কালীগঞ্জ

স্বামী মৃত্যুর ৪ দিনের ব্যবধানে স্ত্রীও না ফেরার দেশে

সাবজাল হোসেন, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-
প্রবীন শিক্ষানুরাগী স্বামী আনোয়ারুল ইসলাম মন্টুর মৃত্যুর ৪ দিন পরে স্ত্রী আজিমুন্নেছা (৫৫)ও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। স্বামী জটিল নিউমোনিয়ায় এবং তার স্ত্রী দুরারোগ্য কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা দু’জনেই বেশ কিছুদিন ধরে ঢাকার কল্যাণপুর ইবনেসিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের মধ্যে স্বামী আনোয়ারুল ইসলাম মন্টু (৭৪) গত ২৪ জানুয়ারী মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৬ টায় মারা যান। তখনও তার স্ত্রী ওই হাসপাতালে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষনে ছিলেন। অবশেষে ৩০ জানুয়ারী শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় স্বামীর মৃত্যুর ৪ দিন পর ১৮ দিন আইসিইউতে থেকে স্ত্রী আজিমুন্নেছাও (৫৫) মারা গেলেন।

মরহুমের পরিবার মুঠোফোনে আজিমুন্নেসার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। মরহুম আনোয়ারুল ইসলাম মন্টু ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কাবিলপুর গ্রামের মৃত মোখলেস মিয়ার বড়পুত্র। তিনি কালীগঞ্জের প্রবীন উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। চাকুরী থেকে অবসরে যাওয়ার পর একজন শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক হিসেবে নিজ এলাকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবামুলক প্রতিষ্ঠানের ধারক ও বাহক ছিলেন।

মরহুম আনোয়ারুল ইসলাম মন্টুর ভাইপো মোস্তাফিজুর রহমান শাহেদ জানান, তার চাচা আনোয়ারুল ইসলাম মন্টু ও চাচী আজিমুন্নেসা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হলে তাদেরকে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা দ’ুজনেই সেখানে বিগত ৩ সপ্তাহের অধিক সময় ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের মধ্যে তার চাচা আগে ২৪ জানুয়ারী মারা যান। আর ৪ দিন পর মারা গেলেন তার চাচীও। তবে তাদের উভয়ইয়ের কোভিড ১৯’র রিপোর্ট নেগেটিভ ছিল বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

প্রকাশ থাকে যে,মরহুম আনোয়ারুল ইসলাম মন্টু স্থানীয় কোলাবাজার হাইস্কুল থেকে এস এস সি পাশের পর ঝিনাইদহ কেসি কলেজ থেকে এইচ,এস,সি পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স এম ডিগ্রি লাভ করে সরকারি বৃত্তি নিয়ে লন্ডনে উচ্চতর ডিগ্রী শেষ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি বেশ কিছুদিন স্থানীয় কোলাবাজার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়নবিদের পদে যোগ দেন। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে ৯ বছর আগে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। এরপর জন্মস্থানে ফিরে নিজ গ্রামে বাবার নামে মোকলেস আনোয়ার কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পারিবারিক জীবনে এ দম্পতির কোন সন্তানাদি নেই। এছাড়াও তিনি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কল্যানে কাজ করেছেন। এই প্রবীণ শিক্ষানুরাগীর জন্মস্থান ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর গ্রামে পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হয়েছে। আর স্ত্রী নিজের করে যাওয়া ওচিয়ত মোতাবেক মরহুমার বাবার বাড়ি নওগাঁতে দাফনের জন্য ঢাকা থেকে শনিবার দুপুরে রওয়া দেয়া হয়েছে। এদিকে স্বামী – স্ত্রীর দু’জনের মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button