে প্রথম সিরীয় নাগরিক ও দ্বিতীয় আরব হিসেবে এ ভ্রমণ করেন। ১৯৫১ সালের ২৬ মে জন্ম নেয়া ৩৬ বছর বয়সী ফারিস নভোচারীর খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি অর্ডার অব লেলিন ও হিরো অব দ্য সোভিয়াত ইউনিয়ন পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
>> মুসা মানারোভ (আজারবাইজান)
তৃতীয় মহাকাশ নভোচারী গর্বিত মুসলিম সদস্য হলেন মুসা মানারোভ। যিনি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ২ বার মহাকাশ ভ্রমণে অবস্থান করেন। ৫৪১ দিন মহাকাশে অবস্থান করেন তিনি।
তিনি ১৯৮৭ সালে ‘মীর নিউ-৩’ মহাকাশযানে প্রথম বার এবং দ্বিতীয়বার ১৯৯০ সালে ‘সুয়েজ টিএম-১১’তে মহাকাশ ভ্রমণ করেন। তিনি ১৯৫১ সালের ২২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমবার মহাকাশ ভ্রমণের সময় তার বয়স হয়েছিল ৩৬ বছর।
তিনিও হিরো অব দ্য সোভিয়াত ইউনিয়ন ও অর্ডার অব লেলিনসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
>> আবদুল আহাদ মোহামান্দ (আফগানিস্তান)
আবদুল আহাদ মোহামান্দ ৪র্থ মুসলিম এবং প্রথম আফগান হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণ করেন। তিনি ১৯৮৮ সালের ২৯ আগস্ট ‘মীর ইপি-৩’মহাকাশযানে এ ভ্রমণ করেন।
১৯৫৯ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মহাকাশ ভ্রমণের সময় তার বয়স হয়েছিল ২৯ বছর। তিনি মহাকাশে ৯ দিন অতিবাহিত করেন।
তিনিই প্রথম মহাকাশ নভোচারী যিনি মহাকাশে পবিত্র কুরআনুল কারিম নিয়ে ভ্রমণ করেন।
>> তোক্তার আউবাকিরভ (কাজাখাস্তান)
কাজাখাস্তানের প্রথম ও পঞ্চম মুসলিম হিসেবে তোক্তার আউবাকিরভ মহাকাশ নভোচারী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তিনি ১৯৯১ সালের ২ অক্টোবর ‘সুয়েজ এম-১৩’মহাকাশযানে এ ভ্রমণ করেন।
১৯৪৬ সালের ২৭ জুলাই জন্ম নেয়া তোক্তার ৪৫ বছর বয়সে এ ভ্রমণ করেন। তাকে হিরো অব দ্য কাজাখাস্তান ও হিরো অব দ্য সোভিয়াত ইউনিয়ন পুরস্কারসহ আরও বেশ কিছু সংস্থা কর্তৃক মহাকাশবিষয়ক সম্মাননায় ভূষিত হয়।
>> তালগাত মুসাবায়েভ (কাজাখাস্তান)
তালগাত মুসাবায়েভ। কাজাখাস্তানের দ্বিতীয় নভোচারী ও ৬ষ্ঠ মুসলিম হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণ করেন। তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সময় মহাকাশে অবস্থান করেন।
৩ বারের মহাকাশ ভ্রমণে তিনি ৩৪১ দিন ৯ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট অবস্থান করেন। মুসাবায়েভ প্রথমবার ১৯৯৪ সালের ৪ নভেম্বর, দ্বিতীয়বার ১৯৯৮ সালের ২৫ অগস্ট এবং তৃতীয় বার ২০০১ সালের ৬ মে মহাকাশ ভ্রমণ করেন।
১৯৫১ সালের ৭ জানুয়ারি জন্ম নেয়া এ নভোচারী ৪৩ বছর বয়সে প্রথম মহাকাশ ভ্রমণ করেন। তিনি কাজাখাস্তান জাতীয় মহাকাশ সংস্থার প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
>> সালিজান শারিপভ (রাশিয়া)
সপ্তম মুসলিম নভোচারি হিসেবে রাশিয়ার সালিজান শারিপভ মহাকাশ ভ্রমণ করেন। তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ জানুয়ারি ‘এসটিএস-৮৯’মহাকাশযানে প্রথমবার এ ভ্রমণ করেন।
