স্মরণ- ঝিনাইদহের কৃতি সন্তান ও দেশবরেণ্য কবি গোলাম মোস্তফা
ড. এম এ সবুর : গোলাম মোস্তফার সাহিত্যকর্ম গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন
ঝিনাইদহের চোখ-
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গোলাম মোস্তফা এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। বাঙালি মুসলমানদের জাতীয় জাগরণে তিনি বিরাট অবদান রেখেছেন। স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত রচনাই তার সাহিত্যকর্মের মূল উদ্দেশ্য।
১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক বাংলা ১৩০২ সনের ৭ পৌষ ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে কবি গোলাম মোস্তফা জন্মলাভ করেন।
১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক, ১৯১৬ আইএ ও ১৯১৮-তে বিএ পাস করেন এবং ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজ থেকে বিটি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ব্যারাকপুর সরকারি হাইস্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে কলকাতার হেয়ার স্কুল, কলকাতা মাদ্রাসা ও বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট ডেমনস্ট্রেশন হাইস্কুলে সাধারণ শিক্ষক এবং বাঁকুড়া ও ফরিদপুর জেলা স্কুলে হেডমাস্টার পদে চাকরি করেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ফরিদপুর জেলা স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদে থাকাকালে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন।
বিশ শতকের এ সাহিত্যিক ছিলেন একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, জীবনীকার, অনুবাদক, শিশুতোষ লেখক, গীতিকার, সুরকারসহ বহু প্রতিভার অধিকারী। তবে তার সাহিত্যকর্মের মূল উপজীব্য ইসলামী আদর্শ ও ঐতিহ্য।
অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে সাপ্তাহিক মোহাম্মদীতে ‘আদ্রিয়ানোপল উদ্ধার’ শিরোনামের কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্য জগতে প্রবেশ। দীর্ঘ ৫০ বছর সাহিত্যকর্ম অব্যাহত রেখে বাংলা সাহিত্যভাণ্ডারকে করেছেন সমৃদ্ধ।
তার লিখিত সাহিত্যকর্মের মধ্যে সাতটি মৌলিক কাব্যগ্রন্থ, চারটি অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ, দু’টি উপন্যাস গ্রন্থ, দু’টি গানের সঙ্কলন, চারটি রাজনীতিবিষয়ক গ্রন্থ, দু’টি ধর্মবিষয়ক গ্রন্থ, একটি আল কুরআনের অনুবাদ, একটি ইতিহাস গ্রন্থ, দু’টি প্রবন্ধ সঙ্কলন পাওয়া গেছে। আলোকমালা (সিরিজ), আলোকমঞ্জুরী (সিরিজ), মঞ্জুলেখা, মণিমুকুর, খোকা-খুকীর বই, বাংলা ব্যাকরণ নামে তার বেশ কয়েকটি শিশু পাঠ্যপুস্তকও আছে। বিশ্বনবী গোলাম মোস্তফার অনন্য কীর্তি।
বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় গ্রন্থগুলোর অন্যতম এ অনন্য গ্রন্থখানি। বাংলা ভাষায় রচিত হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জীবনী গ্রন্থগুলোর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এটি। সাহিত্যকর্মে অনন্য অবদানের জন্য ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘প্রেসিডেন্ট পদক’ এবং ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’ উপাধি লাভ করেন।
এ মহান ও কীর্তিমান সাহিত্যসাধক ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।