প্রতিষ্ঠার ৭১ বছরে আওয়ামী লীগ
ঝিনাইদহের চোখঃ
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আজ গৌরবোজ্জ্বল ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। পুরান ঢাকার বিখ্যাত রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঐতিহ্যবাহী এ দলটির জন্মলাভের মধ্য দিয়েই রোপিত হয়েছিল বাঙালীর হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ।গৌরব ও ইতিহাসের নানা বাঁক পেরিয়ে আজ ৭২ বছরে পা দিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী আর বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগ।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নেতৃত্ব দেয় দলটি। আওয়ামী লীগ মানেই জাতির অর্জন, সমৃদ্ধি আর সম্ভাবনার স্বর্ণালি দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে জনপ্রিয়তায় ও দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে দলটি।
বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে কখনও বিরোধী দলে, কখনও সরকারে থেকে দেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছে মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ভাষা আন্দোলন, গণআন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ- স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের পাতার পরতে পরতে একটিই নাম আওয়ামী লীগ। সব পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের হার না মানা নেতৃত্ব। এই দলের নেতাকর্মীদের ত্যাগ তিতিক্ষা ও অঙ্গীকারদীপ্ত সংগ্রামী ভূমিকা ইতিহাসবিদিত।
পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে যে দলটির প্রতিষ্ঠা, সেই আওয়ামী লীগ আজ পেয়েছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সুরম্য ১০ তলা নিজস্ব কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যাদের বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। উপমহাদেশের রাজনীতিতে গত ৬ দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজেদের অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ। এদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ভূমিকা প্রত্যুজ্জল। ৪৭’র দেশ বিভাগ, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র যুগান্তকারী নির্বাচন আর ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা আন্দোলন সবখানেই সরব উপস্থিতি ছিল আওয়ামী লীগের।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তত্কালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কে এম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হক। তখন কারাবন্দি অবস্থায় তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে দলের দ্বিতীয় কাউন্সিলে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর ঢাকার সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলে দলের তৃতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক সংগঠনে পরিণত হয়। ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নতুন নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।
১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে দলের আন্তর্জাতিক নীতির প্রশ্নে সোহরাওয়ার্দী-ভাসানীর মতপার্থক্যের কারণে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ ভেঙ্গে যায়। ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। আর মূল দল আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান বহাল থাকেন। ১৯৬৬ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৭০ সালের কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত থাকেন। এই কমিটির মাধ্যমেই পরিচালিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দলের নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি স্থগিত করা হয়। ১৯৭৬ সালে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হলে আওয়ামী লীগকেও পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এক পর্যায়ে সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দলের মধ্যে সমস্যা দেখা দিলে নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি পদে বহাল থাকেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উতরাই ও প্রাসাদসম ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দলটি আজ এ দেশের গণমানুষের ভাব-ভাবনার ধারক-বাহকে পরিণত হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ভাবধারার আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে দলটি। জন্মের পর থেকে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী দলটি বেঁচে আছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর দলটির পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এ বছর সীমিত আকারে ও অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে সূর্যোদয়ের সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। ঢাকায় ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দলের শীর্ষ নেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদন। এ ছাড়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের স্বল্পসংখ্যক সদস্যের প্রতিনিধিদল টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করবেন।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতাদের উদ্দেশ্যে গণভবন থেকে বিকাল ৫টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভাষণ দেবেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বল্পসংখ্যক কেন্দ্রীয় নেতা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবস্থান করবেন অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন সুভাষ সিংহ রায়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে দলের গৌরবোজ্জ্বল ৭১ বছর পূর্তিতে গৃহীত কর্মসূচি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালনের জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল জেলা, উপজেলাসহ সকল স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।