তিনি ২ বারের মহাকাশ ভ্রমণে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২০১ দিন মহাকাশে অবস্থান করেন। দ্বিতীয়বার ২০০৪ সালের ১৪ অক্টোবরে তিনি মহাকাশ ভ্রমণ করেন।
১৯৬৪ সালের ২৪ আগস্ট জন্ম নেয়া এ নভোচারী সর্বপ্রথম ৩৪ বছর বয়সে মহাকাশ ভ্রমণ করেন। তিনি হিরো অব দ্য রাশিয়ান ফাউন্ডেশন পুরস্কার লাভ করেন। কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের উজবেক জাতীয়তাবাদী প্রথম মহাকাশ নভোচারীর তালিকায়ও তিনি নাম লেখান।
>> আনুশেহ আনসারি
অষ্টম ব্যক্তি হিসেবে প্রথম মুসলিম নারী ইরানি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক আনুশেহ আনসারি মহাকাশ ভ্রমণ করেন। তিনি প্রথম ইরানি-আমেরিকান মুসলিম হিসেবে ‘সুয়েজ টিএমএ-৯’ মহাকাশযানে ২০০৬ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর এ ভ্রমণ করেন।
তিনি ব্যক্তিগত খরচে মহাকাশ ভ্রমণকারী প্রথম নারী ও চতুর্থ ব্যক্তি। ১৯৬৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ইরানে জন্ম নেয়া আনুশেহ ৪০ বছর বয়সে মহাকাশ ভ্রমণ করেন। তিনি জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোক্তা অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ও ইয়াং এন্টারপ্রেনিয়ার অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ডসসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হন।
>> শেখ মুসজাফার শুকুর (মালয়েশিয়া)
মহাকাশ নভোচারী মালয়েশিয়ান নাগরিক শেখ মুসজাফর। নবম ব্যক্তি হিসেবে তিনি ২০০৭ সালের ১০ অক্টোবর ‘সুয়েজ টিএমএ-১১’ মহাকাশযানে এ ভ্রমণ করেন।
নভোচারী মুসজাফার শুকুর মহাকাশে সর্বপ্রথম নামাজ আদায় করেন এবং নামাজের সে দৃশ্য ভিডিও প্রচার করে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালে জন্ম নেয়া এ মালয়েশিয়ান মহাকাশে ১০ দিন ২০ ঘণ্টা ১৪ মিনিট অবস্থান করেন। তখন তার বয়স ছিল ৩৫ বছর।
>> আইদিন আইমবেটোভ (কাজাখাস্তান)
কাজাখাস্তানের তৃতীয় নাগরিক হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণ করেন দেশটির এয়ার ফোর্সের মেজর জেনারেল আইদিন আইমবেটোভ। তিনিই প্রথম মহাকাশে কাজাখাস্তানের পতাকা বহন করেন। ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর ‘সুয়েজ টিএমএ-১৮এম’মহাকাশযানে এ ভ্রমণ করেন। নভোচারী আইদিন মহাকাশে ৯ দিন ২০ ঘণ্টা ১৪ মিনিট অবস্থান করেন।
১৯৭৮ সালের ২৭ জুলাই জন্ম নেয়া এ নভোচারীর মহাকাশ ভ্রমণের সময় বয়স ছিল ৩৭ বছর।
>> হাজ্জা আল মানসুরি (সংযুক্ত আরব আমিরাত)
মুসলিম বিশ্বের সর্বশেষ নভোচারী সংযুক্ত আরব আমিরাতে নাগরিক হাজ্জা আল-মানসুরি। তিনি ‘সুয়েজ এমএস-১৫’ নামক মিশনে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মহাকাশ ভ্রমণ করেন। মহাকাশ ভ্রমণে তিনি পবিত্র কুরআন সঙ্গে নিয়ে যান।
মহাকাশ থেকে তিনি পবিত্র মক্কা নগরীর ছবি তোলেন এবং ইন্সটাগ্রাম ও টুইটারে শেয়ার বেশ আলোচিত হন। হাজ্জা আল-মানসুরি দ্বিতীয় মুসলিম, যিনি মহাকাশ ভ্রমণে পবিত্র কুরআন সঙ্গে নিয়েছেন।
১৯৮৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর জন্ম নেয়া হাজ্জার মহাকাশ ভ্রমণের সময় বয়স হয়েছিল ৩৬ বছর। তিনি এ মহাকাশ ভ্রমণে ৮ দিন অতিবাহিত করেন।