এম হাসান মুসা, ঝিনাইদহের চোখঃ
স্বামী সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় বসবাস করে বছরের পর বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেও শিক্ষকতা পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন সুমাইয়া খানম নামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকা। ঘটনাটি ঝিনাইদহের শৈলকুপার ২৩ নং কচুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চাকুরী জীবনের বেশীর ভাগ সময়ই তিনি কোন না কোন বেসরকারী হাসপাতালের মেডিকেল সার্টিফিকেট জোগাড় করে কর্মকর্তাদের ম্যানেজে অভিনব কায়দায় তিনি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পেশা ধরে রেখেছেন বলে নথি থেকে দেখা যায়।
তবে খোজ নিয়ে জানা যায়, অবসরের এককালিন টাকা পেতে তিনি মেডিকেল সাটিফিকেট রেসেপি হিসাবে ব্যবহার করছেন বলে জানান যায়। এরই মাঝে এই শিক্ষক চাকুরী বিধি অনুযায়ী সিভিল সার্জন অফিসের শারীরিক অক্ষমতার সার্টিফিকেট নিয়ে অবসরে যাওয়ার চেষ্টা ব্যার্থ হয় বলে শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়। দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কৈফিয়ত তলব এবং বিভাগীয় মামলা কোন কিছুই আটকিয়ে রাখতে পারেনি শিক্ষিকা সুমাইয়া খানমকে। মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়ে উপর মহলের শুপারিশে মাঝে মাঝে চাকুরী বৈধ করে যান তিনি সবই তার কাছে হাতের মোয়া। সর্বশেষ গত বছরের ঈদুল আযহার আগে মেডিকেল ছুটি শেষ হলে যোগদান করে ঈদের বোনাস নিয়ে আবার লাপাত্তা।
শিক্ষিকা সুমাইয়া খানম উপজেলার রতিডাঙ্গা গ্রামের আবুল কালাম আজাদের কন্যা। তার স্বামী ঢাকাতে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে কর্মরত আছেন বলে জানা গেছে।
সুমাইয়া খানমের নথি থেকে দেখা যায় তিনি ২০০১ সালের ২৯ মার্চ চাকুরীতে যোগদান করেন এবং ২০০৩ সাল থেকে তিনি কচুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত।
কচুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিরিন আক্তার জানান, তিনি প্রধান শিক্ষক হিসাবে ২০০৯ সালে এই স্কুলে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই দেখে আসছেন শিক্ষিকা সুমাইয়া খানমের মেডিকেল সার্টিফিকেটের কেরামতি। কচুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৪০৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
তিনি জানান, শিক্ষকের পদ ৮টি থাকলেও ২ জন শিক্ষক ট্রেনিংয়ে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং সুমাইয়া খাতুন দীর্ঘদিন অনুপস্থিত। তিনি স্কুলে না আসলেও শিক্ষক হিসাবে তার পদ থাকায় সেখানে আর কেউ যোগদান করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। বছরের পর বছর কর্মস্থলে না এসে মেডিকেল সাটিফিকেট দিয়ে চাকুরী বহাল রেখে অবসরের এককালীন টাকা তুলতে হয়তো তিনি এ পন্থা ব্যবহার করছেন বলে তিনি জানান।
শিক্ষিকা সুমাইয়া খাতুনের নথি থেকে জানা যায় ২০০৯ সাল থেকে তিনি মাঝে মাঝে মেডিকেল ছুটির আবেদন করে আসছেন। ২০১৫ সালে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম তাকে কয়েকবার কৈফিয়ত তলবের চিঠি দিলে তিনি পুনরায় ছুটি বাড়ানোর মেডিকেল সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দেন। এভাবেই তিনি ঢাকাতে স্বামী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে চাকুরীতে বহাল তবিয়তে বসে আছেন। অথচ এভাবে দিনের পর দিন কর্মস্থলে না আসলেও ২০১৬ সালে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের খুলনা বিভাগীয় উপসহকারী এ,কে,এম গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে দেখা যায় তার সব কিছুই সঠিক পন্থায় হওয়ায় তাকে নিয়ম অনুযায়ী পাওনাদি প্রদানের সুপারিশ করেন। এরপর ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর তিনি আবার বিনা বেতনে চিকিৎসা ছুটির আবেদন করেন এবং ২০১৮ সালে ঢাকা থেকে একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন জানান।
চাকুরীতে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন জানান, শিক্ষিকা সুমাইয়া খাতুন দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো জানান তার নথি থেকে দেখা যায় এই শিক্ষিকা দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে কখনো মেডিকেল সার্টিফিকেট আবার কখনো বিনা বেতনে মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়ে ছুটির আবেদন করে গেছেন। তিনি সর্বশেষ ২০১৮ সালে চাকুরী বিধির একটি নিয়মের মধ্যে সিভিল সার্জনের সার্টিফিকেট নিয়ে শারীরিক অক্ষমতা দেখিয়ে অবসরেও যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছে। তবে শিক্ষা অফিস এ ব্যাপাওে সতর্ক বলে তিনি জানান।
চাকুরীতে অনুপস্থিতি নিয়ে শিক্ষিকা সুমাইয়া খানমের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন সে কচুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তবে তিনি তার কর্মস্থেেলর অনুপস্থিতির ব্যাপারে কারো কাছে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয়।