সংস্কার করা হলো মহেশপুরে কালের সাক্ষী শিব মন্দিরটি
ঝিনাইদহের চোখ-
ঝিনাইদহের মহেশপুরে ১০৫০ সালে মতান্তরে ১১০২ খ্রিষ্টাব্দে আবিষ্কৃত কালের সাক্ষী শিব মন্দিরটি নতুন করে অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আগামী ১১ এপ্রিল মন্দিরটি নতুন আঙ্গিকে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর মতে, এটি এতটাই প্রাচীন তার পূর্বপুরুষ,পূর্বপুরুষের মুখ থেকে মন্দিরের কথা শুনে আসছে কিন্তু সঠিক ভাবে কেউই মন্দিরের সঠিক বয়স বলতে পারে না।
মন্দির কমিটির সভাপতি বাবু রঞ্জন মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক প্রবীর দাশ, পুরোহিত মিলন্দ বাবাজী কাছ থেকে প্রাচীন এই মন্দির সম্পর্কে জানা যায়, তাঁরা তাদের পূর্বপুরুষ থেকে এই মন্দিরে পূজা অর্চনা চলে আসছে। এখানে শ্রী শ্রী শিব মন্দির ছাড়াও রাধা মন্দির ও কালি মন্দির অবস্থিত রয়েছে। প্রতি বছর চৈত্র মাসের শেষে চৈত্র সংক্রান্তি পালনসহ শিবের মাথায় জল ঢালার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তারা আরো বলেন, শিব মন্দিরের পাশেই অবস্থিত কালি মন্দির। এখানে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার কালিপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ পূজাতে সাধারনত মধ্যবয়সী ছেলে-মেয়েরা বেশী অংশগ্রহণ করেন। এর পাশেই রাধা বল্লভ মন্দির/শ্রী শ্রী পাঠ রাধা বল্লভ অবস্থিত। ১৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দে শ্রী সুন্দরানন্দ ঠাকুর কপোতাক্ষ/ভৈরব নদের তীরে এই মন্দিরটি স্থাপন করেন। এখানে সকাল সন্ধ্যা হিন্দুধর্মাবলম্বীরা পূজা অর্চনা করেন। এই মন্দির প্রাঙ্গনে মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময় নামযঞ্জ অনুষ্ঠিত হয়। শ্রাবণ মাসে এখানে ঝুলন যাত্রাও অনুষ্ঠিত হয়।
সবচেয়ে মজার বিষয় ও ভালোলাগার বিষয় এখানে সার্বজনীন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয় যথা নিয়মে মা দুর্গকে বিসর্জনও দেওয়া হয় পরবর্তীতে নতুন দুর্গা মার প্রতিমা তৈরী করে সারা বছর রেখে দেয়।
মন্দির কমিটর সাথে কথা বলে জানা যায়, মন্দিরের নামে প্রায় ৮০ বিঘা জমি আছে, যেখান থেকে অর্জিত অর্থ মন্দির রণাবেণ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যয় করা হয়, সাথে সাথে গরীব দুঃখীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যয় হয়। সর্বপোরি বহু পুরাতন ঐতিহ্যবাহী এই মন্দির আমাদের দেশের প্রত্নতত্ব একটি নিদর্শন। যা সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষন করতে পারলেই আমরা আমাদের শিকড়ের সন্ধান মিলবে।
ঐতিহাসিকদের মতে, ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির বঙ্গ বিজয়ের একশ বছর পূর্বে সেন বংশের আমলে মহেশ্বর, বুড়োশিব বা শিব মন্দির সেন বংশের আমলে স্থাপিত হয়। এক সময় কালের করাল গ্রাসে মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায় । তখন মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত শিব লিঙ্গগুলো চুরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে মহেশপুর জমিদারদের সহযোগিতায় শৈব ভক্তরা ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরের স্থলে নতুন করে একটি মন্দির নির্মাণ করে পূজা অর্চনা শুরু করেন। সে সময় এ মন্দিরের নাম করণ করা হয় শ্রী শ্রী শিব মন্দির। সেই থেকে এর কার্যক্রম চলে আসছে। পাকিস্থান আমল ও দেশ স্বাধীনের পর মন্দিরটি একাধিকবার সংস্কার হলেও সর্বশেষ সংস্কারটি দৃষ্টিনন্দন হয়েছে।
এই মন্দিরকে কেন্দ্র করেই মহেশপুরে অনেক কিংবদন্তি রয়েছে। মন্দিরকে কেন্দ্র করেই পর্যটকরা আকৃষ্ট হতে পারে।