কালীগঞ্জজানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখা

ঝিনাইদহে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নয় বন্ধুর জারবেরা চাষ

টিপু সুলতান, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-
শাহাদৎ, মহিদুল, শামিম, হাফিজ, মিটুল, আজিম, মোক্তার, জামাল, শামিমুর এরা ৯ বন্ধু। তাদের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও কর্মক্ষেত্রে যেন একই সুতোয় গাঁথা। এভাবে তারা চলছেন বিগত প্রায় ২০ বছর। সবাই তারা কৃষক পরিবারের সন্তান। পরস্পরের প্রতি আস্থা আর বিশ্বাস এতোটাই মজবুত যে, বিগত দুই যুগের অধিক সময় ধরে এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত ফুল কিনে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে ব্যবসা করছেন। এখন সবাই হয়েছেন আর্থিকভাবে সচ্ছল। তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেরাই চাষ করেছেন বিদেশি জাতের ব্যয়বহুল জারবেরা ফুল। তাদের ভাষ্য, দেশে এর আগে অনেকেই জারবেরা ফুলের চাষ করেছেন। কিন্তু তাদের ক্ষেতের জারবেরার রয়েছে ৮ রঙের এবং উন্নত জাতের ফুল। ফুলনগরী খ্যাত ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা এলাকায় তাদের বাড়ি।

গোপিনাথপুর গ্রামের মাঠে গেলে দূর থেকে নজরে আসে ৯ বন্ধুর ঐক্যের জারবেরার ক্ষেত। ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, বিদেশি জাতের এই ফুল লাল, সাদা, হলুদ ও গোলাপিসহ ৮টি বাহারি রঙের ধরে আছে। ফুলের কোনো গন্ধ নেই, দেখতে অপরূপ। প্রতিটি গাছে রয়েছে একাধিক ফুল। কোনটি ফুটন্ত. কোনটি অর্ধ ফুটন্ত আবার কোনটি সবেমাত্র কড়ি।

৯ বন্ধুর মধ্যে হাফিজুর রহমান জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ মাঠেই কৃষকেরা প্রায় ২০ বছর আগে থেকেই দেশি-বিদেশি জাতের ফুলের চাষ করে আসছেন। সারা দেশের ফুলের চাহিদা মেটাতে যশোরের গদখালীর পরেই ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ত্রিলোচানপুরের স্থান। গোলাপ রজনীগন্ধ্যা, গাঁদা, জারবেরা, সন্ধ্যা মালতি, শিউলিসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি জাতের ফুল-কি নেই এ মাঠে ?

এলাকা থেকে এসব ফুল কিনে আমরা ৯ বন্ধু এক সাথে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করতাম। যা লাভ হতো সবাই সমান ভাগ করে নিতাম। কারো টাকা কম বেশি হলেও হাসিমুখে মেনে নিতাম। বালিয়াডাঙ্গা, গোপিনাথপুর মাঠে দেড় বিঘা জমি দেড় লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়ে ব্যয়বহুল জারবেরার চাষ করেছি। ভারতের পুনে থেকে প্রতিটি ৭০ টাকা দরে চারা কিনে এনে লাগিয়ে পরিচর্যা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিটি গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। এ জাতের জারবেরা একবার রোপণ করলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালোভাবে ৩ বছর ফুল বিক্রি করা যাবে। বাজারে দাম ভালো থাকলে মোটা অংকের টাকা লাভ পাওয়া সম্ভব।

জারবেরা বিদেশি জাতের ফুল। ২০০৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ভারত থেকে টিস্যু কলামের উন্নত জাতের জারবেরার চারা চাষ শুরু হয়। এ ফুলের চাষ করতে অভিজ্ঞতাও একটি পুঁজি। জারবেরার ফুল একবার ক্ষেতে রোপণ করলে কমপক্ষে ৩ বছর ক্ষেত থেকে ফুল পাওয়া যায়। এ ফুলের স্টিক ক্ষেত থেকে তোলার পর কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ দিন সতেজ থাকে। একবার ফুল ধরা শুরু হলে সারা বছর ফুল ধরতে থাকে। গাছের কাণ্ড থেকে নতুন ডালপালা হয়ে নতুন কড়ি হয়। একটি গাছ জীবনচক্রে বছরে কমপক্ষে ৫৫ থেকে ৬০টি ফুল দেয়। দাম একেবারে কমে গেলেও প্রতিটি ফুল কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়। আর দাম বেশি হলে তো কথায় নেই।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হুমায়ন আহম্মেদ বললে, গত বছর ফুলের দাম কম পেয়ে এ বছর বেশ খানিকটা ফুলচাষ কমে গেছে। তাছাড়াও করোনাকালীন সময়ে ঢাকার অবস্থা খারাপ বিবেচনায় নিয়ে অনেকে ফুলচাষ করেননি। তারপরও এ বছর ২৫ হেক্টর জমিতে দেশি বিদেশি জাতের ফুলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বালিয়াডাঙ্গা বাজারের নিকটবর্তী একটি মাঠে ৯ বন্ধু মিলে জারবেরার চাষ করেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button