ঝিনাইদহের চোখ-
ভারতের সঙ্গে যশোরের চৌগাছার সীমান্ত রয়েছে প্রায় ২৫ কিলোমিটার। দীর্ঘ এই সীমান্ত মানব পাচারের জন্য নিরাপদ পথে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এ সীমান্ত দিয়ে আগে অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগে আটকের ঘটনা ঘটলেও গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ছয় মাসে চারটি মানব পাচারের মামলা হয়েছে।
সর্বশেষ গত শনিবার চার নারীকে উদ্ধার করেছে র্যাব। তাঁদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা করা হয়েছে আটজনের বিরুদ্ধে।
মামলা তদন্তের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, ঝিনাইদহের মহেশপুরের মানব পাচারকারীরাই ভারতে অবৈধভাবে মানুষ পাঠাতে চৌগাছার সীমান্ত পথ ব্যবহার করছেন। এ ক্ষেত্রে চৌগাছার কয়েকজন অসাধু ব্যক্তিকে তাঁরা ব্যবহার করছেন।
চৌগাছা থানার পুলিশ তথ্য মতে, গত বছরের জুলাইয়ে চৌগাছা থানার ইতিহাসে প্রথম কোনো মানব পাচার মামলা হয়। এরপর একে একে আরও তিনটি মানব পাচারের ঘটনায় মামলা করে পুলিশ। ইতিমধ্যে তিন মামলার অভিযোগপত্রও আদালতে জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
সর্বশেষ গত শনিবার দুপুরে চৌগাছা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের জন্য জড়ো করা চার নারীকে উদ্ধার করে র্যাব-৬। তাঁদের দুজন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, একজন ধামরাই এবং একজন শরিয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা।
এসব নারীকে আন্দুলিয়া সীমন্ত দিয়ে পাচারের চেষ্টার অভিযোগে পাচারকারী চক্রের তিন সদস্য আকবর আলী (৫০), তাঁর স্ত্রী কোহিনুর বেগম (৪৫) ও ছেলে বাবুল হোসেনকে (২৬) আটক করা হয়। তাঁরা শহরের পাঁচনমনা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের বিরুদ্ধে মানব পাচার মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় আটক তিনজনসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে।
এর আগে গত ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার মাশিলা সীমান্তের গদাধরপুর বাঁওড়ে ভাসমান অবস্থায় রফিকুল ইসলাম জনি (৫৫) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়। অবৈধপথে ভারতে নিজের মায়ের কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিলেন বলে লাশ উদ্ধারের পর স্বজনেরা থানা পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।
গত ২০ আগস্ট উপজেলার পাঁচপীরতলা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা কুলিয়া গ্রামের আব্বাস আলীর বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁর বাড়িতে এনে আটকে রাখা নারী, শিশুসহ ১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় চৌগাছা থানায় মানব পাচার দমন আইনে মামলা করা হয়। চৌগাছা থানায় মানব পাচারের এটি তৃতীয় মামলা। এ ঘটনায় পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
চৌগাছা থানায় মানব পাচারের দ্বিতীয় মামলাটি হয় ৯ আগস্ট ভারতে পাচারের জন্য দুটি বাড়িতে আটকে রাখা ৭ জনকে উদ্ধারের ঘটনায়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওই দিন উদ্ধার করা ব্যক্তিদের বাগেরহাটের চিতলমারী থেকে এনে জড়ো করা হয়েছিল ভারতে পাচারের জন্য।
এ ঘটনায় চৌগাছায় থানার এসআই এনামুল হক বাদী হয়ে ইউনুচ ও সাদ্দামসহ অজ্ঞাত কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানব পাচার দমন আইনে মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এনামুল হক।
এর আগে গত বছর ১০ জুলাই উপজেলার বড় কাবিলপুর ও ভারতের বয়রা সীমান্তের কপোতাক্ষ নদ থেকে ঝিকরগাছার শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের এক কিশোরের লাশ উদ্ধার হয়।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা সেসময় পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান ওই কিশোর মাদক পাচারকারীদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। মানব পাচারের অভিযোগ এ ঘটনায় প্রথম কোনো মামলা হয় চৌগাছা থানায়।
সীমান্তে বসবাস করা অনেকে বলছেন, দালালেরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোক এনে সীমান্তের কয়েকটি বাড়িতে আটকে রাখে। পরে সুবিধা বুঝে তাদের পাচার করে দেয়। এ ক্ষেত্রে উপজেলার কাবিলপুর, মাশিলা, হিজলী, আড়সিংড়ি পুকুরিয়া, আন্দুলিয়া ও দৌলতপুর সীমান্ত বেশি ব্যবহার করা হয়।
চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘মানবপাচারের বিষয়ে আমরা শূন্য সহনশীল নীতি নিয়েছি। গত বছরের জুলাই মাসে মানব পাচারের প্রথম মামলা করা হয়।’
ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘আমরা মামলা তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছি, প্রতিটি ঘটনায় ঝিনাইদহের মহেশপুরের চিহ্নিত মানবপাচারকারীরা জড়িত।’