কোটচাঁদপুরক্যাম্পাস

ঝিনাইদহ ইউনুচ ৪৭ বছর পর জালালপুর মাঃ বিঃ থেকে শেষ ছুটি নিলেন

ঝিনাইদহের চোখ-
বিদ্যালয়টি তখন বেড়ার ঘর, চাকুরী শুরু করলেন ইউনুচ আলী। পাঁকা করার সময় মাথায় করে ইটও টানলেন। ৪৭ বছর ঘন্টা পিটিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির। মঙ্গলবার স্কুল জীবনের শেষ ঘন্টাটি বাঁজিয়ে বিদায় নিলেন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী ইউনুস আলী (৬০)।

বিদায় বেলাতে অঝোরে চোখের পানি ফেলে বললেন, জীবনের সব স্মৃতিই এই বিদ্যালয়কে ঘিরে। বিদ্যালয়কে ভালোবেসে সিমানা প্রাচীরের সঙ্গে জমি কিনে বাড়ি করেছেন। বিদ্যালয়কে এতোটা ভালো বেসে দায়িত্ব পালন করেছেন, কখনও একটা কারণ দর্শানো নোটিশ পর্যন্ত তাকে দেওয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছিল তার অভিভাবক আর শিক্ষার্থীরা ছিল সন্তান। আজ সব ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। বাকি জীবনটা কিভাবে কাটবে সেটা নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন ইউনুচ আলী।

প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের একটি গ্রাম জালালপুর। এই গ্রামের শিক্ষানুরাগী মানুষগুলো ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যার নাম জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সেই সময়ে পাশ^বর্তী মাধ্যমিক স্কুলগুলো ছিল অনেক দূরে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি তখন ছিল বেড়ার ঘরে। পরে পাঁকা ঘর তৈরী করেছে। বিদ্যালয়টি ১৯৮৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর এমপিও ভুক্তি হয়। আজ বিদ্যালয়টি নতুন নতুন ভবন রয়েছে, ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারি চাকুরী করছেন।

বিদ্যালয়ের দপ্তরী ইউসুচ আলী ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার শাখারীদহ গ্রামের মৃত ইয়ার আলী মন্ডল এর পুত্র। তার স্ত্রী, তিন মেয়ে এক ছেলে রয়েছে। ইউনুচ আলী জানান, জালালপুর গ্রামে তার মামা বাড়ি। তার বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর তখন মামা নূর আলী মন্ডল ডেকে পাঠান। মামা বাড়িতে আসার পর মামা জালালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী হিসেবে চাকুরীতে ঢুকিয়ে দেন। সেই থেকে এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন। ইউনুচ আলী আরো জানান, তিনি যখন চাকুরী প্রবেশ করেন তখন বিদ্যালয়টি ছিল বেড়ার ঘরের। ১৯৮০ সালের পর এখানে পাঁকা ঘর নির্মান শুরু করেন। সেই সময়ে তিনি নির্মান কাজ দেখাশুনা করতেন। নিজেও মাথায় করে ইট টেনেছেন। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি নিজের করে নিয়েছেন। ইউনুচ আরো জানান, তার বাড়ি ছিল অন্য একটি উপজেলায়। এখানে এসে মামার বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু স্কুলকে ভালোবেসে স্কুলের জমির সঙ্গেই জমি কিনে বাড়ি করেছেন। রাত-দিন প্রতিষ্ঠানটি আগলে রেখেছিলেন।

তিনি আরো জানান, এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেই ৩০ শতক জমি কিনে সেখানে ফ্লাট বাড়ি করেছেন। মাঠে ৩ বিঘা চাষযোগ্য জমি কিনেছেন। এছাড়া ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। বড় মেয়ে মেহের নিগারকে বিয়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় মেয়ে সুরাইয়া ইয়াসমিন অনার্স পড়ছে। ছেলে মামুনুর রশিদ কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সবার ছোট মেয়ে ইভা খাতুন এই স্কুলেই ৮ম শ্রেণীতে পড়ছে। তার কষ্ট প্রাণের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে কোয়ায় যাবেন, বাকি সময়টা কিভাবে কাটবে। তিনি প্রথম চাকুরীতে যোগদানের পর প্রতিষ্ঠান ৩০ টাকা করে দিতেন, সরকার থেকে পেতেন ৫০ টাকা। প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত হবার পর পেতেন ১২০ টাকা। বর্তমানে ১০,৩৫০/= টাকা বেতন পেয়ে তিনি অবসরে গেলেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাঃ আক্তার জাহান জানান, তিনি অত্যান্ত হাশি-খুশির একটি মানুষ ছিলেন। সকল শিক্ষকের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। তাছাড়া তিনিই এই প্রতিষ্ঠানে সবচে বেশি চাকুরি করেছন, যে কারনে বিদ্যালয়ের সবকিছুই তার যানা ছিল। বিপদ-আপদে তার তুলনা ছিল না। প্রধান শিক্ষক আরো জানান, শেষ দিনে তিনি শেষ ঘন্টাটি বাঁজিয়েছেন। পাশাপাশি তারা ফুল ও কিছু উপহার সামগ্রী দিয়ে তাকে বিদায় জানিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button