কালীগঞ্জজানা-অজানাটপ লিড

রাতে ফোন পেলে তখনই এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তাদের বাড়ীতে চলে যাই–ঝিনাইদহের হাসান

 

শাহরিয়ার আলম সোহাগ, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহের চোখ-

সারা দেশের বেশিরভাগ মানুষ মহামারী করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত। ঘরে আক্রান্ত-মৃত্যু, বাইরে হাসপাতাল-ক্লিনিকে মৃত্যু– চারদিকে হাহাকার। কেউ আক্রান্ত হলে আপনজন দূরে চলে যান, দূরে ঢেলে দেন। এমনকি মৃত্যু হলে হাসপাতালে রেখেও পালিয়ে যান। কিন্তু সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন অ্যাম্বুলেন্সচালকরা।

এমনই একজন হাসানুজ্জামান হাসান। অ্যাম্বুলেন্সচালক। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীকে হাসপাতালে ও বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে মানবিকতার দৃষ্টান্ত রেখেছেন। বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বড় রায়গ্রামে।

বাহার আলীর ছেলে অ্যাম্বুলেন্সচালক হাসানুজ্জামান হাসান এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গেই রায়গ্রামে বসবাস করেন।

একান্ত আলাপচারিতায় করোনাকালের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বললেন হাসানুজ্জামান হাসান।

‘করোনাকালে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কাজে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন বাবা ও মা। তাদের অনুপ্রেরণায় আমি আরও বেশি সাহস পেয়েছি।’

সম্মুখসারির হাসান বলেন, ভাড়ায়চালিত একটি অ্যাম্বুলেন্স চালাই। অনেক সময় শুধু অসুস্থ জেনেই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে শুনি তিনি করোনা আক্রান্ত রোগী। কিন্তু মানবিকতার কারণে কারও অসুস্থতার খবর পেলেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।

তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী আনা-নেয়ার জন্য নিজের টাকায় পিপিই ও মাস্ক কিনে পরিধান করি এবং বাসায় ফেরার আগে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। বাসায় ফিরে নিজের সন্তানদের প্রথমে কাছে নেন না। নিজে পরিষ্কার হয়ে তার পর সন্তানদের কাছে যান।

হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ১০ জন করোনা আক্রান্ত এবং প্রায় ২০০ করোনা উপসর্গে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ও বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি।

‘করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কেউ মারা গেলে খুব খারাপ লাগত। অনেক সময় করোনা রোগী অ্যাম্বুলেন্সে নেয়ার সময় স্বজনরা থাকত না। গাড়ি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সঙ্গে কথা বলে সময় দিতাম।’

তিনি বলেন, রাতে অনেকে ফোন দিয়ে তাদের বাড়িতে যেতে বলেন। ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সেই বাড়িতে হাজির হই। এর পর সেই রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিই। করোনা রোগী বহন করায় পরিবার বা বন্ধুরা তেমন কিছু কখনই বলেননি। কিন্তু করোনা রোগী বহন করি বলে পরিচিত দোকানে মালামাল কিনতে গেলে বিক্রি করবেন না বলে অপারগতা প্রকাশ করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button