পাঠকের কথা

কবে পাবো মুক্তি?—সাজ্জাদ হোসেন (ইবি), শিক্ষার্থী-পরিসংখ্যান বিভাগ

ঝিনাইদহের চোখঃ

শ্বাসনালী সংক্রমণের মাধ্যমে না চাইতেও আজ বন্দী করে রেখেছে সারা মানবজাতীকে করোনা ভাইরাস নামের এক মহামারী। লাশের গনকবরে নিউইয়র্কের কবরস্থান আজ অশান্ত। বিশ্বরেকর্ড গড়ে নিস্তব্ধ ভেনিস। মৃত্যুর রেকর্ড গড়তে গিয়ে ফিরেছে স্পেন। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে লাশের গন্ধ, গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর বায়ুতে। এর শেষ কবে কেউ জানে না!

মৃত্যুপুরীর মাঝে আজ যেন প্রকৃতি পেয়েছে তাদের স্বর্গরাজ্য। আজ থেমে গিয়েছে অবাদে গাছ কাঁটা, সাগরে ফিরেছে ডলফিন, সৈকতে দেখা মিলছে লাল কাঁকড়ার ফুটেছে নানা জাতের লতা। প্রকৃতি পেয়েছে তার স্বাধীনতা, মানুষ হারিয়েছে স্বাধীনতা।

ব্যস্ততম ঢাকা শহর আজ হয়েছে অচেনা জনশূন্য এক নগরী৷ সরকারের দফায় দফায় ছুটি, জনগনের বাড়ি ফেরার প্রতিযোগিতায় অসুস্থ আজ ঢাকা। মহাখালী-ফার্মগেটে নেই আজ ট্রাফিকজ্যাম, সারা বস্তির মানুষেরাও ঘরে বন্দী। কেউ আজ না খেয়েও কাটাচ্ছে দিন আর তাদের খাবারের জন্য সরকার থেকে শুরু করে অনেকেই তাদের সাহায্যে করছে। অনেকেই আবার ভিক্ষুক না হয়েও হয়ে যাচ্ছে ভিক্ষুক! প্রকৃতির কি লিলা খেলা। সবার মনে একটায় প্রত্যাশা কবে হবে পৃথিবী শান্ত, কিন্তু কেউ জানেনা এই প্রশ্নের উত্তর।

অনেকে ভিক্ষুক না, তবু না চাইতেও তাদের আজ অন্যের দাঁড়ে ত্রাণ সংগ্রহ জন্য যেতে হচ্ছে। গরিবের শপিংমল ফুটপাতের জনগন আজ অসহায় ফুটপাতে ঘুমানো মানুষগুলোর মতো। ত্রাণ দেবার নামে চোরদেরও আনা হচ্ছে আইনের আয়ত্তে, বেড়িয়ে আসছে আসল সমাজসেবকেরা।

কোন প্রকার গোলাবারুদ, অস্ত্রের সাহায্য ছাড়া যুদ্ধে আজ লক্ষ লক্ষ ডাক্তার। প্রাণের বিনিময়ে হলেও সমাজসেবী ডাক্তারেরা লড়াই চালিয়ে রেখেছেন কোভিট-১৯ এর বিরুদ্ধে। আবার অনেক ডাক্তার হারিয়েছে তাদের জীবন। অদৃশ্য এক শক্তির যেন কাবু করে ফেলছে সবাইকে, হতদরিদ্র হতে মধ্যবিত্ত সবার শেষ আশ্রয়স্থল আজ “সরকারী ত্রাণ”। ছোট্ট একটি ভাইরাস শিক্ষা দিচ্ছেন সারা পৃথিবীর মানুষদের।

মহামারী শেষে বিশ্ব হয়তো মোর নেবে নতুন নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায়। যারা এই অদৃশ্য শত্রুদের বিপক্ষে মোকাবেলায় কিছুটা এগিয়ে থাকবে, তারাই হয়তো দখলে নিয়ে নেবে বিশ্ব নেতৃত্ব । এই নেতৃত্ব নিয়ে হয়ে যেতে পারে এক বিশাল যুদ্ধ আবার হতে পারে সমন্বিয় শান্তি চুক্তি। তাহলে সুস্থ পৃথিবীর নতুন নেতৃত্বে কারা থাকবে সবার শীর্ষে? পৃথিবী সুস্থ হবে তো!

আমাদের সোনার বাংলায় প্রতি ২৪ ঘন্টায় করোনায় মৃত্যু সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি হয়ে চলেছে, থামছে না আজ আর কোন নেতার ভয়ে, থামছে না আজ আর কোন ভয়াল আঘাতে। প্রতিনিয়ত করোনা সংক্রমণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেচ্ছায় হোম কোয়ারান্টাইনে সারা দেশ। শুধু সচেতনতায় বাঁচিয়ে দিতে পারে এই মহামারী থেকে। অচিরেই হয়তো সৃষ্টিকর্তা মুক্তি দেবে আমাদের এই ভাইরাস থেকে। হয়তো অচিরেই আমরা আবার ফিরে যাবো চিরচেনা ঢাকা শহরে, অচিরেই হয়তো দেখা হবে, কর্মসূচি বাস্তবায়ন আর কষ্টের ঘাম ঝাড়বে আবার সুস্থ চিরচেনা শহরে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button