ঝিনাইদহ সদর

ঝিনাইদহে ধানের লাভজনক মূল্য ও ক্ষুদ্র কৃষকের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সেমিনার

সাজ্জাদ আহমেদ, ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহ শহরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের সেমিনার হলে “ধানের লাভজনক মূল্য ও ক্ষুদ্র কৃষকের খাদ্য নিরাপত্তা” বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

খানি-খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন ধারা এ সেমিনারের আয়োজন করে। প্রধান খাদ্য ফসল ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত না হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকীর মূখে পড়বে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে।

সেমিনারে বক্তারা বলেন কৃষি কাজ এখন আর কৃষকের কাছে নাই, জমিদার শ্রেণী এবং বহুজাতিক কোম্পানীর কাছে কৃষকসমাজ আজ জিস্মি হয়ে গেছে। কৃষি জমির উৎপাদনক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। নিত্যদিনের চাহিদা মেটানোর জন্য কৃষকসমাজ তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। কৃষিপণ্য উৎপাদন, বিপণন এবং বাজার ব্যবস্থার সাথে সমন্বয় না থাকায় কৃষকরা সঠিক দাম পাচ্ছেনা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস ।

আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার, কৃষি প্রকৌশলী উজ্জল কুমার কর । অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন ধারার নির্বাহী পরিচালক ডাঃ মোঃ মশিউর রহমান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক সাজ্জাদ আহমেদ,কৃষক নেতা রুবায়েত হোসন মোল­া,কৃষাণী সোনিয়া আক্তার ,উন্নয়ন ধারার সহযোগী সমন্বয়কারী (ডক্যুমেন্টেশন এÐ কমিউনিকেশন) কৃষ্ণ দাস সাহা প্রমূখ।

এছাড়া উক্ত সেমিনারে স্বাধীন কৃষক সংগঠনের কৃষক নেতাসহ, ব্যবসায়ী, উন্নয়ন কর্মী, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের নাগরিকগণ অংশ নেন এবং তাদের মতামত ও আবেদন তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, কৃষকদেরকে বাঁচাতে হলে চাষাবাদে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবেএবং তা সহজলভ্য করতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষকদের খরচ ও সময় বাঁচবে অনেক। যার ফলে কৃষকরা তাদের ফসল উৎপাদন করে লাভবান হতে পারবেন। কৃষি বিষয়ক নতুন নতুন উদ্ভাবনকে কাজে লাগাতে হবে। লাভজনক চাষাবাদে প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। শুধু রাসায়নিকই নয় বিকল্প উৎপাদন ব্যবস্থা বা জৈব কৃষি চর্চার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে যাতে মাটিকে জীবন্ত রেখে পরিবেশকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও উপযোগী করে রেখে যেতে হবে। কৃষক সমবায় গঠনে অত্যধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তাই সরকার প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে কৃষকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

উক্ত সেমিনারের মাধ্যমে দেশের সকল অঞ্চলের নারী ও পুরুষ কৃষকের জন্য কৃষিকার্ড ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিশ্চিত করা; কৃষকের জন্য সহজ, বিনাসুদ ও বিনাশর্তে কৃষিঋণ ও ভতুর্কী ও বিশেষ প্রণোদনা নিশ্চিত করা; কৃষিজমির অকৃষিখাতে ব্যবহার সামগ্রিকভাবে নিষিদ্ধ করা; উৎপাদন থেকে কৃষিপণ্য ব্যবহার অবধি সকল স্তর ও পর্যায় ক্ষতিকর রাসায়নিক দূষণ, শ্রমশোষন ও ন্যূনতম বৈষম্য দূর করে কৃষিকে দেশের কৃষক পরিবারের পারিবারিক কৃষিঐতিহ্য হিসেবে বিকশিত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করা; কৃষিপণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্যের আর্দ্রতা, রাসায়নিকের উপস্থিতিসহ পণ্যের মানযাচাইয়ের নামে কৃষক হয়রানি বন্ধ করা; মানযাচাইসহ পণ্যের বাজার উপযোগিতার বিষয়গুলো চাষের পূর্বেই কৃষককে সরকারিভাবে অবহিত করা এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে এমনকি ক্ষেত্রভেদে কৃষক ও স্থানীয় পর্যায়ে ধানসহ কৃষিপণ্য মজুতকরণের শক্তিশালী ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উক্ত সেমিনারে প্রস্তাবনা জানানো হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button