টপ লিডমাঠে-ময়দানেশৈলকুপা

আর্থিক সহায়তা চান নারী ফুটবলার শৈলকুপা দোহারোর উন্নতির বাবা-মা’

ঝিনাইদহের চোখঃ

আর্থিক সহায়তা চান নারী ফুটবলার উন্নতির বাবা-মা শিরোনামে ডিবিসি নিউজে শনিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনুর্ধ ১৭ দলের দেশ সেরা খেলোয়াড় উন্নতির পরিবার কে স্থানীয়ভাবে সহায়তার হাত বাড়াতে এগিয়ে আসছেন অনেকেই। আবার আগ্রহ প্রকাশ করে কেউ কেউ তার পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছেন।
আজ রোববার সকালে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শিকদার ওয়াহেদুজ্জামান ইকু ব্যাক্তিগত সহায়তা হিসাবে উন্নতির পরিবার কে ১মাসের খাদ্য সহায়তা ও নগদ অর্থ দেন। এছাড়া করোনা প্রতিরোধে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক সহ ওষধপত্রও দিয়েছেন। এদিকে দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার সম্পাদক কেএম বেলায়েত হোসেন ডিবিসি নিউজের রিপোর্ট দেখে স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে কিছু নগদ অর্থ সহায়তা করেন।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চরম আর্থিক অনটনে পড়া নারী ফুটবলার উন্নতির পরিবার তাৎক্ষনিক কিছু সহায়তা পেয়ে সবার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ফুটবলে দেশের মুখ আরো উজ্বল করতে উন্নতি সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

আর ১মাসের খাদ্য সহায়তা দানকারী শৈলকুপা ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শিকদার ইকু জানান, শৈলকুপা উপজেলার কোন খেলোয়াড় দেশের এই বিশেষ পরিস্থিতিতে অর্থকষ্টে না খেয়ে থাকবে এটি হতে দেব না। ক্রিড়া সংস্থার সম্পাদক হিসাবে যতদুর সম্ভব সহায়তা করা হবে। উন্নতির ভ্যান চালক বাবা কে একটি বাড়ি নির্মাণে সহায়তার চেষ্টা করবেন বলেও তিনি জানান।

উন্নতি কে নিয়ে মূল প্রতিবেদন
<<<<<<<<<<<<<<<<<<<
উন্নতি আরো উন্নতি করবে প্রধানমন্ত্রীর এমন উচ্ছাসিত প্রশংসা পেয়ে খুশীতে আত্মহারা উন্নতি, বেড়েছে আত্মবিশ^াসও। তবে বড়ই করুণ দৃশ্য দেখা গেছে উন্নতির বাড়িতে। মহামারি করোনার কারণে এখন দেশের সব খেলোয়াড়রাই প্রায় ঘরবন্দি। উন্নতিও চলে এসেছেন তার নিজ গ্রাম দোহারোর ছোট্ট পল্লী নিবাসে। চারিদিকে লকডাউন আর কর্মহীনের ছড়াছড়িতে প্রায় ৪০ বছর ধরে ভ্যান চালিয়ে সংসারের ঘানি টানা উন্নতির বাবার এখন ভ্যান চালানোও বন্ধ !

মাটির ভিটে আর টিনের ছাউনি দিয়ে ৩শতক জমির উপর একটি ঝুপড়ি বাড়ি। ভ্যানচালক আবু দাউদ শেখের এ বাড়িতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ ফুটবল দলের এক কিশোরী নারী খোলোয়াড়ের গোল্ডেন বুট সহ অসংখ্য জাতীয় পুরষ্কার, মেডেল সহ কত কত পুরষ্কার। আর এই নারী খেলোয়াড় আর কেউ নন , তিনি প্রত্যন্ত পল্লী ঝিনাইদহের শৈলকুপার দোহারো গ্রামের উন্নতি খাতুন। ২০১৯ সালের অনুর্ধ১৭ বঙ্গমাতা জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবলদলের সেরা খেলোয়াড় আর সেরা গোলদাতা এই উন্নতি খাতুন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে স্বাক্ষাতে যাকে তিনি বলেছিলেন ‘উন্নতি আরো উন্নতি করবে’।

তবে উন্নতি সহ ৭সন্তান নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন উন্নতির বাবা- মাত্র ৩শতক জমির উপর বাড়ি ছাড়া আর কোন জমাজমি নেই বলে জানান উন্নতির বাবা আবু দাউদ শেখ।

আর পরের বাড়িতে কাজের বুয়া হিসাবে কাজ করেন উন্নতির মা হামিদা খাতুন। ২ ছেলে ২ মেয়ে কে অনেক আগেই বিয়ে দিয়েছেন তবে, অনটনের সংসাওে সবাই এখন তাদের ঘাড়েই বলা চলে ।

উন্নতি দেশের মুখ আরো উজ¦ল করবে এমন আশা পরিবারের। তবে বাড়িতে মাথা গোজার একটু ভাল ঠাই আর কিছু সহায়তা হলে উন্নতির পরিবারের দিনযাপনের ঘানি টানা একটু সহজ হয় বলে জানান ভাই-বোনেরা ।

যৌথ পরিবারের পারিবারিক সাধ্য মেটাতে হররোজ হিমসিম খেতে হয় উন্নতিদের। তবে মেধাসম্পন্ন উন্নতির সতর্ক উচ্চারণ, আমি তো বাংলাদেশের জন্য এখনো তেমন বড় কিছু করতে পারেনি। তবে সবার সাপোর্ট পেলে উন্নতি একদিন বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতি করবেই এমন দৃড় প্রত্যাশা তার।

উন্নতি যখন দোহারো প্রাইমারি স্কুলে ফুটবলে হাতে খড়ি তখন পিছিয়ে পড়া সমাজের মানুষের নানা কটুক্তি আর গঞ্জনা সইতে হয়েছে এমন আক্ষেপ জানালেও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন দোহারো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেটি এখন মাধ্যমিক স্তরে এসেছে সেই স্কুলটির ক্রিড়া শিক্ষক রবিউল ইসলাম কে। তিনি সহ শিক্ষকরা তাকে সহযোগীতা করে বিকেএসপিতে ভর্তির অর্থ সংগ্রহ করে দেন।

বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে উন্নতির বাবার এখন ভ্যান চালানোও বন্ধ। এমন অবস্থায় সহযোগীতা না পেলে উন্নতি সহ বিকেএসপিতে চাঞ্চ পাওয়া দোহারো গ্রামের আরো চারটি মেয়ের পরিবার তাদের আর ক্রীড়াঙ্গনে নাও রাখতে পারে বলে শংকা প্রকাশ করেন উন্নতিদের প্রশিক্ষক দোহারো মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্রিড়া শিক্ষক রবিউল ইসলাম।
রুনা সহ এই দোহারো গ্রামেই রয়েছে বিকেএসপির আরো ৪ খেলোয়াড়, আরো দুজন চেষ্টা করছে ।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা জাতীয় গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে উন্নতির নেতৃত্বে দোহারো মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দেশে তৃতীয় স্থান দখন করে। ২০১৭ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা জাতীয় গোল্ডকাপ টুর্ণামেন্টে উন্নতির নেতৃত্বে দেশের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয় তার দলটি। আর ২০১৯ সালে অনুর্ধ্ব ১৭জাতীয় ফুটবল দলে দেশ সেরা ফুটবল খেলোয়াড় ও সেরা গোলদাতার পুরষ্কার পায় উন্নতি খাতুন ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button