কালীগঞ্জজানা-অজানা

গাঁটের টাকায় মানবিক সাহায্য করাই কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপের কাজ

ঝিনাইদহ চোখ-

আগুনে বাড়ি পুড়ে যাওয়া অসহায় ব্যক্তি ঘর নির্মাণ, প্রতিবন্ধিদের হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা, গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগীতা প্রদান, নিরুপায় রোগীদের রক্তদান, সমাজের অসহায় সম্বলহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানো, নিরাপদ ভাবে থাকতে পাখিদের অভয়াশ্রম তৈরী করে দেয়া, প্রতিযোগীতার মাধ্যমে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা খুঁজে বের করে তাদেরকে পুরষ্কৃত করা, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীদের বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়াসহ অসংখ্য মানবিক কাজ করা তাদের নিয়মিত কাজ। আর এটি করে চলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপ। গ্রুপটির সদস্যদের নিজেদের গাঁটের টাকায় এ মানবিক সাহায্যগুলো করে আসছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল গ্রুপটি খোলেন স্থানীয় সংবাদকর্মী শাহরিয়ার আলম সোহাগ। উদ্দেশ্য ছিল প্রত্যেক এলাকায় তাদের আঞ্চলিক ভাষা আছে। তদ্রুপ এ অঞ্চলের মানুষেরও পৃথক আচার অনুষ্ঠান, ভাষা সংস্কৃতি রয়েছে। এ মানুষগুলোকে একই সুতোঁয় গেথে নিয়ে এলাকার ভিতরের সত্যিকার অসহায় মানুষকে সাহায্য করা। প্রথম দিকে হালে পানি না পেলেও গ্রুপটির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৬১ হাজার। গ্রুপটির সদস্য বেশির ভাগই এ অঞ্চলের হলেও একটা বড় সংখ্যা রয়েছে প্রবাসীরা। গ্রুপটির মানবিক কাজ পরিচালনায় তারাই বেশি ভূমিকা রেখে থাকে। কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপই এ উপজেলার অসংখ্য গ্রুপের মধ্যে তাদের গ্রুপটাই অধিক সদস্যের।

উপজেলার ছোট ভাটপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র আব্বাস আলী জানান, তিনি নিজে একজন দরিদ্র মানুষ। গত ২০২১ সালের ১৩ আগস্ট ঘরে আগুন লেগে সবকিছু ছাই হয়ে যায়। ছোট ছোট ৩ টি সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নীচে পলিথিন টানিয়ে রাতে থাকতাম। খবর পেয়ে কালীগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপের কয়েকজন সদস্য আমার বাড়িতে ছুটে আসেন। তারা আমার পরিবারের অসহায় অবস্থা দেখে নিজেদের গাঁটের টাকায় বাড়ি করে দেন। তিনি বলেন আমার কোন গতি ছিলনা। তাদের উপকারের কথা কখনও ভুলতে পারবো না।

একই উপজেলার কমলাপুর গ্রামের রুহুল আমিন জানান, ধারদেনার মাধ্যমে অনেক কষ্টে একটি ইজিবাইক কিনেছিলাম। এতে যাত্রী বহন করে আমি সংসার চালায়। কিন্ত গত ২১ সালের ৮ ফেব্রæয়ারী শহরের চিনিকল এলাকা থেকে আমার ইজিবাইকটি চুরি হয়ে যায়। এতে আমি একেবারে পথে বসে যায়। সংসার চালানো নিয়ে আমি মহাচিন্তায় পড়ে শুধু কাঁদতাম। পরে আমার পারিবারিক দুরাবস্থা দেখে কালীগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপ তাদের নিজেদের টাকায় ওই বছরের ৯ মার্চ নতুন আরেকটি ইজিবাইক কিনে দেয়। তিনি বলেন, তাদের এমন কাজ চলমান থাকলে সত্যিই মানুষের উপকার হবে।

উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের মাসুদ হোসেন জানান, করোনাকালে আমার স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম ও মেয়ে সানজিদা খাতুন করোনায় আক্রান্ত হলে পরিবারের জন্য বিরাট এক কষ্ট নেমে আসে। সময়টাতে মানুষ এ মহামারি থেকে বাঁচতে চরম ভয়ের মধ্যে ছিল। আক্রান্তদের পরিবারের ধারে কাছেও যেত না। আমার স্ত্রী ও সন্তানের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে কালীগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপের সদস্যরা নিজেরা বিনামূল্যে অক্সিজেনের সিলিন্ডার বাড়িতে দিয়ে যান। তিনি বলেন, শুধু আমার পরিবারই না সে সময়ে খবর পেলেই করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে চরম উপকারে এসেছে। সে সময়ে তারা যে উপকার করেছে তাদের জন্য সব সময় প্রার্থনা করি।

একই উপজেলার বাকুলিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী তানজির হোসেন জানান, তার চায়ের দোকানে আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্থ হলে কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপ আমাকে নগদ ২০ হাজার টাকা প্রদান করে আমার দোকানে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়।

কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপের এ্যাডমিন শাহরিয়ার আলম সোহাগ জানান, ‘আঞ্চলিক ভাষায় গড়ি মানবিক বন্ধন’- এ শ্লোগান নিয়ে গ্রুপটির পথচলা। কালীগঞ্জ আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপ মাতৃভাষাকে সম্মান দেখিয়ে গ্রুপের এ নামটি তারা দেন। প্রথম দিকে অল্প কিছু সংখ্যক সদস্যদের নিয়ে পথচলা শুরু হয়। পরে এখন তাদের সদস্য সংখ্যা ৬১ হাজারে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, অসংখ্য প্রবাসী আমাদের সদস্য বন্ধু। মুলত প্রবাসী এবং এলাকার সদস্যরা তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। এসকল টাকায় এ সকল মানবিক কাজ করে আসছেন। তিনি বলেন, এটা করতে পারলে তাদের ভালোও লাগে।

কালীগঞ্জের পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, কালীগঞ্জের কতিপয় যুবকের নেয়া এ এলাকার আঞ্চলিক ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ফেসবুকভিত্তিক আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপ খোলেন। যে গ্রুপটির নানান সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য অনেক দুরের মানুষও বর্তমান এ গ্রুপের সদস্য। গ্রুপটি সমাজের হতদরিদ্র অসহায় মানুষগুলোর জন্য যেভাবে আর্থিক ও মানবিক সাহায্য করে আসছে সেজন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button