ঝিনাইদহে নতুন সম্ভাবনা/ব্যতিক্রমী কুল ফুল থেকে মধু উৎপাদন
ঝিনাইদহের চোখ-
সাধারনত সরিষা ফুল কিংবা লিচু ফুলের সময় খামারীরা মৌমাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। ফলে বছরের অন্যান্য সময় অনেকটা অলস সময় কাটে তাদের। এ সময় মাছি বাচিয়ে রাখতে প্রয়োজন হয় বাড়তি খাবারের, আসে না কোন উৎপাদন। এতে লোকসানে পড়েন মৌ খামারীরা। কিন্তু সে লোকসান কাটিয়ে বিকল্প মাধ্যম কুল ফুল থেকে মধু সংগ্রহ শুরু হয়েছে ঝিনাইদহের মহেশপুরে।
মহেশপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর প্রথমবারের মত তিনজন খামারীর ৫৫৫ মৌ বাক্স থেকে তিন হাজার কেজি মধু সংগ্রহ করেছিলেন। এ বছর ১০-১৫ জন খামারীর ৯৬০ বাক্স থেকে পাঁচ হাজার কেজি মধূ সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এতে একদিকে বাড়ছে কুলের উৎপাদন অন্যদিকে মধু সংগ্রহ করে বাড়তি অর্থ আয় হচ্ছে।
ঝিনাইদহের ভারতীয় সীমান্ত এলাকা মহেশপুরের মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়নের জুকাকালহুদা ও ভাটপাড়া গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন কুলের আবাদ। কুল বাগানে এখন ফুল এসেছে। এসব জমির পাশেই মৌ চাষের বাক্স বসিয়েছেন মৌচাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে কুল ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে কুলের উৎপাদন বাড়ছে, অপর দিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে কুলচাষি ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। রাজবাড়ী, মাদারীপুর, নাটোর ও রংপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌচাষিরা এসেছেন। সাধারনত সকালে এবং বিকালের দিকে মাছি গুলো ছুটে বেড়ায় ফুলে ফুলে। সেখান থেকে মধু নিয়ে ফেরেন কলোনীতে। এই মৌসুমে গড়ে ২৫ দিনে তিন বার মধু সংগ্রহ করা যায়। এতে খরচের তুলনায় লাভও হয় দ্বিগুন।
নাটোর গুরুদাশপুর থেকে আসা শ্রী শুভ কুমার দাস জানালেন, ১৬০ মৌ বাক্স নিয়ে এসেছে। এসব বাক্স থেকে মাসে তিন মন মধু সংগ্রহ করা যায়। প্রতি কেজি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করে থাকি। ১৯৯৮ সালে ১২ বক্স নিয়ে তাদের কাজ শুরু করে বর্তমানে ১৬০ হয়েছে। এখন তার কাছে যে বক্স আছে তার মূল্য প্রায় আট লাখ টাকা।
মাদারীপুর থেকে আশা মৌচাষি খলিলুর রহমান বলেন, কুল থেকে সংগ্রহ করা যায় খুব ভালো মানের মধূ। তিনি ১৬৫ টি মৌমাছি নিয়ে এসেছিলেন তার মধ্যে ২৫% মারা গেছে। বাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করেন তাহলে কুল বাগানে বিষ প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকবেন কুষক এবং আমাদের এই মাছি যদি বাগানে থাকে তাহলে বিষ প্রয়োগ না করলেও চলবে। এসব মাছি পরাগায়ন ঘটাবে তখন বিভিন্ন কীটপতঙ্গ নষ্ট হয়ে যাবে।
অপর এর মৌচাষি মতিয়ার রহমান বলেন, তার ৪০ কলোনির মধ্যে ৩০টি কলোনি থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪০ কেজি মধু পেয়েছেন। আর এই মধু বাজারজাত করছেন মণ প্রতি ২২ হাজার টাকা করে। তিনি আরো বলেন এখানে আসা-যাওয়ার খরচ হবে ৮ হাজার টাকা। আর কয়েক দিনে ১২শ’ টাকার মধু সংগ্রহ করেছেন। তিনি আশা করছেন সামনে আরও মধু সংগ্রহ করতে পারবেন।
ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, এই মৌসুমে মধু উৎপাদন হয় না। ফলে খামারীদের লোকসান গুনতে হয়। তাই এই লোকসানকে পিছনে ফেলে উৎপাদন বাড়িয়ে চাষীদের লাভবান করতে কুল গাছের ফুল থেকে মধু সংগ্রহে চাষীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। মৌমাছি কুল ফুলে উড়ে উড়ে বসে মধু সংগ্রহ করে। এতে ফুলে সহজে পরাগায়ন ঘটে। তাই কুল খেতের পাশে মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করলে কুলের ফলন বাড়ে। পাশাপাশি মৌচাষিরা মধু আহরণ করে লাভবান হন। তিনি আরো বলেন মৌচাষিদের মধু আহরণের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মধু সংরক্ষণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সংরক্ষণ করতে পারলে মৌচাষিরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন।