ঝিনাইদহে একটি ইউনিয়নে নার্সারি বিপ্লব/অপার সম্ভাবনার হাতছানি
মোমিনুর রহমান মন্টু, ঝিনাইদহের চোখ-
এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তর কৃষি ফার্ম দত্তনগর ফার্মের মধ্যে চলে যাওয়া পিচের রাস্তা ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এগিয়ে গেলেই ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা ৪নং স্বরুপর ইউনিয়ন। এটি একেবারে ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা ইউনিয়ন। যে দিকে তাকায় শুধু চারা গাছের নার্সারি আর ফলজ গাছের বাগান। পুরো ইউনিয়ন জুড়েই গড়ে উঠেছে এমন নার্সারি। ১৩টি গ্রাম নিয়ে স্বরুপপুর ইউনিয়ন। এরমধ্যে আটটি গ্রাম প্রায় সবটুকু জুড়ে রয়েছে নার্সারি আর ফলজ বাগান, বাকি পাঁচ গ্রামে আংশিক।
ইউনিয়নে মোট আবাদযোগ্য জমি ২৭৭০ হেক্টর। এরমধ্যে শুধু নার্সারি রয়েছে ৪৩ হেক্টর জমিতে। বাকি দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে ফলজ গাছ। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং জাতের কমলা, মাল্টা ও বারি-১১ সহ বিভিন্ন জাতের আম ।
কথা হয় নার্সারি ব্যবসায়ী রফিকুলের সাথে। রফিকুল জানায়, এক সময় না খেয়ে দিন কাটিয়েছি। এখন আমার নার্সারিতে প্রতিদিন ৩০ জন শ্রমিক কাজ করে। বছরের বারো মাসই যাদের কর্মসংস্থান আমার নার্সারিতে। দেশের আমিই প্রথম সমতল ভূমিতে দার্জিলিং জাতের কমলা চাষে করে সফল হয়েছি। এখন আমার কাছ থেকে চারা নিয়ে দেশের শত শত কৃষক দার্জিলিং জাতের এই কমলা চাষ করছে।
একই ইউনিয়নের হানিফপুর গ্রামের ভাই ভাই নার্সারির মালিক ইমরোজ হোসেন জানান, ১৯৯২ সালে আমরা তিন বন্ধু মিলে প্রথম নার্সারি গড়ে তুলি। বর্তমানে ছয় বিঘা জমিতে নার্সারিসহ ১৫ বিঘা জমিতে ফলজ গাছ রয়েছে। আমার নার্সারিতে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে।
নার্সারি শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আগে আমি পরের জমিতে শ্রমিকের কাজ করতাম। তখন বেশির ভাগ সময়ই কাজ হত না। ফলে সংবার চালাতে হিমশিম খেতাম। এখন নার্সারিতে কাজ করি। প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে মাসে ১২ হাজার টাকা মজুরী। দির্ঘদিন এভাবেই নার্সারিতে কাজ করেই আমার সংসার চলছে।
এভাবে তার মত শত শ্রমিক নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
স্বরুপপুর ইউনিয়ন উপ-সহকারী কর্মকর্তা রবিউল কবির পল্লব জানান, সত্যি কথা বলতে কি নার্সারির কাজে আমাদের তেমন কোন সহযোগীতা প্রয়োজন হয় না। তবে প্রযুক্তিগত কোন প্রয়োজন হলে আমরা তাদের সহযোগীতা করি।
ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা স্বরুপপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, আমার ইউনিয়ন জুড়েই নার্সারি ও ফলজ বাগান গড়ে উঠেছে। এ ব্যবসায় তারা ভালো প্রোফিট করছে। এক সময় এ এলাকার মানুষ অভাব অনাটনের সাথে যুদ্ধ করে দিনাতিপাত করেছে। এখন তাদের সে অভাব পালিয়েছে।
মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাসান আলী উপজেলার ইউনিয়ন জুড়ে নার্সারি ও ফলের চাষ হয় উল্লেখ করে জানান, তারা চারা উৎপাদন ও ফলজ বাগান করে লাভবান হচ্ছে। ফলে নার্সারিতে এলাকার কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। আমরা তাদের জৈব সার উৎপাদন, বালাইনাশক ও ফল উৎপাদনের যাবতীয় প্রযুক্তিগত সহযোগীতা করে থাকি।