কালীগঞ্জটপ লিড

ঝিনাইদহের ”তথ্য আপা’

সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ

উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

তথ্য প্রযুক্তি আজকের দিনে শিক্ষা স্বাস্থ্য,কৃষিসহ সকল স্থানেই কাজে লাগানো হচ্ছে। সরকারের সকল দপ্তরের নাগরিক তথ্য অধিকার তৃনমুল পর্যায়ে পৌছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে তথ্য আপারা। তারা প্রত্যন্তাঞ্চালের গ্রাম গ্রাম ঘুরে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে অসচেতন নারীদের সরকারের দেয়া তথ্য অধিকার, শিশুসহ মায়েদের স্বাস্থসেবা নিশ্চিতসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইন্টারনেটের সাহায্যে তথ্যগত সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন। মৌলিক চাহিদাগত গ্রাম্য মানুষের অজানা বিভিন্ন তথ্য দিয়ে থাকেন তাই তাদের নাম দেয়া হয়েছে ”তথ্য আপা”।

এছাড়াও তথ্য আপারা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গ্রামের মায়েদেরকে জঙ্গীবাদ, মাদক, বাল্য বিবাহের কূফল, ইফটিজিং, সহ নানাবিধ সামাজিক অবক্ষয় এবং তা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে প্রত্যন্তাঞ্চালের নারীদেরকে সচেতন করে চলেছেন। তথ্যভান্ডার নিয়ে গ্রামের অসচেতন মায়েদের কর্মকান্ড চালানোর জন্য এ থেকে তারা ব্যাপক উপকৃত হওয়ায় ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের তথ্য আপারা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসসূত্রে জানাগেছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মহিলা সংস্থার অধীন বাস্তবায়নাধীন তথ্য আপা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রামের তৃণমুল পর্যায়ের মহিলা ও শিশুদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় এ সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

উপজেলা তথ্য কেন্দ্রের আয়োজনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, ব্যবসা, জেন্ডার এবং কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সেবা প্রদান করছেন। গ্রামের নারীদের কাছে“তথ্য আপা” হিসেবে পরিচিত আপারা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে থাকেন। এছাড়াও বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া নারীদের মাঝে সচেতনতামুলক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে লাগাতর ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন কালীগঞ্জের তথ্য আপারা। যে তথ্যগুলো গ্রাম্য মায়েদের সন্তাদিদের প্রকৃতভাবে মানুষ করতে এবং সাংসারিক নানা সমস্যা দূর করতে কাজে লাগছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা তথ্য সেবা কর্মকর্তা (তথ্য আপা) প্রিয়াংকা চক্রবর্তী জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পটি গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে তথ্য সেবা প্রদান কার্যক্রম শুরু করে। মুল উদ্দেশ্য গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত মহিলাদের তথ্য প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার এবং তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ণ করা।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার মোট ৮টি ইউনিয়নের পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে উঠান বৈঠক চালিয়ে সফল হয়েছেন। তিনি বলেন তারা বর্তমানে কালীগঞ্জ উপজেলায় ৩ জন তথ্য আপা নিয়মিত এই সেবা প্রদান করছেন।

তথ্য সেবা সহকারী পাপিয়া পাল (তথ্য আপা) জানান, তারা তথ্য কেন্দ্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ, বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, উপজেলার সরকারি সেবা সমুহের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরন, ভিডিও কনফারেন্স, ই-লানিং,ই-কমার্স ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন। এছাড়াও তারা ল্যাপটপ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকাধীন গ্রামবাসীর বাড়িতে গিয়ে শিক্ষা,স্বাস্থ্য,আইন,ব্যবসা,জেন্ডার এবং কৃষি বিষয়ক তথ্য সেবা প্রদান করছেন।

পাপিয়া পাল আরো জানান, তারা গ্রামের নারী ও শিশুদের ইন্টানেটের মাধ্যমে চাকুরির খবর, বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল,সরকারি সেবা বিনামুল্যে সরবরাহ করছেন। এছাড়াও তারা বিনামুল্যে বøাড প্রেসার পরীক্ষা, ডায়াবেটিস পরীক্ষা, ওজন পরিমাপ করে দিচ্ছেন। তাদের এ কাজে কখনও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা সরাসরি কিংবা স্কাইপ/ফোনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ঠ পরামর্শ প্রদান ও তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করছেন। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের জীবন ও জীবিকা সম্পর্কিত বিষয় যেমন স্বাস্থ্যগত সমস্যা,বাল্য বিবাহ, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, চাকুরি সংক্রান্ত,আইনগত সমস্যা,ডিজিটাল সেবাসমুহ সম্পর্কেও অবহিত করা হচ্ছে। যে কারনে কোন এলাকায় একবার উঠান বৈঠক করে এ সেবা প্রদান করার পর তারা অনেক কিছু জানতে পারছে। সাথে সাথে সেবা পাওয়ায় এলাকার নারীরা বার বার মোবাইল ফোনে তাদেরকে উঠান বৈঠকের জন্য দাওয়াত দিচ্ছেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা জানান, বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্টি নারী। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশ গ্রহন ও ক্ষমতায়ন দেশের সার্বিক অগ্রগতির অন্যতম শর্ত। নারীর ক্ষমতায়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশের গ্রামের অসহায় দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত কিংবা কম সুবিধাপ্রাপ্ত নারীর তথ্যে প্রবেশাধীকার এবং তাদেরকে তথ্য প্রযুক্তির সেবা প্রদান নিঃসন্দেহে নারীর ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করবে। এ লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক “তথ্য আপা” ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন শীর্ষক প্রকল্পটি পরিচালনা করা হচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১ বছর ধরে এ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন তিনি নিজেও তথ্য আপাদের সাথে বেশ কয়েকটি উঠান বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। তাদের দেয়া তথ্য সেবায় গ্রামের সহজ সরল নারীদের উৎসাহিত হতে দেখেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button