ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

ঝিনাইদহে বাড়ছে শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ড

ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহে বৈদ্যুতিক তারের কারণে একের পর এক ঘটেই চলেছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। শহরের বিভিন্ন স্থানে মিটার ও ট্রান্সফরমারে অপরিকল্পিতভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তার থেকে অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাসিন্দাদের মধ্যে।

ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে জেলা শহরের পৌর এলাকায় বৈদ্যুতিক তারে ও ট্রান্সফরমারে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ২৬টি এবং জেলার ছয় উপজেলায় বৈদ্যুতিক তারের সমস্যা জনিত কারণে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ৯৬টি।

২০১৯ সালের বর্তমান সময় পর্যন্ত শহরের পৌর এলাকায় বৈদ্যুতিক তারে ও ট্রান্সফরমারে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ৯টি এবং জেলার ছয় উপজেলায় বিদ্যুতের কারণে আগুনের ঘটনা ঘটেছে ২৬টি।

সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ মার্চ ঝিনাইদহ পাওয়ার হাউজে বৈদ্যুতিক কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ততক্ষণে পুড়ে যায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের প্রায় কোটি টাকার সার্কিট ব্রেকার ও মালামাল।

চলতি মাসের ১ এপ্রিল শহরের শিল্পকলা অ্যাকাডেমির সামনে ট্রান্সফরমারে, ২ তারিখে পাগলানাকাই এলাকায়, ৭ তারিখে শহরের মডার্ন মোড়ে বৈদ্যুতিক তার থেকে গাছে আগুনের ঘটনা ঘটে। ১১ তারিখ রাতে শহরের সোনালী পাড়ায় বৈদ্যুতিক তার থেকে শর্ট সার্কিটে আগুন লেগে তিনটি ঘর পুড়ে যায় এবং সর্বশেষ ১৬ এপ্রিল তারিখে পুনরায় ঝিনাইদহ পাওয়ার হাউজের ৩৩/১১ কেভি সাব স্টেশনের ট্রান্সফরমারে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে।

এভাবে ক্রমশই অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে বিদ্যুতের সংযোগ তার, মিটার ও ট্রান্সফরমার এবং বাসা বাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। শহরের সব থেকে আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে গীতাঞ্জলী সড়কের বিদ্যুতের পিলার। পাশাপাশি কয়েকটি পিলার থাকলেও এখানে একটি পিলার থেকে কয়েকশত অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে, তার রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে।

শহরের মডার্ন মোড় এলাকার কয়েক জন সাধারণ মানুষ জানান, আমরা চায়ের দোকানে বসে ছিলাম। হঠাৎ করেই দেখি তারের আগুন থেকে গাছে আগুন লেগে যায়। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

জেলা শহরের গীতাঞ্জলী সড়কের ব্যবসায়ী ও জুয়েলারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাধন সরকার দৈনিক অধিকারকে জানান, এখানে পিলার থেকে শতশত সংযোগ দেওয়া হয়েছে। একটু বাতাস হলেই মনে হয় আগুন ধরে যাবে। এখান থেকে যদি তারগুলো ভাগ করে বিভিন্ন পিলার থেকে সংযোগ দেওয়া হতো তাহলে আগুনের ঝুঁকি থাকত না। আমরা সকল ব্যবসায়ী মিলে বিদ্যুৎ বিভাগকে (ওজোপাডিকো) বারবার জানালেও তারা কোনো সমাধান দিচ্ছেন না।

ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যুতের সাব স্টেশন ও সংযোগ স্থলে অপরিকল্পিত তারে নানা কারণে আগুন লাগছে। যেমন পাখির বাসা তেমনি সংযোগ স্থলে স্পার্কিং থেকে আগুন লাগছে। বিদ্যুৎ বিভাগ নিয়মিত মেইনটেনেন্স করছে না বলেই আগুনের সংখ্যা বাড়ছে, তারগুলো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। তারা এ দিকে নজর দিলে হয়তো অনেকাংশেই আগুন কমানো যেত।

ঝিনাইদহ বিদ্যুতের বিক্রয়-বিতরণ বিভাগের (ওজোপাডিকো) দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী পরিতোষ চন্দ্র সরকার বলেন, এসব তার মেইনটেন্সে করা তাদের দায়িত্ব না। আপনারা যেটা পারেন লেখেন। এ বিষয়ে কথা বলার সময় নেই। এরপর দ্রুতই অফিস থেকে গাড়িতে বেরিয়ে যান তিনি।

জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ দায় এড়াতে পারেন না। অভিযোগ এসেছে ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ কাজ করছে না। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অগ্নিঝুঁকি রোধে বিদ্যুৎ বিভাগকে জরুরি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে অতিসত্বর ব্যবস্থা নিতে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button