কালীগঞ্জ

কালীগঞ্জে আদালতের রায় উপেক্ষিত/বসত বাড়ির মধ্যে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ

ঝিনাইদহের চোখ-

স্বামী মারা গেছে প্রায় ১৫ বছর আগে। দুই ছেলে চাকরির কারণে বাড়িতে থাকে না। দুই বউমা নিয়ে বাড়িতে থাকেন তিনি। গ্রামের কতিপয় প্রভাবশালীরা আদালতের রায় উপেক্ষা করে জোরপূর্বক বসত বাড়ির উঠানের মধ্য দিয়ে রাস্তা তৈরি করছেন। রাস্তা তৈরিতে বাঁধা দিলে মারপিটও করা হয়েছে পরিবারের সদস্যদের। এমনই অভিযোগ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার তত্ত¡ীপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের।

জানা গেছে, তত্ত্বীপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহিম ও মৃত শহিদুল ইসলামের সন্তানেরা বসত বাড়ির উঠানে ঘর নির্মাণ শুরু করেন। কিন্তু ওই গ্রামের আতিয়ার রহমান দাবি করেন এটি ২০০ বছরের পুরাতন রাস্তা। বাড়ির মধ্য দিয়ে কয়েক ঘর মানুষ যাতায়াত করে। আতিয়ার রহমান ঘর নির্মাণ বন্ধে নিষেধাজ্ঞার জন্য ঝিনাইদহ আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করেন। যার নম্বর কালীগঞ্জ পিটিশন নম্বর-৭৯৫/২০২১। এরপর এ ঘটনায় কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী ভ‚মি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। এ নিয়ে গত ১০ মার্চ ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা সেলিম রায় প্রদান করেন। রায়ে উল্লেখ করা হয় ১৪৩৮/১৪৩৯ দাগের দক্ষিণ পাশে কোন সরকারি রাস্তা নাই। এটি মৃত আব্দুর রহিম ও মৃত শহিদুল ইসলামের সন্তানদের স্বত্ব। ফলে উক্ত জমিতে রাস্তা নির্মাণের কোন সুযোগ নেই।

সরেজমিন শনিবার সকালে তত্ত্বীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুটি বাড়ির মধ্যে দিয়ে মাটি ফেলে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এক পাশে টিউবওয়েল, রান্নাঘর আর অন্যপাশে বসতবাড়ি।

কালীগঞ্জ উপজেলার তত্তি¡পুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, তারা ইট-বালি দিয়ে তাদের জমিতে ঘর নির্মাণ করছিলেন। তাদের একটি গোয়াল ভাংচুর করা হয়েছে। হঠাৎ গ্রামের কয়েকজন বাঁধা দেয়। এ নিয়ে আদালতে মামলাও করেন। কিন্তু আদালতের রায় তাদের পক্ষে যায়। এরপরও শুক্রবার জোর পূর্বক তাদের জমিতে মাটি ফেলে রাস্তা নির্মাণ করার চেষ্টা করে। রাস্তা নির্মানে বাঁধা দিয়ে গ্রামের বলরাম, আতিয়ার, কামাল, শাহাদৎসহ কয়েকজন তাকে ও তার মেয়ে শাহানাজকে মারধর করেন।

আব্দুর রহিমের মেয়ে শাহনাজ পারভীন জানান, তিনি শশুর বাড়িতে ছিলেন। বাড়ির মধ্যে দিয়ে রাস্তা তৈরির খবর শুনে শুক্রবার রাতে তিনি বাবার বাড়িতে আসেন। রাস্তা তৈরিতে বাঁধা দিলে গ্রামের বলরাম ও তার স্ত্রীসহ কয়েকজন তাকেও মারধর করেন। আমাদের জমিতে ঘর নির্মাণ করছি কিন্তু গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভেঙে দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা তৈরি করতে চান।

মৃত শহিদুল ইসলামের স্ত্রী রোকেয়া বেগম জানান, তার বসত বাড়ির উঠানের মধ্যে দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তা নির্মাণে বাঁধা দিলে তাকেও মারধর করা হয়।

তত্ত্বীপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক বলরাম বিশ্বাস মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, আমাদের কাছ থেকেই জমি কিনেছে মৃত আব্দুর রহিম ও শহিদুল ইসলামের সন্তানেরা। তাদের রেজিস্ট্রি করে দেওয়া। মানুষের যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ওই গ্রামের আতিয়ার রহমানের বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে ফোন দিলে রিসিভ করেন তার স্ত্রী। তিনি বাড়িতে নেই বলে জানান।

এ ব্যাপারে ৮নং মালিয়াট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান খাঁ বলেন, একদমই ব্যক্তিগত জমিতে জোরপূর্বকভাবে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। যা একদমই অন্যায়। ওই গ্রামের কিছু প্রভাবশালী মানুষ এই কাজটি করছে।

কালীগঞ্জ থানার তত্ত¡ীপুর পুলিশ ক্যাম্পের আইসি এএসআই মশিউর রহমান জানান, তিনি বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। সেখানে মাটি ফেলে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে দেখেছেন। তবে কাউকে মারধরের বিষয়টি তিনি জানেন না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button