পাঠকের কথা

বড়ই ঠুনকো পারিবারিক বন্ধন/দৃঢ় নেই আগের মতন–এম এ কবীর (সাংবাদিক)

ঝিনাইদহের চোখঃ

শাহীনারা। সচেতন। শিক্ষিত। জীবন সম্পর্কে আছে ইতিবাচক ধারণা । আছে চাকুরী।

অভিজ্ঞতা। আরো স্বাচ্ছন্দ্য চাই। ভাল কর্মস্থল চাই। পরিক্ষার জন্য প্রস্তুত। প্রশ্ন কর্তা বললেন,আপনি একান্ত আপন সাতজনের কথা ভাবুন। যাদেরকে কখনও ছেড়ে থাকতে চাইবেন না। শাহীনারা মনে মনে ভাবে – মা,বাবা,শশুর-শাশুড়ি, ছেলে, মেয়ে এবং অবশ্যই স্বামী। এদেরকে নিয়েই তো সংসার। প্রশ্ন কর্তা বললেন- এবার আপনার ভাবনা থেকে চার জনকে বাদদিন।

কোন চার জনকে বাদদেয়া যায় ?- বাবা-মাকে তো ছেড়ে আসতে হয় এক সময়। শশুরÑ শাশুড়িকেও। দুই সন্তান এবং স্বামীকে নিয়েই থাক যত ভাবন্ া। প্রশ্ন কর্তা এবার বললেন তিনজন থেকে এক জনকে বাদদিন। চিন্তার মাত্রা বেড়ে যায়। এবার কাকে বাদ দেবে ? ভাবনাটা অত সহজ নয়। বেশ সময় নিয়ে কষ্টে সিদ্ধান্ত নিল এভাবে, মেয়েকে বাদ রাখা যেতে পারে। তাকে বিয়ে দিতে হবে। নিজের ঘর সংসার হবে। সারা জীবনতো আগলে রাখা যাবে না। বাকী থাকে পুত্র এবং স্বামী। প্রশ্ন কর্তা সেই একই শর্ত জুড়ে দিয়ে বললেন,আপনার ভাবনা থেকে আরও একজনকে বাদদিন। কঠিনতম পরিক্ষা। এমন পরিক্ষা জীবনে আসেনি। ঘামতে শুরু করে শাহীনারা । কপালে চিন্তার ভাজ। চোখ-মুখ লাল হয়ে আসে। পিপাসায় কাতর। কূল-কিনারা পায়না ভেবে। একে একে সবাইকে ছেড়ে কাকে নিয়ে থাকবে সে। দু‘জনের একজনকেও ছেড়ে থাকা সম্ভব নয়। উত্তর খুঁজতে থাকে। মেলে না। তবুও উত্তর চাই-ই। ভেবে ভেবে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। খুব কষ্টের ভাবনা। মনে হলো ছেলের কথা। তাকেও তো বিয়ে দিতে হবে। বউ আসবে। সংসারে মনোযোগী হবে। মা-বারার কথা ভাববার সময়ও হয়তো থাকবেনা।

ছেলেকে বিয়ে দিলে বউয়ের কথার বাইরে যাবার উপায় থাকে না। আরও কত কী। হারিয়ে যায় কল্পনার এক রাজ্যে। এক সময় তার ভাবনায় আসে, স্বামীর সাথে জীবনের প্রায় সবটুকু সময় পার হলো। সুখে-দুঃখে। হাসি-কান্নায়। পাওয়া না পাওয়ার বেদনা নিয়ে। আছে স্মৃতি। অভিমান। তবুও সব না বলা কথা – বলার একমাত্র অবলম্বন। খুনসুটি যতই থাক,দীর্ঘ বাইশ বছরের অ¤ø-মধুর দাম্পত্য সম্পর্ক। শেষ ভরসা স্বামীই।

