জানা-অজানা

তথ্য যাচাই এবং মিথ্যা সংবাদ শনাক্তে পদক্ষেপ নিয়েছে ফেসবুক

ঝিনাইদহের চোখঃ

ভুয়া তথ্যের মাধ্যমে গুজব ও বিভ্রান্তি তৈরি এবং অনলাইনে কপি-পেস্ট ও ফেক নিউজ বন্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রতিরোধ এবং অনলাইনে প্রাপ্ত খবরের মান উন্নয়নে ফেসবুক বাংলাদেশে থার্ড পার্টি ফ্যাক্ট চেকিং প্রোগ্রাম চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে বিওওএম (বুম) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করবে তারা। এ ফিচারের আওতায় ব্যবহারকারীও যাচাই করতে পারবেন ফেসবুকে শেয়ারকৃত কোন পোস্ট কিংবা খবরটি ভুয়া।

বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে বিওওএম (বুম)-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিকে কাজ করছে ফেসবুক। বুম বাংলাদেশের ফেসবুক কমিউনিটিতে গত ১৯ এপ্রিল থেকে বিদ্যমান ছবি ও ভিডিওসহ ফেসবুক স্টোরিগুলোর পর্যালোচনা করছে। পর্যালোচনা শেষে খবরের নির্ভরযোগ্যতা অনুযাযী রেটিং প্রদান করছে। এ রেটিং প্রদানের মাধ্যমে সংশ্নিষ্ট পোস্ট অসত্য হলে এটি নিউজ ফিডে কম বা একেবারে নিচের দিকে দর্শিত হবে, যা পোস্টটির ছড়িয়ে পড়া উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে। ফেসবুক ভারত এবং মিয়ানমারের মতো অন্যান্য দেশেও বুমের সঙ্গে কাজ করছে।

এ বিষয়ে ফেসবুকের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের নিউজ পার্টনারশিপ ডিরেক্টর অঞ্জলি কাপুর বলেন, আমরা জানি যে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সঠিক তথ্যই পেতে চায়। সে জন্য আমরা বাংলাদেশে বুমের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমাদের থার্ড পার্টি ফ্যাক্ট চেকিং প্রোগ্রাম অব্যাহত রাখতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা বিশ্বাস করি, এই ফ্যাক্ট চেকিং প্রোগ্রামের সাহায্যে আমরা আরও সচেতন জনগোষ্ঠী তৈরি করতে এবং স্থানীয়ভাবে এই প্রোগ্রামটি আরও সম্প্রসারণ করতে পারব।

তিনি জানান, নিউজ ফিডে যে পোস্টগুলো দেখা যায়, সেগুলোর মান এবং সত্যতা উন্নত করতে এই প্রোগ্রামটি ফেসবুকের থ্রি-পার্ট ফ্রেমওয়ার্কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। থার্ড পার্টি ফ্যাক্ট চেকাররা যখন কোনো পোস্ট নিয়ে লেখেন, ফেসবুকের নিউজ ফিডে সেই পোস্টের ঠিক নিচে রিলেটেড আর্টিকেলস অংশে সেটি সঙ্গে সঙ্গেই দেখায়। ফেসবুকের বিদ্যমান পেজগুলোর অ্যাডমিন বা কোনো সদস্যও যদি কোনো অসত্য তথ্য পোস্ট করার চেষ্টা করে তাদের কাছেও নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে। এর ফলে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা কী ধরনের পোস্ট পড়বে, কোন তথ্যটি বিশ্বাস করবে আর কী শেয়ার করবে বা করবে না, তা নিজেরাই জেনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

বুমের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক গোবিন্দ এথিরাজ বলেন, বুম একটি নিবেদিত দল নিয়ে আমাদের ফ্যাক্ট চেকিং অপারেশন বাংলাদেশে প্রসারিত করতে পেরে আনন্দিত। আমরা স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা থেকে শুরু করে বর্তমান যে কোনো বিষয়ে নিয়ে অনলাইনে প্রচলিত ভুল তথ্যগুলোকে চিহ্নিত করে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করব। ফ্যাক্ট চেকিং হলো আমাদের বিশেষত্ব এবং আমরা আশাবাদী যে, এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা প্রয়োজনীয় ও সঠিক তথ্য পেয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন এবং অনলাইনে সত্য খবর এবং তথ্য শনাক্ত করতে সক্ষম হবেন।

