কৃষক ওমর ফারুকের কমলা চাষে সাফল্য
সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ
চারপাশে দর্শনার্থী উৎসুক জনতার ভীড়। দুর থেকে দেখে মনে হচ্ছে একটা পর্যটন কেন্দ্র। এ সবকিছুই কৃষক ওমর ফারুকের কমলা বাগান ঘিরে। বাগানের গাছগুলোতে তারার মত ধরে আছে হলুদ রঙের কমলা। আকারে ছোট কিন্ত রসে ভরা কড়া মিষ্টির। দেশে অনেক জাতের কমলা চাষ হচ্ছে কিন্ত কৃষক ওমর ফারুকের বাগানের কমলা গাছে যেভাবে কমলা ধরে আছে তার ধারে কাছে আর কেউ নেই। চায়না লেবুর আকারে তবে অন্য কমলার চেয়ে স্বাদে খানিকটা ব্যাতিক্রমী। কৃষক ওমর ফারুক নিজেই জানেন না এটা কোন জাতের কমলা। তিনি নিজে নাম দিয়েছেন বাংলার কমলা। তার ৩৩ শতাংশের বাগানের প্রতিটি গাছে কমপক্ষে ৮৫ থেকে ৯০ কেজি কমলা ধরে ঝুলে আছে।
ওমর ফারুকের কমলা বাগানটি ঝিনাইদহ জেলার সীমান্তবর্তী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার মধ্যে নিধিকুন্ডু গ্রামের মাঠে। কৃষক ওমর ফারুকের ভাষ্য, এ জাতের কমলার চাষ করতে তিনি সকল কৃষকদের উৎসাহিত করছেন। তার আশা এ জাতের কমলা সারাদেশে চাষ হলে আর বিদেশ থেকে কমলা আমদানী করতে হবে না। তিনি বলেন তার ৩৩ শতাংশ জমির ১০০ টি গাছের কমলার বাগানে এ বছর যে কমলা আছে তা বিক্রি করলে যাবতীয় খরচবাদে কমপক্ষে ৭ লক্ষ টাকা আসবে। আর কলম দেয়া চারা অনেক তৈরী হলেও এ বছর বিক্রির উপযোগী চারা বিক্রি করে কমপক্ষে ১২ লাখ টাকা আসবে।
সরেজমিনে জীবননগর উপজেলার নিধিকুন্ডু গ্রামের মাঠের ওমর ফারুকের কমলা বাগানে গেলে দেখা যায় তার বাগান দেখতে এসেছেন অসংখ্য মানুষ। মানুষের উৎসাহিত করতে এখনও বিক্রি না করে রেখে দিয়েছেন। সারা বাগানের কমলা গাছগুলোর পাতার চেয়ে দেখতে মনে হচ্ছে কমলা বেশি ধরে আছে। বাগানের বাইরে থেকে তাকালে এ এক নয়নাভিরাম দৃশ্য বলে মনে হচ্ছে।
এ সময় কথা হয় কৃষক ওমর ফারুকের সাথে। তিনি জানান, গত ২০১৫ সালে খুলনায় এক বন্ধুর বাড়ি থেকে একটি কমলা গাছের ডাল কেটে এনে তিনি কলম করে ৮৫টি গাছের চারা উৎপাদন করেন। এরপর ২০১৬ সালে তিনি ৩৩ শতাংশ জমিতে এই ৮৫টি কমলা গাছ রোপন করেন ওই ক্ষেতেই মাল্টার চারা রোপন করেন আরও ১৫ টি। ২০১৮ সালে এই গাছগুলোতে এক একটিতে ৩৫-৪০ কেজির মতো কমলা ধরে। সেই কমলা তিনি ৮০-৮৫ টাকা দরে বিক্রি করেন। একই সাথে তিনি ওই কমলা গাছের ডালে কলম পদ্ধতিতে প্রায় ৩০ হাজার কমলার চারা উৎপাদন করেছেন। যা প্রতিটি ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। ২০১৯ সালে তার বাগানের প্রতিটি গাছে ৮৫-৯০ কেজি করে কমলা ধরে আছে। ৮৫ টি কমলা গাছে প্রায় ৭ লাখ টাকার কমলা ধরে আছে।
ওমর ফারুক আরো জানান, গত ২ বছরে তার কাছ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকেরা এসে চারা নিয়ে বাগান করছেন। শুধু তারা এলাকাতেই কমপক্ষে ৯০ বিঘা জমিতে কমলার বাগান করেছেন। তবে তার বাগানে উৎপাদিত কমলা দেখতে খুব সুন্দর এবং খেতেও কড়া মিষ্টি। তিনি বর্তমানে ৯ বিঘা জমিতে চারা উৎপাদন করছেন। এই চারা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। কৃষক ওমর ফারুক বলেন তার এ জাতের সুস্বাদু কমলা চাষ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে আর বিদেশ থেকে কমলা আমদানী করার প্রয়োজন হবে না। এমন সুস্বাদু বাংলার কমলা গুণগত মানের জন্য আরও বিদেশে রপ্তানী করা যাবে।
কৃষক ওমর ফারুকের ছেলে আকাশ মিয়া জানান, তাদের বাগানের যে কমলা উৎপাদন হচ্ছে তা বাজারের যে কমলা পাওয়া যায় তার চেয়ে কিছুটা বড় এবং রঙে টকালো। এই কমলা বাগানের খবর পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা কমলা ছুয়ে ছবি তুলতে আসছেন। আর প্রতিদিন দর্শনার্থী কিংবা চাষীরা এখান থেকে চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আকাশ জানান, তাদের বাগানে প্রায় ৭ লাখ টাকার কমলা আছে। আমরা এবার এ কমলা গুলো বিক্রি করিনি। দর্শনার্থীরা আসছে তাদের অনেকের বাগান থেকে ছিড়ে কমলা খাওয়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা কমলা বাগান করতে আগ্রহী তাদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, কৃষক ওমর ফারুকের কমলার বাগানে তিনি একাধিকবার গিয়েছেন। যেভাবে কমলা ধরে আছে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভীড় করছে বাগান দেখতে। ওই মাঠে গেলে মনে হচ্ছে একটা ছোট খাটো পর্যটন কেন্দ্র। তিনি বলেন, যে কমলা দেশে বর্তমানে চাষ হচ্ছে সেগুলোর চেয়ে এ কমলা স্বাদে অনেক ভালো। আর আমদানীকৃত কমলার চেয়ে এ কমলার রঙটাও আকর্ষনীয়। কৃষি অফিস তাকে সাধ্যমত সাহায্য করছে। নিঃসন্দেহে কৃষক ওমর ফারুক একজন সফল কৃষক বলে যোগ করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।