শাহীনারার ভাবনার সাথে বেদানার কোন মিল আছে কিনা জানা যায়নি। আচার – আচরনে । কাজে-কর্মে। মা-বাবা আর দুই মেয়েকে নিয়ে অগত্যা পথ চলা। চাকুরী। সঞ্চয়। পেনশন। নমিনি। বাড়ি – ঘর । সহায় সম্পদ। আশা-ভরসা। একলা থাকার বাসনা। স্বামীর মৃত্যু কামনা। আরো কত কী। সুখের সন্ধানে এক বে-পরোয়া জীবন। চাই,চাই এবং আরো চাই। অভাব তাকে শান্তি দেয়না দু‘দÐ। পৃথিবীর সকলের সব কিছু আছে। এক মাত্র তার কিছুই নেই। অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার। নিজে নিজে সুখে থাকার যত চেষ্টা। হয়তোবা মানুষিক সমস্যা। ভুল পথে হাটা। ঠকেছেন। ঠকানো হয়েছে।

কাল্পনিক দুটি ভিন্ন চরিত্র। সমাজে এমন বিচিত্র চরিত্রের অভাব নেই বোধ করি ।
সম্পর্ক এক অতিশয় সূক্ষè বিষয়। না দেখা সুতোয় বাঁধা। পারস্পারিক আচার – আচরণে শ্রীবৃদ্ধি। আর শ্রীহীন হয় সম্পর্কের। শ্রীবৃদ্ধি হবার পেছনে মূল চালিকাশক্তি স্বার্থত্যাগ। শ্রীহীন হওয়ার কারণ স্বার্থবাদ।

স্বার্থ এক মারাত্মক উপসর্গ। স্বার্থ ছাড়া মানুষ নেই। স্বার্থের কারণেই সভ্যতা। উন্নয়ন। অগ্রযাত্রা। এটাকে খারাপ চোখে দেখারও কিছু নেই। কারো স্বার্থচিন্তা প্রকট। সেটা অবশ্যই নিন্দনীয়।

জাহানারা বেগম। তার বড় মেয়ের কথায় তাজ্জববনে গেলেন। মাথায় সত্যি সত্যি আকাশ ভেঙে পড়লেও বোধ করি এতটা অবাক হতেন না তিনি। ‘ আমি নাকি মা হয়েছি প্রাকৃতিক কারণে’, বিলাপ করতে লাগলেন তিনি। কথাটার গভীরে প্রবেশ করতেই গা রি রি করে উঠলো তার। এমন আস্পর্ধা সে পেয়েছে কোথায় ? বোধ ও বোধনে শোধন আসেনি কেন এখনও ? তিনি সারা জীবন সন্তানের দেখভাল করে এসেছেন পরম মমতায়। কাকতাড়–য়ার মত তাড়িয়ে এসেছেন তাদের দিকে ধেয়ে আসা সকল দুঃখ-কষ্ট বালা- মুসিবত। নিজে রোদে পুড়ে ঘাম ঝরিয়েছেন। বৃষ্টির পানিতে ভিজে অসুখে পড়েছেন। তীব্র শীতের কামড়ে হয়েছেন পর্যুদস্ত। তবুও তাদের গায়ে আঁচড় লাগতে দেননি এতটুকু। অথচ এখন দেখছেন যতনের মধু পিঁপড়ায় খায়। ‘এত এত ত্যাগের জবাব কী তবে, হে কন্যা আমার ? কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারালেন জাহানারা বেগম।

শাশুড়ি – বউ সম্পর্কের তিক্ততা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা হয় সমাজে। শাশুড়ি বউকে সহ্য করতে পারছেন না। বউ-এর প্রতিটি চলনে- বলনে – কাজে খুঁত ধরছেন। চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করছেন। ছেলের সাথে বউ-এর ভালো সম্পর্ক মানতে পারছেন না। একসঙ্গে ঘুরাঘুরি খুনসুটি সইতে পারছেন না। সব কাজে নাক গলাচ্ছেন। ছেলের বউকে নিয়ে অনেক আশা ছিল। ভেবেছিলেন বিয়ের সময় সঠিক মূল্যায়ন করা হবে। হয়নি। তার মনে হচ্ছে ঠকানো হয়েছে। তাদের ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে। সে দুঃখ মনে রয়ে গেছে। হয়ত মনে হচ্ছে বউয়ের বাবা-মা তাদের সংসারে বড় বেশি নাক গলাচ্ছেন। সব রাগ গিয়ে পড়ছে ছেলের বউয়ের উপর।
অন্যদিকে শাশুড়িও বউয়ের দুচোখের বিষ। জগদ্দল পাথরের মতো। মাথায় চেপে বসে আছে। তার খাবার বানাতে ইচ্ছে করে না। এটা তার বাড়তি খাটুনি। তার কাপড় ধুতে ইচ্ছে করে না। ইচ্ছে করে না দুবেলা দু কাপ চা দিতে। দুটো ভাল কথা বলতে। দু‘দন্ড গল্প করতে। আদর করে বায়না করতে। হাতে সময় নেই একটুকুও। সব যোগাযোগ মোবাইলে। মা-বাবা,ভাই -বোন, বন্ধু – বান্ধবের সাথে।

