জানা-অজানা

করোনা পরীক্ষার ফল পেতে দেরি হলে যেসব ঝুঁকি তৈরি হতে পারে–বিবিসি

ঝিনাইদহের চোখঃ

যশোরের আতিক আহমেদ (পরিবর্তিত নাম) কয়েকদিন জ্বর, সর্দিকাশিতে ভুগতে থাকায় গত ২৫শে এপ্রিল তার নমুনা নিয়ে যাওয়া হয় তার দেহে কোভিড-১৯ আছে কিনা তা শনাক্ত করার জন্য। ২৮শে এপ্রিল তাকে জানানো হয় যে তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত।

একই ঘটনা ঘটে নারায়নগঞ্জের বাসিন্দা হ্যাপি খানমের (পরিবর্তিত নাম) সাথে। পরিবারের একজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় পর পুরো পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠান তিনি।

চারদিন পর নমুনা পরীক্ষার ফলাফল হাতে আসার পর তিনি জানতে পারেন তার পরিবারের একাধিক সদস্য করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন।

গত এক-দেড় মাসে আতিক আহমেদ বা হ্যাপি খানমের মত অনেকেই পড়েছেন এই বিড়ম্বনায়।

জ্বর, সর্দি, কাশির মত লক্ষণ নিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য নমুনা জমা দিলেও পরীক্ষার ফলাফল আসতে চার-পাঁচ দিন অপেক্ষা করার ঘটনা ঘটেছে অনেকের ক্ষেত্রে। কারো কারো অভিযোগ, ফলাফল জানতে এক সপ্তাহের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভাইরাস শনাক্তের বিষয়টি না জানলে বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক হোসেন জানান বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনাভাইরাসের উপসর্গ যাদের মধ্যে থাকবে, তাদের সবাইকেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের মতই সতর্কতার সাথে সেবা দিতে হবে।

সেই নির্দেশনা অনুযায়ী, নমুনা পরীক্ষা করতে দেয়ার সময় থেকে ফলাফল আসার আগ পর্যন্ত সন্দেহভাজন রোগীকে বাসায় বা সেবা কেন্দ্রে আইসোলেশনে রাখা উচিত।

কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এরকম অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে, যেখানে দেখা গেছে যে নমুনা পরীক্ষা করতে দেয়ার পর সন্দেহভাজন রোগী যথেচ্ছভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং বিভিন্ন জমায়েতেও উপস্থিত হচ্ছেন।

এই ধরণের ব্যক্তিরা নিজেদের অজান্তেই মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন মোশতাক হোসেন।

অন্য রোগের ঝুঁকি বাড়বে

অনেক রোগীর ক্ষেত্রে শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কিনা তা না জানা পর্যণ্ত অন্য রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না বলে জানান মোশতাক হোসেন। যেমন ডায়ালাইসিসের রোগীর ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে, তার শরীরে করোনাভাইরাস আছে কি না তা না জানা পর্যন্ত তার ডায়ালাইসিস করা যাচ্ছে না।

করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল সঠিক সময়ে না আসায় ঐ ব্যক্তিদের ‘নন কোভিড’ জটিলতার চিকিৎসা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফলাফল সময়মতো না আসায় অনেকের চিকিৎসা ব্যাহত হওয়া, এমনকি বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে বলে মন্তব্য করেন মোশতাক হোসেন।

মোশতাক হোসেন বলেন সঠিক রোগতাত্বিক চিত্র পাওয়ার লক্ষ্যে সঠিক সময়ে পরীক্ষার ফল জানা খুবই জরুরি। নমুনা পরীক্ষার ফল আসার আগ পর্যন্ত কোনো রোগীর চিকিৎসা যেন ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা থাকলেও অনেকক্ষেত্রেই সেই নির্দেশনা মানা হচ্ছে না।

অনেক জায়গাতেই দেখা গেছে যে চিকিৎসকরা ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষা করছেন, রোগীকে হাসপাতালে ঢুকতে দিচ্ছেন না এবং কোনো ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে রোগী বাসায় বসে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন।

মোশতাক হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে রোগী বাছাই করার আলাদা সেন্টার থাকবে। সেখান থেকে রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে ঐ অন্তর্বর্তীকালীন সময় রোগী আইসোলেশনে থাকবেন। আর আইসোলেশনে থাকার সময় রোগীর অন্যান্য রোগের চিকিৎসাও নিশ্চিত করতে হবে।

পুরনো শ্বাসকষ্টের রোগী যদি হাসপাতালে যান এবং তার নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠিয়ে তার কোনো চিকিৎসা না দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক, সেক্ষেত্রে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে, বলেন মোশতাক হোসেন। বিবিসি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button