কালীগঞ্জ

জীবন সংগ্রামে জিততে চায় কালীগঞ্জের প্রতিবন্ধি যুবক অসিম

সাবজাল হোসেন, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-
ছোটবেলায় পাড়ার বন্ধুদের সাথে দৌড়াদৌড়ি,খেলাধুলা করে সময় কেটেছে। সে সময়ে স্কুলে যাওয়া আসা সব ছিল অন্য সহপাঠীদের মত। এভাবে প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে ৮ম শ্রেণী পাশের পর ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ি। অন্য ছেলেদের মত লেখাপড়া শিখে বড় মানুষ হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বাবা মায়ের অভাবের সংসারে ঠিক মত চিকিৎসা সেবা পাইনি। অসুস্থতায় এক পর্যায়ে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও নিজে অন্যের ঘাড়ের বোঝা হতে চাই না। তাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে ইলেকট্রনিক্্র যন্ত্র মেরামতের কাজ শিখছি। কিন্ত এখন রোদে গেলে মাথায় অসহ্য যন্ত্রনায় প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছি। থেমে যেতে বসেছে আমার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জীবনযুদ্ধ। কথাগুলো ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের জয়নগর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধি যুবক অসিম কুমার মজুমদারের। সে ওই গ্রামের রমানাথ মজুমদারের ছেলে।

অসিম জানায়, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। বড় ভাই অমিত মাঠে কাজ করে। আর বোন নির্মলার বিয়ে হয়ে গেছে।

সে জানায়, নিজে প্রতিবন্ধি হওয়ায় অন্য ছেলেদের মত আমার কাজ করার শারীরিক সক্ষমতা নেই। তাই বলে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবন কাটাতে চাইনি। ছোটবেলা থেকে আশা ছিল লেখাপড়া শিখে কর্মজীবনে গিয়ে প্রতিবন্ধিরা কারও জন্য বোঝা নয়। এরাও পারে সমাজে ভুমিকা রাখতে এটা প্রমান করবো। কিন্ত সেটা আর হয়ে উঠছেনা। কেননা দিন যত যাচ্ছে রোদে গেলেই অসুস্থ হয়ে পড়ছি। অভাব অনাটনের সংসারে পয়সার অভাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে পারছি না। কোন বাবা মায়ের কাছে সন্তান কখনও বোঝা হয় না। আমার ক্ষেত্রেও তাই। কিন্ত বাবা নিজেও একজন হাঁপানী রোগী হওয়ায় তেমন একটা কাজ করতে পারেন না। এখন বড় ভাই অমিতের রোজগারেই ৬ সদস্যের পরিবারের সকলের কোন রকমে ভরণ পোষন চলছে।

অসিমের বাবা রমানাথ মজুমদার জানান,তার ছেলে অসিম জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধি। এখন তার বয়স ২৭ বছর। কিন্ত সে অন্য শিশুদের মত শারীরিক ভাবে বেড়ে উঠেনি। তারপরও অসিম ছোটবেলায় ছিল চঞ্চল। ছিল অন্য শিশুদের মত স্বাভাবিক ও দুরন্ত। ৮ম শ্রেনী পাস করার পর সে ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। রোদে গেলেই শুরু হতো মাথা ব্যথা। নিজে গরীব মানুষ। মাঠে অল্প একটু চাষযোগ্য জমি আছে। এখান থেকে যে ফসল ঘরে আসে তা দিয়ে সংসার চলেনা। তিনি নিজেও একজন হাঁপানী রোগী। ফলে এখন তেমন একটা আর কাজ করতে পারেন না।এমন অনাটনের সংসারে ছেলের চিকিৎসার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। তবে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি অসিম। এখনও সে রোদে গেলে মাথা ব্যথায় কাতর হয়ে পড়ছে। এখন প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার দেখানো। তিনি বলেন,বাবা হয়ে সন্তানেেক অভাবের সংসারে চিকিৎসা করাতে পারছেন না এ কষ্ট সব সময় নিজেকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

তিনি আরও জানান,অসিমের অন্যদের মত শারীরিক যোগ্যতা না থাকলেও সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য চেষ্টা করে। এখন স্থানীয় কোলা বাজারের বিধান শর্মা নামের এক মিস্ত্রির দোকানে কাজ শিখছে। যেদিন একটু বেশি কাজ থাকে সেদিন কিছু পয়সা পায়।
ইলেকট্রনিক্্র মিস্ত্রি বিধান শর্মা জানান, অসিম তার দোকানে কাজ শিখছে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রতিদিন আসতে পারে না। তারপরও কাজ শেখার প্রতি তার প্রচন্ড আগ্রহ রয়েছে। মূলকথা টাকার প্রতি তার কোন লোভ নেই। টাকা দিতে গেলেও নিতে চায় না। সে শুধু কাজ শিখতে চায়। অভাব আছে কিন্ত টাকার প্রতি তার লোভ নেই। তারপরও দোকানের কাজ অনুপাতে এখন কিছু টাকা দেয়া হয়।

অসিমের গ্রামের বাসিন্দা স্বপন কুমার বিশ্বাস জানান, অসিম একটা ভদ্র ও অভাবী পরিবারের শারীরিক প্রতিবন্ধি সন্তান। শারীরিক অক্ষমতা থাকলেও সে কখনও বসে থাকে না। নিজের মত করে চলার জন্য সব সময় চেষ্টা করে। কিন্ত এখন শারীরিক অসুস্থতার কারনে জীবন সংগ্রামে পিছিয়ে পড়ছে ছেলেটি। তবে সে গরীব হলেও এলাকার মধ্যে সততার এক বিরাট দুষ্টান্ত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button