জাহান্নামি কারা!
ঝিনাইদহের চোখঃ
কোরআন-হাদিসের ভাষ্যমতে, কাফেরদের ঠিকানা জাহান্নাম, মোমিনদের ঠিকানা জান্নাত। যারা ঈমান নিয়ে কবরে যাবে, তারা বড় বড় গোনাহ থেকে ক্ষমা না পেলে প্রাথমিকভাবে জাহান্নামে যাবে। সেখানে শাস্তির মেয়াদ শেষ করে তারপর প্রবেশ করবে জান্নাতে। মহানবী (সা.) তাঁর প্রিয় উম্মতকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে সতর্ক করে দিয়েছেনÑ সব জাহান্নামি আমল থেকে। আমাদের সবার চেষ্টা করা উচিত জাহান্নাম অবধারিত করা সেসব গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। এখানে হাদিসে উল্লেখিত জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার মতো কয়েকটি শীর্ষ গোনাহ তুলে ধরা হলো
আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী : জুবাইর বিন মুতইম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বোখারি : ৫৫২৫)।
হারাম খাদ্য ভক্ষণকারী : জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা লালিত-পালিত হয়েছে, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সুনানে বায়হাকি : ৫৫২০)।
মা-বাবার অবাধ্য সন্তান ও দাইয়ুস নারী : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে যাবে নাÑ মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ুস (অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-বোন প্রমুখ অধীনস্থ নারীকে বেপর্দা চলাফেরায় বাধা দেয় না) এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলা।’ (মুসতাদরাকে হাকেম : ২২৬)।
প্রতিবেশীকে কষ্ট দানকারী : আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার অত্যাচার থেকে প্রতিবেশীরা নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম : ৬৬)।
অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি : হারেছা বিন ওহাব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অশ্লীলভাষী ও উগ্র মেজাজি ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না।’ (আবু দাউদ : ৪১৬৮)।
প্রতারণাকারী শাসক : মাকাল বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘মুসলমানদের ওপর প্রতিনিধিত্বকারী শাসক যদি এ অবস্থায় মারা যায় যে, সে তার অধীনস্থদের ধোঁকা দিয়েছে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (বোখারি : ৬৬১৮)।
অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী : আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কসম করে কোনো মুসলমানের সম্পদ আত্মসাৎ করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব করে দেন এবং জান্নাত হারাম করেন। এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি সামান্য কোনো জিনিসও হয়? তিনি বললেন, যদি পিপুল গাছের একটি ছোট ডালই হোক না কেন।’ (মুসলিম : ১৯৬)।
খোঁটাদানকারী, অবাধ্য সন্তান ও মদ্যপ : আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘উপকার করে খোঁটা দানকারী, মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, সর্বদা মদপানকারীÑ এই তিন শ্রেণির মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সুনানে নাসায়ি : ৫৫৭৭)।
চোগলখোর : হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম : ১৫১)।
অন্য বাবার সঙ্গে সম্বন্ধকারী : সা’দ ও আবু বাকরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজেকে অন্য বাবার সঙ্গে সম্পর্কিত করেÑ অর্থাৎ নিজেকে অন্য বাবার সন্তান বলে পরিচয় দেয়, তার জন্য জান্নাত হারাম।’ (বোখারি : ৬২৬৯)।
দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে ইলম অর্জনকারী : আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ইলম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা হয় সে ইলম যে ব্যক্তি দুনিয়াবি কোনো স্বার্থ-সম্পদ হাসিলের উদ্দেশ্যে শিক্ষা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’ (আবু দাউদ : ৩১৭৯)।
গর্ব-অহংকারকারী : আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম : ১৩১)।
নবীজির নাফরমানি : আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার সব উম্মত জান্নাতে যাবে; কিন্তু সে ব্যক্তি নয়, যে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছে। সাহাবিরা আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কে অস্বীকার করেছে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করে, সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার নাফরমানি করে, সে (জান্নাতে যেতে) অস্বীকার করেছে।’ (বোখারি : ৬৭৩৭)।
অকারণে তালাক কামনাকারী নারী : সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে নারী তার স্বামীর কাছে অকারণে তালাক কামনা করে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।’ (সুনান তিরমিজি : ১১০৮)।
ওয়ারিশকে বঞ্চিতকারী : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওয়ারিশকে তার অংশ থেকে বঞ্চিত করল, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের অংশ থেকে বঞ্চিত করবেন।’ (সুনানে ইবন মাজাহ : ২৬৯৪)।
লৌকিকতা প্রদর্শনকারী : আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, এক দীর্ঘ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম একজন শহীদকে ডাকা হবে। এরপর একজন ক্বারিকে। তারপর একজন দানশীল ব্যক্তিকে হাজির করা হবে। প্রত্যেককে তার কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। এরপর শহীদকে বাহাদুর খ্যাতি লাভের উদ্দেশ্যে জিহাদ করার অপরাধে, ক্বারিকে বড় ক্বারির খ্যাতি লাভের জন্য কেরাত শেখার অপরাধে এবং দানশীলকে বড় দাতা উপাধি লাভের নিয়তে দান-সদকা করার অপরাধে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম : ৩৫২৭)।