সমাপনীতে হরিনাকুন্ডুর চাটাই ঘেরা স্কুলটিতে শতভাগ জিপিএ-৫
ঝিনাইদহের চোখঃ
চাটাই দিয়ে ঘেরা, উপরে টিনসেড। চারটি কক্ষে পালাক্রমে পড়ালেখা করে ১৭০ থেকে ১৮০ টি শিশু। ৬ জন শিক্ষক সারাক্ষণ তাদের খোজ খবর নেন, বাচ্চাদের ভালো ফল করতেই হবে। এভাবে পাঠদান করে এবারের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৬ শিক্ষার্থীর সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ঝিনাইদহ হরিনাকুন্ডু উপজেলার দখলপুর বাজারে প্রতিষ্ঠিত আলোর দিশারী নামের এই কেজি স্কুলটির শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকের আনন্দের শেষ নেই। বুধবার সকাল থেকেই প্রতিষ্ঠানটির মাঠ ভরে যায় তাদের পদচারনায়। দিনটি ছিল বই উৎসব। তাই প্রথমেই শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন বই। এরপর সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলে আনন্দ প্রকাশ। বাচ্চারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছাস প্রকাশ করে। আর অভিভাবকরা এসে জড়িয়ে ধরেন শিক্ষকদের। যেন কৃতজ্ঞতার শেষ নেই, তাদের বাচ্চারা এতো ভালো ফল করবে সেটা অনেক অভিভাবক ভাবেনি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রকিবুল ইসলাম জানান, দখলপুর গ্রামে ও পাশ্ববর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যেও বাচ্চাদের দেখভাল করার দায়িত্ব নেন তারা। ২০০২ সালে ৩০ শতক ভাড়া জমির উপর প্রতিষ্ঠা করেন আলোর দিশারী কেজি স্কুল। পাড়াগায়ে স্কুলটি হওয়ায় সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ভাবে চালানো যায় না। নিজেরা বেঁচে থাকতে পারেন এমন পয়সা নিয়ে তারা শ্রম দিয়ে চলেছেন। তারা ৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা বাচ্চাদের পড়ালেখা শেখানোর কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিটি বছরই তাদের প্রতিষ্ঠান ভালো ফল করছে। এবার ১৬ জন সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছে। যেটা তাদের জানামতে ঝিনাইদহ জেলার মধ্যে সেরা।
তিনি আরো জানান, এই ভালো ফল করার পেছনে বাবা-মায়েদের চেষ্টা রয়েছে। সবচে বেশি চেষ্টা রয়েছে তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের। তিনি জানান, প্রতিমাসের ১ থেকে ৭ তারিখ তারা শিক্ষার্থীর বাড়িতে যান এবং পরিবারের সঙ্গে তার বাচ্চা নিয়ে মতবিনিময় করেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর অভিভাবকদের মুটোফোনে ফোন দিয়ে খবর নেন এই মুহুর্তে বাচ্চাটি কি করছে। বাচ্চাটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেখানো, নৈতিক শিক্ষা দেওয়া সবই তারা করেন। এভাবে চেষ্টাকরে এই ভালো ফল হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
জিপিএ-৫ পাওয়া শিশু মিম এর মা রোজিনা খাতুন জানান, এই কেজি স্কুলটিতে বাচ্চা ভর্তি করার পর অভিভাবকরা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যান। কারন শিক্ষকরা এতোটা খেয়াল করেন যে বাবা-মাকে তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। তাছাড়া বাচ্চাদের পৃথক কোনো প্রাইভেট পড়াতে হয় না। পরীক্ষা এলে শিক্ষকরা টাকা ছাড়াই কোচিং করান। তিনি বলেন, তার মেয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ায় খুবই খুশি। আর মেয়ে মিম জানায়, শিক্ষকরা তাদের পেছনে যে পরিশ্রম করেছেন তা সর্বক্ষেত্রে তাদের পড়ালেখা অনেক সহজ হতো। আরেক শিক্ষার্থী আল-আমিনের বাবা আনিচুর রহমান জানান, শিক্ষকদের চেষ্টায় তাদের ছেলে-মেয়েরা এতো ভালো ফল করেছে। তারা অনেকে এই ফল আশা করতে পারেনি।
প্রধান শিক্ষক মোঃ রকিবুল ইসলাম জানান, এবারের বার্ষিক পরীক্ষায় তাদের প্রতিষ্ঠানের ফলাফল অনেক ভালো। তিনি বলেন, এই বাচ্চারা আগামীতে দেশের কান্ডারি হবে। তাই তাদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
এ বিষয়ে হরিনাকুন্ডু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস. এম আব্দুর রহমান জানান, প্রতিষ্ঠানটির ফলাফল খুবই সন্তোষজনক। ওই প্রতিষ্ঠানের শিশুরা খুবই ভালো ফল করেছে। শিক্ষক-অভিভাবকরা পরিশ্রম করলে অবশ্যই সন্তানরা ভালো ফল করবে, যা দখলপুর কেজি স্কুলটি করেছে।