কালীগঞ্জটপ লিড

ঝিনাইদহের বৃদ্ধা গীতা দাস বেছে নিয়েছেন তার আপন ঠিকানা

ঝিনাইদহের চোখ-

জায়গাটি অন্যের, তবে ঘরটি নিজের। যতœ করে খড়ি-কাটি আর ব্যানারের কাপড় দিয়ে সাজিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে ঘর মালিক গীতা দাস (৬০) এর মুল্যবান সব মালামাল। একপাশে রয়েছে একটি মাটির চুলা, যেখানে তিনি রান্না করেন। খাওয়া শেষে রাত হলেই পাশে একটি টিনের চালার নিচে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে পড়েন। সব সময় মানুষ দেখলেই নিজেকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন, কথাও বলেন খুব কম।

স্থানীয়রা বলছেন, ঝিনাইদহের নলডাঙ্গা বাজারের দক্ষিণ প্রান্তে একটি রাইস মিলের সামনে এভাবে বসতি গড়ে তুলেছেন গীতা দাস। গত ৭ বছর তিনি এখানে থেকে সকলের সঙ্গে মিশে চলেন। সব ধরনের বুদ্ধি আছে তার, কখনও এলামেলো চলতে দেখা যায়নি। মানুষের সাহায্যই জীবন চলে তার। ছেলের সংসারে ফিরতে চান না তিনি। ছেলে-মেয়েরা মাঝে মধ্যে মাকে দেখতে আসেন। তাদের দাবি মায়ের মাথার সমস্যা দেখা দিয়েছে, তিনি বাড়ি যেতে চান না।

গীতা দাস ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের মৃত ঠাকুর দার এর স্ত্রী। তাদের দুইটি সন্তান রয়েছে। ছেলে নারায়ণ দাস (৪১) রাজমিস্ত্রিীর কাজ করেন। আর মেয়ে কল্পনা দাস (৪৫) এর বিয়ে দিয়েছেন সদর উপজেলার শ্রীমন্তপুর গ্রামে। নারায়ন দাসের স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। ৪ শতক জমির উপর তাদের টিনের চালার ঘর। এখানেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন নারায়ণ দাস।

নারায়ন দাস জানান, ৩৯ বছর হয়েছে তার বাবা মারা গেছেন। মা গীতা দাসই কঠোর পরিশ্রম করে তাদের বড় করে তুলেছেন। তাদের কোনো জায়গা জমি ছিল না। অন্যের জমিতে ঘর বেঁধে বসবাস করতেন। বর্তমানে ৪ শতক জমি কিনে সেখানে টিনের ঘর করে বাস করছেন। সংসার অভাব রয়েছে, তবে পূর্বের মতো না খেয়ে কাটাতে হয় না।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা বাজারের একাধিক বাসিন্দা জানান, আনুমানিক ৭ বছর পূর্বে এই বৃদ্ধা তাদের বাজারে বসতী গড়ে তুলেছেন। বাজারের দক্ষিণ প্রাপ্তে থাকা একটি রাইচ মিলের সামনের ফাঁকা অংশে তিনি খড়ি-কাটি দিয়ে ছোট ঘর বানিয়েছেন। যে ঘরের মধ্যে শোবার কোনো জায়গা নেই। আছে একটি চুলা, আর বৃদ্ধার কাপড় থেকে শুরু করে নানা মালামাল। স্থানীয়রা জানান, সারাদিন বাজারের দোকানগুলোতে মানুষের কাছে সাহায্য চান, বিকাল হলেই ঘরে ফিরে আসেন। এসে রান্না শুরু করেন। রাতে এই রান্না খাবার খেয়ে রাইচ মিলের চালার নিচে ঘুমিয়ে পড়েন। আর ঘরটির দরজা সুন্দর করে বন্ধ করে রাখেন। রাতের খাবার খেয়ে যেটুকু থাকে সেটুকুই সকালে খান। দুপুরে কোথায় খান সেটা ঠিক নেই। এভাবে তিনি বেঁচে আছেন।

রাইচ মিলের মালিক মাসুদ আলী জানান, বৃদ্ধা কথা কম বলেন। অনেকে তাকে পাগলী বলে জানলেও কখনও তাক পাগলামী করতে দেখা যায়নি। তার সবকিছুই ঠিক আছে, একজন যেভাবে সংসার গুছিয়ে রেখে চলেন সেভাবেই তিনি বেঁচে আছেন। তার সন্তানেরা মাঝে মধ্যে দেখা করতে আসেন। তারপরও কোথায় যেন একটা সমস্যা রয়ে গেছে। যেটা কেউ বুঝতে পারছেন না, বৃদ্ধাও কাউকে বুঝতে দেন না। তবে তার চিকিৎসা প্রয়োজন, দীর্ঘদিন এই অবস্থায় থাকায় শরীর শুকিয়ে গেছে। তার মাথার কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসা হলে সেটাও ভালো হবে।

বৃদ্ধার একমাত্র পুত্র নারায়ণ দাস জানান, ৭ বছর পূর্বে হঠাৎ করে তার মা এলোমেলো কথাবার্তা বলতে থাকেন। এ এসয় তিনি কবিরাজ দেখিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। অর্থের অভাবে ডাক্তারের কাছে নিতে পারেননি। এই অবস্থায় চলার পর একদিন তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বেশ কিছুদিন পর নলডাঙ্গা বাজারে আছে এমন খবর পেয়ে সেখানে দেখতে যান। মাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তিনি আসতে চান নি। তিনি দাবি করেন, সব সময় মায়ের খোজ তিনি রাখছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button