নির্বাচন ও রাজনীতিমহেশপুর

এ প্রজন্মের কেউ খোজ রাখে না মহেশপুর আ’লীগ নেতা রওশন আলীর

জাহিদুল ইসলাম, ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহ কেসি কলেজের ছাত্রলীগের নেতা ও মহেশপুর থানার ফতেপুর ইউনিয়ন আলীগের পাকিস্থান আমলের সাধারন সম্পাদক ছিলেন আলহাজ্ব রওশন আলী মাষ্টার। তিনি এখন নিরবে-নিভৃতে দিন পার করছেন। শেখ মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখার প্রত্যাশায় আজও দিন গুনছে।

মহেশপুর থানার সাড়াতলা গ্রামের নছর উদ্দিন বিশ্বাসের কনিষ্ঠ পুত্র আলহাজ্ব রওশন আলী মাষ্টার(৭৮) ১৯৬২সালে কোটচাঁদপুর হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করে ঝিনাইদহ কেসি কলেজে আই.এ ভর্তি হয়। এ সময় নুরে আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কলেজে ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে আই.এ পাশ করার পর একই কলেজে বি.এ ভর্তি হয় এবং ১৯৬৭ সালে বি.এ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে মহেশপুরে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। মহেশপুর আওয়ামীলীগ নেতা বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান তার ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলো।

১৯৬৮ সালে অক্টোবর মাসে ফতেপুর প্রাইমারি স্কুল চত্বরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ শামছুল আলমের সভাপতিত্বে(পরবর্তীতে এ.টি.ও যশোর সদর) ইউনিয়ন আ.লীগের ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ঐ কমিটির সভাপতি শরিফুদ্দিন মন্ডল(খোকা কমান্ডার, একতারপুর),সাধারন সম্পাদক রওশন আলী বিশ্বাস(সাড়াতলা),সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম মন্ডল(রাখালভোগা), মকছেদ আলী মন্ডল(ফতেপুর),সহ-সম্পাদক মুজিবর মাষ্টার(বেড়েরমাঠ) নির্বাচিত হয়।

অন্যান্য সদস্যরা হলেন- আব্দুল করিম শেখ(ফতেপুর), পাচু খাঁ(রাখালভোগা), শামছুল আমিন(পুরন্দপুর),ফরিদ আহম্মেদ(পুরন্দপুর),মাহাতাব মিয়া(গোয়ালহুদা),মাহাবুব মিয়া(গোয়ালহুদা), নুরবক্র মন্ডল(সাড়াতলা), গণি বিশ্বাস(সাড়াতলা),আঃকায়ুম মিয়া(যোগিহুদা), মফিজ উদ্দিন(যোগিহুদা), শফি উদ্দিন(ফতেপুর), আলীহিম মন্ডল(কানাইডাঙ্গা),মকছেদ আলী খাঁ(কানাইডাঙ্গা), শ্রী যুগোল কৈবত্য(ফতেপুর), সিরাজ বিশ্বাস(নিমতলা), জুম্মাত আলী(নিমতলা)।

পাকিস্থান আমলে গঠিত এই কমিটির আলহাজ্ব রওশন আলী মাষ্টার ও গোয়ালহুদার মাহাবুব ছাড়া আর কেউই জীবিত নেই। ১৯৬৮ সালে এই কমিটি সহযোগিতায় সৈয়দ শামছুল আলম মাষ্টারের উদ্যোগে ফতেপুর মুখার্জি বাড়িতে জুনিয়র হাই স্কুল চালু করা হয়। এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আলহাজ্ব রওশন আলী মাষ্টার, সহকারি শিক্ষক হিসেবে ছিলেন- একতারপুর গ্রামের শফি উদ্দিন কারিকার(অংক), জীবননগর থানার ধোপাখালি গ্রামের শামছুদ্দিন সোমা(ইংরেজী),বরিশাল থেকে আগত সিরাজুল ইসলাম পাটুয়ারী(ধর্ম)।

১৯৬৯ সালে গণ-আন্দোলনের সময় ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের কাগজপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঐ ঘটনায় তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান তবিবর রহমান খাঁন ১১জনের নামে মামলা করেন। এই মমালায় রওশন আলী আসামী হয়ে পলাতক থাকে। এই মামলায় পাকিস্থান সামরিক বাহিনী নিমতলার আবুল কাশেম মাষ্টার, একতারপুরের শরিফুদ্দিন ওরফে খোকা কমান্ডার, কানাইডাঙ্গার আব্দুল হামিদ মাষ্টার। এই ৩জনকে আটক করলে আন্দোলনের মুখে তবিবর রহমান খান মামলা প্রত্যাহার করে নেন। স্কুলটি চালু থাকলেও ১৯৭০ সালে মুসলিমলীগ নেতাদের ষড়যন্ত্রের কারণে তবিবর রহমান খান সরাসরি বিরোধীতা করায় এক পর্যায়ে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। আলহাজ্ব রওশন আলী মাষ্টার এ সময় থানা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ঐ স্কুলের ছাত্ররা খালিশপুর, হাসাদাহ সহ বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি হয়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে তিনি ব্যাপক কাজ করেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সহযোগিতা করেন। ১৯৭০ এবং ১৯৭৩ সালে এমপি নির্বাচনে তৎকালীন নৌকা মার্কার প্রার্থী ময়নুদ্দিন মিয়াজীর পক্ষে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৭ সালে খালিশপুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। দীর্ঘ ২৭বছর শিক্ষকতা জীবন শেষ করে ২০০৪ সালে অবসরে যান। এরপর থেকে নিরবে-নিভৃতে তিনি দিন কাটাচ্ছেন। এ প্রজন্মের কোন আওয়ামীলীগ নেতা এই প্রবীণ নেতাকে খোজ রাখে না। শেখ মুজিবের আদর্শ সৈনিক হিসেবে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা দেখার প্রত্যাশা করেন এই মুজিব ভক্ত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button