ঝিনাইদহের চোখ-
বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যার চেস্টা করা হয়েছে। কোন সময় বঙ্গবন্ধুর খুনীরা, কোন সময় বিএনপির সন্ত্রাসীরা, কোন সময় জঙ্গি গোষ্ঠি,কোন সময় প্রশাসনের লোকজন তাকে হত্যার চেস্টা করেছে।
এ পর্যন্ত ১৯ বার তাকে হত্যার চেস্টা করা হয়। এরমধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে গ্রেনেডে হামলা ছিল নৃশংসতম
১৯৮১ সালের ১৭ই মে নির্বাসন থেকে দেশে ফিরেন শেখ হাসিনা। তখন থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে পঁচাত্তরের ঘাতকেরা। ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্পর্শ করতে না পারা বুলেট পিছু নেয়। ওই বছরই তার উপর হামলা চালায় ৭৫ এর খুনীদের দোসররা।
স্বৈরাচার এরশাদের আমলে ১৯৮৮ সালের ২৪শে জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে জনসভায় যাওয়ার পথে শেখ হাসিনার ট্রাক মিছিলে সশস্ত্র হামলা হয়। শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৯ জনসহ ২৪ জন।
১৯৮৯ সালের ১১ই আগস্ট রাতে ৭৫ এর খুনীদের দল ফ্রিডম পার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে হামলা গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড হামলা চালায়। এ ঘটনায় দুটি মামলা হলেও বিচার শেষ হয়নি।
১৯৯১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা গ্রিনরোডে ভোটের পরিস্থিতি দেখতে গেলে বিএনপির সন্ত্রাসী অহিদর নেতৃত্বে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা চালায়।
১৯৯৪ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর রেল স্টেশনে প্রবেশের মুখে শেখ হাসিনাকে বহনকারী রেলগাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়।
১৯৯৫ সালের ৭ই ডিসেম্বর রাসেল স্কয়ারের কাছে সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় তার উপর গুলিবর্ষণ করা হয় ।
১৯৯৬ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে বক্তৃতার পর শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস থেকে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করা হয়। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘পুলিশের সহায়তায় সন্ত্রাসী বাহিনী গুলি করতে করতে উপরে উঠলো। আপাকে তিন তলার এক বাথরুমের পাশে ছোট রুম। তাকে সেই ছোট রুমে নিয়ে রাখলাম। তাকে সেখানে রেখে আমরা সবাই সিঁড়ির মধ্যে যেয়ে শুয়ে ছিলাম, যেন তারা আমাদেরকে পাড়ায় না আসতে পারে।’
২০০০ সালের জুলাই মাসে হরকাতুল জিহাদ-হুজি সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয় শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে তারা তৎপরতা চালাতে পারবে না। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই বছর ২০ জুলাই তারা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যা জন্য ৭৬ কেজি ওজনের দুটি শক্তিশালী বোমা পুঁতে রাখে।
২০০১ সালের ৩০শে মে খুলনার রূপসা সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা থাকলে সেখানে হুজির জঙ্গিদের পুঁতে রাখা বোমা উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ ।
২০০১ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর সিলেটে জনসভাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই দুই জঙ্গির মৃত্যু হয়।
২০০২ এর ৪ঠা মার্চ যুবদলের খালিদ বিন হেদায়েতের নেতৃত্বে নওগাঁয় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা চালায়।
২০০২ সালে ৩০শে সেপ্টেম্বর বিএনপি-জামাত নেতা-কর্মীরা সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালায়।
২০০৪ সালের ২রা এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে গুলিবর্ষণ করে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা। এতোবার হামলার পরেও দমানো যায়নি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে।
তারপরই ঘটে ইতিহাসের সবচেয়ে নেক্কারজনক ঘটনা। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে রাস্ট্রীয় মদদে গ্রেনেড হামলা চালায় হুজির জঙ্গিরা। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানান,’১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, দেশটাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল, শেষ করতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে সেটা পারেনি। শেখ হাসিনার কারণে দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’
ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনের নির্মম মৃত্যু হয়। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা।
২০১১ সালের ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার লক্ষ্যে একটি সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো যা ব্যর্থ হয়ে যায়। এভাবেই বারবার শেখ হাসিনার প্রাণ নাশের চেস্টা হয়েছে। সবগুলো ঘটনার তদন্তও হয়নি।