থার্ড পার্টি ফ্যাক্ট চেকিংয়ের পাশাপাশি ফেসবুকের ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল নিউজ লিটারেসি নিয়ে দক্ষতা অর্জন করে কী পড়তে হবে, কোন তথ্যটি বিশ্বাস করতে হবে এবং কী শেয়ার করা যাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে। বিশ্বব্যাপী নিউজ লিটারেসি প্রোগ্রামগুলো প্রচার করে এবং মিথ্যা সংবাদ চিহ্নিত করার উপায় শেয়ার করে ফেসবুকের ব্যবহারকারীদের নিউজ ফিডের পোস্টগুলো সম্পর্কে সচেতন করে। বাংলাদেশে ফেসবুকে বছরের শুরুর দিকে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলালিংকের সঙ্গে একটি ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রোগ্রাম ‘ইন্টারনেট ১০১’ পরিচালনা করেছে। এই প্রোগ্রামটি ৩০০০ বাংলালিংক রিটেইল লোকেশনে ওয়ান-অন-ওয়ান ট্রেনিং সেশনের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট নিরাপত্তা বুঝতে শেখায়। প্রোগ্রামটি ডিজিটাল লিটারেসি এবং অনলাইন সুরক্ষা সম্পর্কে জানানোর জন্য কিছু নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬০০ শিক্ষার্থীদের কাছে ইয়ুথ কানেক্ট সংগঠনের মাধ্যমে আলোচনা ফোরামের আয়োজন করবে।

ফেসবুকের ফ্যাক্ট চেকিং প্রোগ্রামটি শুরু হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। এটি ৫০টির বেশি ভাষায় এটি কাজ করছে। ফেসবুক কমিউনিটির প্রতিক্রিয়াগুলো পর্যালোচনা করার মাধ্যমেও ফ্যাক্ট চেকাররা কিছু মিথ্যা তথ্য উদঘাটন করে। ভুয়া খবর প্রতিরোধের জন্য ফেসবুকের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মধ্যে এটি সর্বশেষ সংযোজন এবং সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এমন একটি কমিউনিটি গঠনে ফেসবুকের এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

যেভাবে সত্য-মিথ্যা পরীক্ষা

ফ্যাক্ট চেকিং স্টোরিজ: ফেসবুকে চিহ্নিত নিউজ স্টোরিজগুলো এএফপি দ্বারা পরীক্ষা করা হবে, যা নির্দলীয় আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্কের দ্বারা প্রত্যায়িত। যারা ফ্যাক্ট চেক করেন তাদের কাজ হলো স্টোরিগুলো পরীক্ষা করা, ফ্যাক্ট চেক করা এবং গল্পের নির্ভুলতা নির্ধারণ করা।

ভুয়া খবর নিউজ ফিডের নিচের দিকে রাখা : ফ্যাক্ট চেকার যেসব স্টোরিজগুলোকে ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করবে তা নিউজ ফিডের নিচের দিকে চলে যাবে, যার ফলে ভুয়া খবর নিউজ ফিডের ওপরের দিকে আসবে না এবং এর ফলে ভুয়া খবর ছড়ানো কমে যাবে।

যেসব পেজ অথবা ওয়েবসাইট ক্রমাগত ভুয়া খবর প্রচার করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া: যেসব পেজ অথবা ওয়েবসাইট ক্রমাগত ভুয়া খবর প্রচার করছে তাদের প্রচার কমে যাবে এবং তাদের অর্থ উপার্জনের উপায় বন্ধ ও অ্যাডভার্টাইজমেন্ট মুছে ফেলা হবে।

ব্যবহারকারীরা আরও তথ্য এবং নিয়ন্ত্রণ সরবরাহ করা

ভুয়া খবর প্রচারের তথ্য প্রদান : যদি তৃতীয় পক্ষের ফ্যাক্ট চেকাররা কোনো নিউজ স্টোরিতে আরও তথ্য সরবরাহ করে অনুচ্ছেদগুলো লেখেন তবে আপনি এই অনুচ্ছেদগুলো অবিলম্বে আপনার নিউজ ফিডের মূল স্টোরির ঠিক নিচেই দেখতে পাবেন।

ভুয়া খবর প্রচারকারী শনাক্ত করা: আপনি যদি ভুয়া খবর শেয়ার করতে যান অথবা অতীতে করে থাকেন এবং তা যদি তৃতীয় পক্ষ ফ্যাক্ট চেকার ধরে ফেলে তাহলে আপনাকে নোটিফিকেশন পাঠানো হবে। পেজে অ্যাডমিনদেরও নোটিফিকেশন পাঠানো হবে, যদি তাদের শেয়ার করা গল্প ভুয়া হয়ে থাকে।

ভুয়া খবর শনাক্তের উপায় : ব্যবহারকারীর কী জানা দরকার তা জানুন, এজন্য কী পড়তে ও শেয়ার করতে হবে তা জানতে https://www.facebook.com/help/188118808357379 লিঙ্কে যেতে হবে। যে খবরটি ব্যবহারকারীর কাছে মিথ্যা বলে মনে হবে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button