সম্পর্কের অবনতির আরো কারণ আছে। শাশুড়ি হয়তো চাইছেন বউটা তার সঙ্গে গল্প করুক। দুদন্ড তার পাশে বসুক। খানিকটা সময় দিক। ওষুধ খেয়েছেন কিনা জিজ্ঞেসা করুক। চুল বেঁধে দিক। ঘর-বাড়ি সুন্দর করে গুছিয়ে রাখুক। ছোট ছোট চাওয়া। এসব বালাই বউয়ের মধ্যে নেই। সে মাসে একবারও শাশুড়ির ধারে-কাছে ঘেঁষে না। আবার বউও হয়ত চাইছে শাশুড়ি বলুক, যাও তোমরা সিনেমা দেখে এসো। ঘুরে এসো। কেনা কাটা করে এসো। এসব শাশুড়ির মধ্যে নেই। এসব কাহিনি নিয়ে কত গল্প। কত উপন্যাস। কত সিনেমা। কত নাটক।

বাংলা সাহিত্যের অনেকাংশ জুড়েই তো এসব। পশ্চিম বাংলার সিরিয়ালগুলোতে মার মার কাট কাট করে চলছে এসব গল্প।

——– ‘ আজকাল বন্ধনগুলো বড্ড এলোমেলো/খুব বেশি অগোছালো, অস্থায়ী/যেন রঙিন কাঁচের পাঁপড়িতে সাজানো রেণু/জলপদ্মের গোলাপী গালে রোদের টোকা পড়লেই/রাতের অতিথি শিশির মুহূর্তে উধাও।/সম্পর্কের সংজ্ঞা হাওয়ার তালে নিয়ত পরিবর্তনশীল/হৃদয়ের গাঢ় সুতো ছিঁড়তে ছিঁড়তে/বালির প্রাসাদ জুড়ে আছে শুধু উর্না জলে।/একবিংশ শতাব্দীতে কে আছ মানব/স্বার্থের উপরে উঠে ভুলে গেছো/অন্যের অযাচিত দেয়া শেষ কষ্টবিন্দু/ফেরানো দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছো লাল গোলাপ,/ক্ষমার উষ্ণতায় হাত বাড়িয়ে/হাসিতে জাগিয়েছো ভালবাসার প্রলেপ/কে আছ মানব এমন উদারতাকে সঙ্গী করেছো,/সংকীর্ণতাকে গুডবাই বলে।’

বিবি কামরুন্নাহার। বড় দুঃখ ছিল তার। ছেলের বউ ছেলেকে খুব খাটায়। দিন শেষে ক্লান্ত – শ্রান্ত হয়ে ছেলে বাড়ি ফেরে। বউ হাজারটা কাজ জমিয়ে রাখে। বিশ্রামের সুযোগ পায় না। কাজগুলো করতে হয় তাকে । বউ তখন ফেসবুকিং করে। নখে নেলপলিস লাগায়। তিনি বলতেন, ‘ছেলেটার কষ্ট দেখে সহ্য হয় না। মরেও শান্তি পাবো না।’ আমার সেই আত্মীয়া মনে অনেক দুঃখ নিয়ে চলে গেছেন। এখন বউ তার ছেলেকে কতটা খাটাচ্ছে তা জানার কোনা উপায় নেই তার। তবে হাহাকারটা আজও বুকে বড্ড বাজে। বউমার সঙ্গে তার আর কোনো সমস্যা ছিল না। ছেলের বউকে মেয়ের মতোই দেখতেন। সমস্যা একটাই ছেলেকে গাধার খাটুনি খাটানো। বউটা যদি একটু বিবেচক হতো। শাশুড়ির মনটা বুঝতো। তাহলে শাশুড়িকে এত কষ্ট বুকে নিয়ে চলে যেতে হতো না।

