মহেশপুর

ধর্না দিয়ে কাজ না হওয়ায় মহেশপুরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো তৈরী

ফিরোজ আহম্মেদ, ঝিনাইদহ চোখ-
প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন আবেদন করেছেন কিন্তু কোন কাজ হয়নি। অবশেষে নিজেরাই উদ্যগী হয়ে নির্মাণ করলেন একটি বাঁশের সাঁকো। সাঁকোটির অবস্থান ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা শহর থেকে ১ কিলোমিটার দুরে জলিলপুর-যুগীহুদা এলাকার কপোতাক্ষ নদের উপর। উপজেলার কপোতাক্ষ নদের উত্তর পাড়ের জুগিহুদা গ্রামবাাসির স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় ১২০ হাত দীর্ঘ এই বাঁশের সেতুটি নির্মান করছেন।

এলাকাবাসীরা জানায়, কপোতাক্ষ নদের উত্তর পাড়ে জুগিহুদা, ফতেপুর, কদমতলা, ষড়াতলা, নিমতলাপাড়া, বেড়েরমাঠসহ ১০টি গ্রাম। এসব গ্রামের মানুষকে মহেশপুর শহরে যেতে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হয়। কিন্তু নদের এই সাঁকো পার হয়ে শহরের পথ মাত্র এক থেকে দুই কিলোমিটার। নদের দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে জলিলপুর, বৈচিতলা এবং নওদা গ্রাম। দক্ষিণপাড়ের এই তিনটি গ্রাম পড়েছে মহেশপুর পৌরসভার মধ্যে। এখানে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি আলিম মাদরাসা ও একটি মডেল প্রাইমারী। ফলে উত্তর পাড়ের প্রায় ১০ গ্রামের ছেলে মেয়েরা নদটি পার হয়ে মাত্র ২০০ গজ দুরে দক্ষিণপাড়ের জলিলপুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। প্রতিদিন এসব শিক্ষার্থীদের নদ পার হতে নৌকা তাদের একমাত্র ভরসা। এছাড়া এসব গ্রামের মানুষ নানা কাজে নৌকায় নদ পার হয়ে শহরে আসে। যে কারনে তাদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুম এলে সে ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়।

এখানে একটি ব্রীজের জন্য গত কয়েক যুগ ধরে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন এবং আবেদন করেছেন গ্রামবাসিরা কিন্তু কোন কাজ হয়নি। সবাই কথা দিয়েছে, বাাস্তবায়ন হয়নি। অবশেষে গ্রামের মানুষ এক সপ্তাহ ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে এই বাঁশের সাকো তৈরি করেছেন। বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ হলে উত্তর পাড়ের ওই ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ স্বল্প সময়ে মহেশপুর শহরে যাওয়া আসা করতে পারবে।

জুগিহুদা গ্রামের আমির হোসেন জানান, কপোতক্ষ নদে উত্তর পাড় ঘেষে অবস্থিত জুগিহুদা গ্রামেই রয়েছে সাড়ে তিন হাজার ভোটার। উত্তরপাড়ের প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা নৌকায় করে পারপার হতেন। কিন্তু কয়েকটি দুর্ঘটনার কারনে তারা উদ্যগী হন একটি ব্রীজ নির্মাণের। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধির দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ব্রীজ করা হয়নি। এই এলাকার মানুষগুলোকে মহেশপুর শহরে যেতে হলে প্রায় ৪ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। যদি জলিলপুর- জুগিহুদা গ্রামের মাঝে একটি ব্রীজ হতো তাহলে মাত্র এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলে শহর।

বাশের সাকো তৈরিতে স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান জানান, তারা এলাকার মানুষের কাছ থেকে বাঁশ, পেরেক চেয়ে নিয়ে এটি তৈরি করছেন। আর প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ সাত দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে এটি তৈরি করছেন। তিনি জানান, এইখানে একটি ব্রীজ হলে পাশ্ববর্তী জলিলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়,হাইস্কুল যেতে পারবে আমাদের শত শত শিক্ষার্থীরা।

ওই এলাকার পারাপারের কাজ করা নৌকার মাঝি বসুদেব হালদার জানান, এখানে সাঁকো বা ব্রীজ হলে আমার আয় বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু এতে আমার কোন দুঃখ নেই। আমি আমি চাই এখানে একটি ব্রীজ হোক। এলাকার মাানুষের দির্ঘদিনের কষ্ট আর ভোগান্তি লাঘব হোক।

নদের উত্তর পাড়ের কদমতলা গ্রামের বাসিন্দা মহেশপুর পৌর মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক এমএ আসাদ জানান, আমরা প্রতিদিনই প্রায় চার কিলোমিটার পথ ঘুরে মহেশপুর শহরে যায়। ব্রীজটি হলে আমাদের মাত্র এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই শহরে যেতে পারবো। আপাতত গ্রামের মানুষের সহযোাগীয় বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হচ্ছে। তবে আমাদের দাবি এখানে একটি স্থায়ী ব্রীজ নির্মাণ করা হোক।

উপজেলা এলজিইডি অফিসার শৈয়দ শাহরিয়ার আকাশ জানান, বিষয়টি অবগত আছি, ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশসহ অনুর্ধ ১০০ মিটারের একটি প্রকল্প দেওয়া আছে। প্রকল্পটি পাশ হলেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার রাজবংশী জানান, স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো তৈরি হচ্ছে এমন সংবাদ জানা নেই। তবে কেউ লিখিত আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button