টপ লিডশৈলকুপা

শৈলকুপার বাজারে কৃষিপণ্যে দালাল-কয়ালের থাবা, ক্ষতিগ্রস্থ প্রান্তিক কৃষক

টিপু সুলতান, ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় কৃষকের কৃষিপণ্যে দালাল-কয়াল, ইজারাদার, ফড়িয়াদের নগ্ন থাবায় অতিষ্ট কৃষক ও সাধারণ মানুষ। শুন্যপকেট ভরতে বাজারে আসা এসকল বাজার কারবারিদের সীমহীন দৌরাত্ব দিনদিন বেড়েই চলেছে।
এ ব্যাপারে পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, বাজার কমিটি কিংবা উপজেলা প্রশাসন সবাই যেন উদসীন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, একশ্রেণীর বিনাপূঁজির অসাধু বাজার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পরিচয়ে উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের হাটবাজারে জেঁকে বসেছে। বেশিরভাগ বাজারেই টাঙানো হয়না পন্য তালিকা, নেই সতর্কবানীর ব্যানার-সাইনবোর্ড, প্রচার করা হয়না সরকারি বাজার বিধিমালা। সেকারনে মাপযন্ত্র থেকে শুরু করে প্রতিক্ষেত্রেই ঠকছে প্রত্যন্তপল্লী থেকে বাজারে ছুটে আসা কৃষকশ্রেণী।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ২৬ টি সাধারণ হাটবাজারের বেশিরভাগেই সরকারি মূল্য তালিকার সাইনবোর্ড নেই। নেই ইজারামূল্যসহ অন্যান্য নিয়মের প্রচার-প্রচারণা। স্বভাবতই স্থানীয় বাজার নিয়ন্ত্রকগণ তাদের খেয়াল খুশিমত ইজারা আদায় করে থাকে। সেই সাথে আশঙ্কাজনকহারে রয়েছে ফড়িয়া, দালাল-কয়ালের উৎপাত।

পাংশা উপজেলার বাংলাট গ্রাম থেকে লাঙ্গলবাধ বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা আবু বকর জানান, ১ মন পাট বিক্রির জন্য ৪১ কেজি আনতে হয়, তারপরও অনেক সময় ৩৮-৩৯ কেজি হয়। তেমনি ধান, পিঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন কৃষি ফসলে প্রতিমনে ১ কেজি ছাড়তে হয় কৃষকের। এছাড়াও থাকে হিজড়ার থাবা ও ইজারাদার।

হাটফাজিলপুর বাজারে মনি কাটা হলে ১ কেজি বাদ, সাথে পুরনো বাটখাড়াতো থাকছেই। ভাটই, শেখপাড়া, কাতলাগাড়ী, খুলুমবাড়িয়া, কচুয়া, গাড়াগঞ্জ, মদনডাঙ্গা, রয়েড়াসহ প্রতিটি হাটবাজারের চিত্র প্রায় একই।

মদনডাঙ্গা বাজারের মৌসুমী সবজি বিক্রেতা মোস্তাক আহমেদ জানান, বস্তার জন্য ১ কেজি বাদ আর পাল্লা টানটান হলে আরো ১ কেজি ছাড়াও থাকে ইজারা খরচ।

মৌকুড়ী গ্রাম থেকে শৈলকুপা বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা ইবাদত হোসেন জানান, ঝাড়–দার-হিজড়া মিলে কমপক্ষে ১ কেজি আর কয়ালের পাল্লায় ১ কেজি মোটমিলে ২ কেজি মাল বেশি চলে যায়, যা সাধারণ কৃষকের জন্য খুব কষ্টের। তবে হিজড়ারা গ্রাম পর্যায়ের প্রতি সাপ্তাহিক বাজারে আসেনা বলেও জানা গেছে।

ফাজিলপুর গ্রামের কৃষক সাইদ হোসেন জানান, বাজারে সারি সারি বসানো কয়ালদের পরিমাপ কাটায় মাল তোলার পর পাল্লার দু’পাশে থাকা যোগসাজসী ফড়িয়াদের উৎপাত চরম। কেউ পাথরের পাল্লার দিকে গিয়ে পা দিয়ে চেপে থাকে আবার কেউ ফসলের পাল্লার নিকট গিয়ে পা দিয়ে উঁচু করতে থাকে। ঠিক এরই মাঝে পাল্লার মালিক কয়াল তার হাক-ডাকের মাঝেই দু’এক কেজি মাল কম ডেকে ছেড়ে দেয়। এ বিষয়ে ভিড়ের মধ্যে উপায় থাকে অনেক সাধারণ কৃষকের। তিনি বলেন এরকম ওজন কম দেওয়ার চিত্র উপজেলার প্রতিটি বাজারে একই।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, সাধারনত গ্রাম থেকে আসা অনেক কৃষক খোলা বাজারে মাল বেচাকেনা করে দালাল ফড়িয়াদের খপ্পড়ে পড়তে পারে। তবে আড়তদার কিংবা মহাজনদের ঘরে এ ধরনের সুযোগ নেই। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের ভিতরে কোনরকম পাল্লাচুরি কিংবা ওজনে কম দেওয়ার প্রবনতা নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, নিয়মিত বাজার তদারকি হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরার পাশাপাশি সাধারণ কৃষকের সাথে সবাই লাভবান হতে পারে।

শৈলকুপা পৌরসভার সচিব নূর মোহাম্মাদ জানান, বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক প্রতিটি পণ্যের নির্ধারিত সরকারি বাজার মূল্যতালিকা ও খাজনার হার উল্লেখ করে বাজারের দৃশ্যমান জায়গায় সাইনবোর্ড টাঙানোর কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারনে করা হয়না। তবে এসব সাইনবোর্ড ব্যানার কোন সময় টাঙালেও রাতের আধারে একশ্রেণীর দুস্কৃতিকারীরা চুরি করে ফেলে দেয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। নূর মোহাম্মাদ আরো জানান, বাজারের পরিমাপ যন্ত্র, দালাল-কয়াল, ফড়িয়াসহ বাজারের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সক্রিয়ভাবে মোবাইল টিম পরিচালিত হলে এসকল সমস্যা দূর হবে। তবে স্থানীয় রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহলের সচেষ্ট থাকা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম জানান, হাটবাজার ইজাদারদের সরকারি বিধি মেনে চলার নির্দেশ রয়েছে, কেউ শর্ত ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরদিকে বাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়টি তাঁর জানা নেই, প্রয়োজনীয় খোঁজ খবর নিয়ে অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button