ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে তেজপাতা
আরিফ মোল্ল্যা, ঝিনাইদহের চোখঃ
তেজপাতা একটি মশলা জাতীয় ফসল। বাংলাদেশর গৃহিনী বা যে কোন রেস্টুরেন্টে তেজপাতা ছাড়া রান্না হয় না। তরকারি ছাড়াও বিভিন্ন মিষ্টান্ন তৈরিতেও তেজাপাতা ব্যবহৃত হয়। তেজপাতার অনেক ওষুধী গুনও রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক জেলায় তেজপাড়ার গাছ দেখা গেলেও বাণিজ্যিক ভাবে এর চাষ কম দেখা যায়। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে তেজপাতার আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলা সুন্দরপুর দূর্গাপুর ইউনিয়নে প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে আবাদ হচ্ছে। চাষী আছে প্রায় ১৮ জন। একটি গাছ থেকে বছরে দুই বার পাতা তোলা যায়। রোগ বালাই তেমন না থাকায় এবং ফসলের তেমন ক্ষতি না থাকায় এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বছরে লাভ করা যায়।
কালীগঞ্জ উপজেলার প্রথম তেজপাতা চাষী সুন্দর দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাদিরকোল গ্রামের জয়নুদ্দীন খাঁ প্রথমে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে গল্পশুনে প্রায় ১০ বছর আগে তিনি খুলনা বেজেরডাঙ্গা থেকে ১২০টি তেজপাতার চারা নিয়ে ৫০ শতক জমিতে বাগান শুরু করেন লাভ ভালো হবার কারনে তিনি এখন মোট ১২৩ শতক জমিতে তেজপাতা চাষ করছেন। জয়নুদ্দীন খাঁ জানান, বছরে মাত্র দুই বার সার দিতে হয় তাছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই। ছাগল বা গরুতে খাইনা তেজপাতা চুরি হবারও কোনো সম্ভাবনা নেই তাই তিনি এই চাষের দিকেই ঝুকছেন। একই এলাকার আবুল কালাম আজাদ ৩৫ শতাংশ জমিতে তেজপাতা চাষ করেছেন। গত ৪ বছর ধরে তিনি এ চাষ করছেন। খুলনা থেকে তিনিও তেজপাতার চারা কিনে এনে শুরু করেন চাষ। ৩৫ শতাংশ জমিতে প্রায় ১৩০টি তেজপাতা গাছ রয়েছে। বছরে তিনি দুই বার সার প্রয়োগ করেন। আর বছরে একটি গাছ থেকে ২বার তেজপাতা সংগ্রহ করছেন। প্রতিকেজি তেজপাতা শুকনা ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও কাঁচা পাতা ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করে থাকেন। ৪ বছর বয়সী একটি গাছ থেকে ৩৫-৪০ কেজি পাতা তিনি সংগ্রহ করতে পারছেন। দুই বছর বয়স থেকেই তিনি তেজপাতা সংগ্রহ করছেন। আবুল কালাম আজাদ জানান, তার বাগানে প্রথম বছর ৩মন তেজপাতা উৎপাদন হয়। এর পরের বছর ৯ মন পাতা সংগ্রহ করেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে একই বাগান থেকে ২৩মন তেজপাতা তিনি সংগ্রহ করেছেন। আগামী মৌসুমে তিনি ২০মন তেজপাতা পাবেন বলে আশা করছেন।
এলাকার অন্য তেজপাতা চাষীরা জানান, তেজপাতা চাষে তেমন খরচ হয় না। চারা লাগানো আর একটু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখলেই চলে। রোগ বালাই বলতে কেমন কিছুই নেই। তবে বসন্তের সময় একটু পোকা লাগে। সেই সময় একটি ঔষধ এক্্রপ্রে করতে হয়। এক বিঘা জমিতে আনুমানিক খরচ ১০/১২ হাজার টাকা মাত্র। চাষীরা আরো জানান, তেজাপাতার সাথে সাথী ফসল হিসেবে যেমন হলুদ, কলাও চাষ করা যায়। এতে এক সাথে দুই ধরনের ফসল পাওয়া যায়।
তেজপাতা কৃষক জাহিদ হাসান জানান, প্রথমে জমি প্রস্তুত তরে তেজপাতা রোপন করতে হয়। এর পর জমিতে প্রতি বছর সেচ দিতে হয়। বছরে দুই বার সার দিতে হয়। তিনি বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে খরচ তেমন হয়না বল্লেই চলে।
তেজপাতা চাষে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করছে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস। তাদের পরামশেই চলছে তেজপাতা চাষাবাদ। এলাকায় নতুন ভাবে এই মসলা জাতিয় ফসল চাষ করা হচ্ছে। তিনি আশা করছেন অন্য ফসলের চেয়ে তেজপাতায় অনেক বেশি লাভ হবে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল করিম জানান, কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে তেজপাতা চাষ হচ্ছে। এছাড়াও পারিবারিক চাহিদা মেটাতে এই ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ বাড়িতে একটি-দুইটি করে তেজপাতা গাছ লাগিয়েছে। সাধারণত বর্ষার মৌসুমে তেজপাতা গাছ রোপন করা হয়। ২ বছর পরই থেকেই পাতা সংগ্রহ করা যায়। তিনি বলেন, মসলা জাতীয় তেজপাতা চাষে এ এলাকার মাটি ও আবহওয়া অনেক ভাল।
কালীগঞ্জ উপজেলা উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মফিজ উদ্দীন জানান, তিনি নিয়মিত চাষীদের খোঁজ-খবর নিয়ে থাকেন । তার এলাকায় শুধু তেজপাতায় নয় তিনি বিভিন্ন ধরনের সবজি¦ ফসল চাষ করার জন্য কৃষক দের উৎসাহিত করছেন।
কৃষি অফিসার জাহিদুল করিম জানান, তেজপাতা শুধু মসলা হিসেবেই ব্যবহার হয় না। এর ঔষুধী গুন রয়েছে। তেজপাতার বাকল থেকে তেল ওষুধ- কীটনাশক এবং সুগন্ধির উপকরন হিসেবে ব্যবৃহত হয়। তেজপাতার জমিতে হলুদ,একানিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা সম্ভব।
তেজপাতা একটি নতুন অর্থকারী ফসল। সঠিক নিয়মে এবং সঠিক ভাবে তেজপাতা চাষ করলে গতানুগতিক অন্য ফসলের চেয়ে এই ফসল চাষ করে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে তিনি আশাবাদি।