নাজমা। কখনই স্বামীকে দিয়ে ঘরের কাজ করাননা। ভাবেনও না। স্বামী হয়ত কখনও শখ করে সবজি খিচুড়ি রেঁধেছে। সে হয়ত তিনবছরে একদিন। নিয়মিত রান্নাঘরের কাজ করানো। থালাবাটি ধোয়ানো। রান্না করানো এসব কখনই না। ভাবনাতেও আসে না। চাকরি করছেন। সংসার সামলাচ্ছেন। ছেলে-মেয়ে মানুষ করছেন এক হাতে। তবে স্বামী বসে থাকবে রাজাধিরাজের মতো। স্ত্রী খেটে মরবে। কখনই না। স্বামীকেও বিবেচক হতে হবে। স্ত্রীকে সাহায্য করতে হবে। অবশ্যই বাধ্যতামূলক নয়।

যে মা তার ছেলেকে দিয়ে কখনোই এসব কাজ করাননি। তিনি যখন চোখের সামনে ছেলেকে বাসন মাজতে – রান্না করতে দেখেন। বউকে গড়াতে দেখেন। খারাপ লাগে তখন। খারাপ লাগে বলে বউয়ের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। ছেলেকে বলে প্রতিকার পান না। তার সঙ্গেও সম্পর্ক নষ্ট হয়।

কোনো মা প্রকাশ্যে এসব বলেন। দিনের পর দিন ঝগড়াঝাটি হয়। কোনো মা বলেনন না । পারিবারিক অশান্তির ভয়ে। কোনো মা দু- একবার বলে থেমে যান। নিজের মধ্যে গুমরে মরেন। আস্তে আস্তে দূরত্ব বাড়ে। সে দূরত্ব এতটাই বাড়ে। আর কখনোও জোড়া লাগানো যায়না।

সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক্সপ্রেশন বা প্রকাশ একটা বড় বিষয়। আজকালের মডার্ন শাশুড়ি হয়ত দিনের পর দিন বউমার প্রশংসা করছেন। প্রশংসা করে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। বিনিময়ে তিনি চাইছেন বউমাও তার একটু প্রশংসা করুক। সেটা হচ্ছে না। তিনি যা লিখছেন,বউমা হয়ত পড়ছেনও না। মন ভেঙে যাচ্ছে শাশুড়ির। বউমার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। শাশুড়ির মন পাবার জন্য এটা ওটা করছে। শাশুড়ি খুশি হচ্ছে না কিছুতেই। মন ভেঙে যাচ্ছে বউ-এর।
শাশুড়ি বউয়ের সম্পর্ক যেমন ডেলিকেট তেমনই ডেলিকেট শাশুড়ি জামাই সম্পর্ক।

বাংলায় ‘জামাই আদর’ বলে একটা কথা আছে। জামাই দেখছেন শ্বশুরবাড়িতে তার আদর যতœ হচ্ছে না। অন্য দশজন যা খায় তাই খাওয়ানো হচ্ছে। জন্মদিনে গিফট জুটছে না। শাশুড়ি – শ্বশুর বাবা বাবা করছে না। অন্যদিকে শাশুড়ি দেখছেন জামাইটা যেন কেমন। শাশুড়ি বলে যে একটু বাড়তি শ্রদ্ধা। দু‘হাতে এটা ওটা নিয়ে আসা। তাতো কিছুই হচ্ছে না। তিনি চেয়েছিলেন জামাই তার ছেলের বিকল্প হবে। বাজার করবে, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে, সব দেখা শুনা করবে। তার বালাই নেই। বরফ জমতে থাকে সম্পর্কে।

সবচেয়ে জটিল আর কঠিন সম্পর্ক ভাবি-ননদের। ভাবি – ননদের কুটকাচালি নিয়ে গল্প সিনেমার ছড়াছড়ি। ভাই হয়ত নতুন বউয়ের জন্য একটা শাড়ি কিনেছেন। বোন ভাইয়ের হাত থেকে তা ছিনিয়ে নিল। বসে সালিশ। ভাবি – ননদকে সহ্য করতে পারে না। ননদ পারে না ততোধিক। ননদ ভাবে, এই মেয়েটার জন্য তার ভাই পর হয়ে গেল। আর ভাবি ভাবে, এই মেয়েটা বিদায় হলে বাঁচি। নিজের মতো করে সুখে সংসার করতে পারি। ননদিনী সংসারে এমনই ভয়ের জিনিস যে তার নাম হয়েছে ‘রায়বাঘিনী।’

