জানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখাশৈলকুপা

স্নিগ্ধ সবুজ গ্রাম ঝিনাইদহের শৈলকুপার শ্রীরামপুর

রানা আহম্মেদ অভি, ঝিনাইদহের চোখ-
দখিনা বাতাসে পতপত করে উড়ছে লাল-নীল পতাকা। রঙ দিয়ে সাজানো রয়েছে বাঁশ-কাঠের সাঁকো। নীল আসমানে থোকায় থোকায় উড়ছে সাদা মেঘের ভেলা। হঠাৎ এই আবহ দেখলে মনে হবে প্রকৃতির যেন গায়ে হলুদের সাজে। চাঁদ রাতে সাঁকোর দিকে তাকালে বোঝা যায় ওইপাশটা যেতে যেতে স্বর্গে গেছে মিলে। বলছিলাম ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায় অবস্থিত শ্রীরামপুর গ্রামের কথা।

উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রামের নাম শ্রীরামপুর। পাশেই রয়েছে কুমার নদ। শস্য-শ্যামলে ভরপুর এক অঞ্চল। স্থানীয় ও পর্যটকরা প্রতিদিন বিকেলে ভেলায় করে নদে ঘুরে বেড়ায়। নদের উপরে সাঁকো, কুয়াসায় ঝাঁপসা নদ, ফল-ফুলের গাছ, সকাল বেলায় ভোরের পাখির ডাক, বিকেল হলে রাঙা গোধূলি গ্রামটিকে করে তুলেছে এক স্বর্গময় চিরশান্তির দ্বীপ।

বসন্তে বৃক্ষ দেয় বাতাস। নতুন রঙে পাতা আসে, পাখিরা গায় গান। শব্দদূষণের মতো বিন্দুমাত্র কোনো সমস্যাই নেই এখানে। সাঁকোর ওইপারে ফুল ঝরে বসন্তে আসে পাতা। সন্ধ্যার পর নিশ্চুপ সব। কুয়াসার চাদরে মুড়িয়ে আসে শীত। যেন সুন্দর মিষ্টি একটি সকাল। মৌমাছিরা আসে ফুলে ফুলে লিচু আমের ঘ্রাণে। সাঁকো যেন হারিয়ে যায় স্বর্গে যাওয়ার পথে।

সৌন্দর্যের প্রতীক এই ছোট্ট গ্রাম। এখানকার সম্পূর্ণ ভূমিই সমতল। বসতবাড়ি ও তার চারদিকে ফলজ গাছপালা। ছোট-বড় বিভিন্ন বাাঁশঝাড় সবটা ঘিরে। পাশের কুমার নদ অনেক কৃষকদের আয়ের মূল উৎস। তাদের জীবনযাপন নির্ভর এই নদের পাশে বেড়ে ওঠা চাষে। শিক্ষার দিক থেকেও অনেক এগিয়ে স্থানীয় যুবকরা।

যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকেও শ্রীরামপুর কিছুটা উন্নত। বেশিভাগ পঞ্চায়েতের রাস্তা প্রধান সড়কের সঙ্গে যুক্ত। এখানকার গুঁটিকয়েক বাদে প্রতিটি রাস্তাই পাকা ও প্রশস্ত। তাই আশেপাশের এলাকাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই সুন্দর। শিক্ষার্থী, কৃষক ও কর্মজীবী মানুষ প্রতিদিন এই গ্রামে চলাচল করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার জন্য বিভিন্ন অটো ও ভ্যানসেবা চালু আছে গ্রামের এপাশ থেকে ওপাশে।

গ্রামের বেশিভাগ মানুষ কৃষি কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাছাড়া উৎপন্ন শস্যের মধ্যে পান, ধান, পাট, সরিষা ইত্যাদি প্রধান। জমি দারুণ উর্বর হওয়ায় বিশেষ কোনো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয় না। এখানকার মানুষ খুবই পরিশ্রমী, তাই নদীর পাশের জমিগুলো কখনো ফেলে রাখা হয় না।

গ্রামের বাসিন্দা মজনু মিয়া। চাষাবাদ করেন। ক্ষেতে যেতে প্রতিদিন পায়ে হেঁটে সাঁকো পার হন। তিনি বলেন, ‘এই গ্রামের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে বেশি ধনী না হলেও মনের দিক থেকে ধনী। কারণ, প্রকৃতির সুন্দর রূপ এখানেই দেখা যায়। বাড়ি-ঘর পাকা না হলেও সাজানো গোছানো, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন।’

কলেজ পড়ুয়া ছাত্র সবুজ। সে গ্রামের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমাদের গ্রামের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে তরুণরা আসে। এসে স্থানীয়দের সঙ্গে বিকেলে নৌকা ভ্রমণ করে। চাইলে যে কেউ আসতে পারেন।’
গ্রামে রয়েছে উপজেলার বার বার প্রথম স্থান অর্জন করা বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্র, একটি প্রাথমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও একটি প্রতিবন্ধীদের স্কুল। তাছাড়া গ্রামের বাজারে সপ্তাহে তিন দিন হাট বসে। স্থানীয়রা এই হাটে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন।

‘শ্রীরামপুর’ জেলার মধ্যে একটি আদর্শ গ্রাম। উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। পাশের জেলায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় সবাই পড়ালেখার দিকে ব্যাপকভাবে অগ্রসর হচ্ছেন। অনেক ছেলেমেয়ে বাইরে গিয়ে লেখাপড়া করছেন।

রাইজিংবিডি.কম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button