ঝিনাইদহে রফিকুলের বাগানে দার্জিলিংয়ের হলুদ কমলার বাম্পার ফলন
হাসানুর রহমান, ঝিনাইদহের চোখঃ
বাগানে ঢুকতেই অনেক মানুষের ভিড় দেখা গেল। কেউ ঘুরছেন, কেউ আবার সেলফি তুলছেন। আবার কেউ বলছেন, এ যেন দার্জিলিংয়ে কমলা ফলের বাগানে ঘুরতে এসেছেন।গাছে হলুদ কমলা ঝুলে আছে দেখতেই খুব সুন্দর লাগছে।
কমলা সাধারণত আমাদের দেশে চাষ খুবই কম। জনশ্রুতি আছে, বাংলাদেশে চাষ করলে কমলা ফল খেতে টক লাগে। কিন্তু স্বাদেও পিছিয়ে নেই এ কমলা।
বলছিলাম ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম চাপাতলা এলাকার কোমলা চাষি রফিকুল ইসলামের কমলা ফলের বাগানের কথা।
রফিকুল মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের আইনুদ্দীন মণ্ডলের ছেলে।ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০০ গজ দূরে চাপাতলা গ্রামে অবস্থিত বাগানটি। রফিকুল ইসলাম পেশায় একজন নার্সারি ব্যবসায়ী। তিনি মেন্ডারিন ও দার্জিলিং দুই জাতের কমলা চাষ করেছেন।বাগানে ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, নিজের এক বিঘা চাষের জমি আছে। আর ছোট নার্সারির ব্যবসা। দুই মেয়ে ও এক ছেলে। খুব কষ্টে দিন কাটত তার।সংসারের অভাব ঘোচাতে ধারদেনা করে তিন বছর আগে ভারতের দার্জিলিং গিয়েছিলেন কমলা বাগান দেখতে। মূলত নার্সারি ব্যবসা থাকায় সেখানে বিভিন্ন ফলের বাগানে তিনি ঘুরেছেন। এর মধ্যে কমলা বাগান দেখে বেশি ভালো লেগেছিল তার। দার্জিলিং থেকে ফেরার সময় ২০০ টাকা করে কমলা ও ১৪০ টাকা দরে মাল্টা লেবুর চারা কিনে আনেন।সেখান ফিরে এসে ২০১৬ সালের প্রথম দিকেই চাপাতলা গ্রামে অন্যের কাছ থেকে ৪ বিঘা জমি লিজ নেন। ওই জমিতে তিনি পেয়ারা, কমলা ও মাল্টার চাষ শুরু করেন।
রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছিল তার। এই জমি থেকে ১০ লাখ টাকার পেয়ারা ও ৯ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন।
দার্জিলিংয়ের কমলা কেজিপ্রতি ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এর পর বাগান থেকে পেয়ারাগাছ উঠিয়ে শুধুই কমলার বাগান তৈরি করেছেন। এখনও প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার কমলা বাগানে আছে।চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, পাঁচ বছর পর একটি গাছ ফল ধরার জন্য পরিপূর্ণতা লাভ করে। প্রতিটি গাছ থেকে ১২-১৫ বছর পর্যন্ত ভালোভাবে ফল পাওয়া যাবে।তিনি বলেন, দার্জিলিংয়ের থেকে তার বাগানের কমলা অনেক স্বাদের। তিনি মনে করেন, এ দেশেও কমলা চাষ ভালো হবে। তেমন মাটি ও আবহাওয়া আমাদের রয়েছে। তিনি এখন নিজেই এই কমলা গাছের চারা বিক্রি করছেন।
তার বাগানের এ কমলার চাহিদা অনেক। চাহিদা মোতাবেক তিনি সাপ্লাই দিতে পারছেন না। এখন একমাত্র ছেলে রোকনুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে কমলা চাষে মনোযোগী তিনি। এই কমলা চাষ অনেক লাভজনক।ঘুরতে আসা তানভীর তুহিন নামে এক যুবক বলেন, দূর থেকে হলুদ কমলা দেখতে অনেক ভালো লাগছে। আমরা আগে ভারতের দার্জিলিংসহ বিভিন্ন দেশের কমলা বাগানের কথা শুনেছি, কিন্তু দেখিনি। এখন আমাদের দেশেই কমলা চাষ হচ্ছে। এটি খুব ভালো উদ্যোগ।বাগান থেকে কমলা নিতে আসেন ঢাকার ফল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, এই কমলার সাইজ, স্বাদ, রঙ সবকিছু দার্জিলিং বা অন্য দেশের কমলার মতো। এখান থেকে নিয়ে গেলে আমাদের লাভ বেশি হয়। ফল ভালো রাখতে কোনো প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করতে হয় না। এই ফল টাটকা থাকে।
মহেশপুর উপজেলার কুসুমপুর বাজারের ফল ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন ও সালাম হোসেন। তারাও এসেছিলেন এই বাগান থেকে কমলা নিতে। তারা জানান, আমরা বিভিন্ন ফলের ব্যবসা করি। রফিকুল ইসলামের বাগানের এই কমলা অন্য দেশের কমলার থেকে ভালো। আমরা এখান থেকে কমলা নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠাই।মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসান আলী বলেন, আমি এবং বিভিন্ন ভিজিটর নিয়ে রফিকুল ইসলামের কমলার বাগান পরিদর্শন করেছি। সবাই বলছে, দার্জিলিংয়ের থেকে এই কমলা অনেক ভালো। আমরা জানতাম পাহাড়ি অঞ্চলে কমলা ভালো হয়। কিন্তু মহেশপুর উপজেলার এই বেলে-দোঁআশ মাটিতেও অনেক ভালো কমলা হয়েছে।
কমলাতে মাছি পোকা এড়াতে তাকে বেশি পরামর্শ দিয়েছি। গ্রাপটিং বা কলমের মাধ্যমে তাকে চারা বানানোর জন্য বলা হয়েছে। তা হলে চারাটি সুন্দর হবে।তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে বাগানটি পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ উইংয়ের পরিচালক ড. আলহাজ উদ্দীন আহাম্মেদ। পরিদর্শনকালে তিনি জানিয়েছিলেন, সমতল ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ এবারই প্রথম। রফিকুলের বাগানে উৎপাদিত কমলা খেতে বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।