এতো গেলো আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্কের কথা। এর বাইরেও সম্পর্ক আছে। বন্ধুত্বের। সামাজিক সম্পর্কের। সব সম্পর্কই লালন করতে হয়। পরিচর্যায় গাছ বাড়ে। সম্পর্কও বাড়ে। আপনি একদিন – দ‘ুদিন – তিনদিন একজনের খবর নিলেন। সে নিলো না। ও সম্পর্ক টিকবে না। একজন দু’দিন তিনদিন আপনার বাড়িতে এলো। আপনি গেলেন না। ও সম্পর্ক টিকবে না। আপনি বিপদে একজনের পাশে দাঁড়ালেন। একবার দু‘বার। সে দাঁড়ালো না। সম্পর্ক টিকবে না। সম্পর্ক পারস্পারিক। আপনি একজনের জন্য কিছু করবেন সেও আপনার জন্য কিছু করবে। এটাই হবার কথা।

মধ্যবিত্ত জীবনে সম্পর্কের অবনতির একটা কারণ, টাকা-পয়সা, সম্পত্তি। মা-ছেলে, ভাই-বোনের যে সম্পর্ক সেখানে বৈষয়িক বা আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে মানসিক লেনদেনের।

মা- বাবা যদি মনে করেন ছেলে বা মেয়ে স্বার্থপর, তাহলে সেটা মারাত্মক। অনেক গল্পে আমরা পেয়েছি শেষ বয়সে ছেলে-মেয়ে ছেলের বউ, মা-বাবাকে দেখছে না। অন্য একজন পরিচর্যা করছে। ছেলে মেয়ের প্রতি বিরক্ত মা-বাবা এই পরিচর্যাকারীকেই সব সম্পত্তি দান করে দিচ্ছেন।

এমন ঘটনা যে দু‘একটা ঘটে না এমন নয়। ঘটে । তাছাড়া বাবা-মা রাগ করে, বাধ্য হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে যাচ্ছেন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ চিত্রও তো আমরা দেখছি হর-হামেশা। বয়স বাড়ার সাথে মানুষের স্পর্শকাতরতা বাড়ে। বাড়ে অভিমান । ছেলে -মেয়ে সেটা বুঝতে পারে না। তারা অভাগা।
একসময় আমরা যৌথ পরিবারে বাস করেছি। দাদা-দাদি, কাকা, বাবা-–মা, ভাই-বোন। অসাধারণ সুন্দর এক পারিবারিক চিত্র। তখনো বউ শাশুড়ি ঝগড়া করেছে, ননদ- ভাবি ঝগড়া করেছে, আবার এ- ওকে মুখে তুলে খাইয়েছে। চুল বেঁধে দিয়েছে। এখন ইউনিট পরিবার। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এক।

পরিবারের মধ্যে মিল নেই। বাইরের মানুষের সঙ্গেও মেশে না। এক ফ্লাটের লোক পাশের ফ্লাটের লোককে চেনে না। জানে না। অদ্ভুত!

 

ঘরে বাইরে সম্পর্কের এই অবনতি প্রীতিকর নয় মোটেই। আমাদের প্রত্যেকের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন আত্মোপলব্ধির। ছাড় দিতে শিখতে হবে। ওটা জরুরি। এই ভাঙনের মধ্যেও আমরা অনেক মধুর আর চোখ জুড়ানো সম্পর্ক দেখি। সেটা ওই ছাড় দেয়ার কারণে।

—– ‘এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি/ মাঝখানে নদী ওই বয়ে চলে যায়…’। কিংবদন্তি শিল্পী মান্না দে‘র এই বিখ্যাত গান এখন বাংলাদেশের পরিবারগুলোর জন্য বাস্তবতা। পরিবারগুলো পরিণত হয়েছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে। মা-বাবার কাছ থেকে ক্রমশ: দূরে চলে যাচ্ছে সন্তানেরা। এক পরিবারে থেকেও মা-বাবা ও সন্তানেরা দিন কাটাচ্ছেন যে যাঁর মতো করে। পারিবারিক বন্ধন আর আগের মতো দৃঢ় নেই। বড়ই ঠুনকো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button