কালীগঞ্জজানা-অজানা

কালিগঞ্জে নিষিদ্ধ সুদ ব্যবসা করে দুই ভাই দিন মুজুর থেকে কোটিপতি

ফিরোজ আহম্মেদ, কালিগঞ্জ , ঝিনাইদহ চোখ-
চারভাই দুই বোনের সংসারে বাবা বারেক মোল্লা পরের ক্ষেতে কাজ করতেন। ভিটাবাড়ি ছাড়া মাঠে কোন ফসলি জমি না থাকায় খুব কষ্টেই চলতো তাদের সংসার। বাবা বারেক মোল্লা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই নজরুল ইসলাম সংসারে হাল ধরেন। তিনি সেই থেকে এখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আর মেজ ভাই রেজাউল ইসলাম গ্রামের মোতলেব মোল্লার বাড়িতে ও সেজো ভাই শরিফুল ইসলাম একই গ্রামের ছিদ্দিক লস্কারের বাড়িতে দিনমজুর থেকে কাজ করতেন। ছোট বেলায় অন্যের বাড়িতে কাজ করে এভাবেই দিনোপথ চলতো তাদের। এখন সেই রেজাউল ও শরিফুল সুদে কারবারি করে হয়েছেন কোটিপতি। ক্রয় করেছেন এলাকায় প্রায় ৬০ বিঘা জমি, বানিয়েছেন বাড়ি।

বলছিলাম ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুদের রাজধানী খ্যাত কোলা ও জামাল ইউনিয়নে বড়তালিয়ান গ্রামের সবচেয়ে বড় সুদে কারবারী রেজাউল ও শরিফুল নামের দুই সহদরের কথা।

কালীগঞ্জের কোলা বাজারের সিংড়া রোডে অবস্থিত সুনিল ঘোষের নিকট হতে প্রায় তিন বছর আগে রেজাউল ক্রয় করেছেন ৫৬ লক্ষ টাকার বিশাল একটি গো-ডাউন। যা বর্তমানে মাসিক ১০ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। তাদের চড়া সুদের অত্যাচারে কোলা, ডাউটি, বিনোদপুর, পারখালকুলা, খেদাপাড়া, কোলার দাসপাড়া সহ হিন্দু সস্প্রাদের অনেকে এলাকা ছাড়া আবার অনেকে ভারতে
যেতে বাধ্য হয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বড়তালিয়ান গ্রামের মৃত বারেক মোল্লার ছেলে সুদে কারবারি রেজাউল ও শরিফুল অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। বিশেষ করে রেজাউল খাওয়া-পরা শেষে মাসে যে টাকা পেতেন তা তিনি অভাবগ্রাস্থ কৃষকের কাছে দ্বিগুন টাকা ফেরত দেওয়ার মৌখিক চুক্তিতে খাটাতেন। এভাবে সে ও তার ভাইয়ের সুদে কারবারির পথ চলা শুরু হয়।
২০১৬ সালের পর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সহতায় বীরদর্পে এই সুদে কারবার চালিয়ে যান দুইভাই । সুদে টাকার জামানত হিসাবে গ্রহিতার নিকট হতে তারা ব্ল্যাংক চেক ও খালি স্টাম্পে স্বাক্ষর করে নিতেন। টাকা দিতে ব্যার্থ হলে জামাল ইউনিয়ন বোর্ড অফিসে
বসাতেন শালিস। সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তার উপর চড়াও হতেন রেজাউল। দেখাতেন মামলার ভয়। সুদে কারবারির কারনে রেজাউল ও তার ভাইয়ের সখ্যতাগড়ে উঠে জামাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের মোদাচ্ছের হোসেনের সাথে। এছাড়া চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেনের সাথে সুদখোর রেজাউল এর রয়েছে ইট,বালি, সারসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা। সেকারনে সুদে কারবারি কোটিপতি রেজাউালকে চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন করে দিয়েছেন প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড ও রেজাউলের ছেলেকে দিয়েছেন চাকুরী।

সুদে কারবারি রেজাউল ও শরিফুলের ছোট ভাই ভ্যান চাকল মনিরুল ইসলাম জানান, আমাদের চারভাই দুই বোনের সংসারে খুবই অভাব ছিলো। অভাবের তাড়নাই আমার এক
বোন গলাই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। রেজাউল ও শরিফুলের সাথে কোন সস্পর্ক নেই জানিয়ে বলেন, আমি এসব অপছন্দ করি। আমি একটি মসজিদে কোনো বেতন ছাড়াই ইমামতি করি। রোজার সময় টাকা পয়সা ছাড়া আমি তারাবি পড়াই।

বড় তালিয়ান গ্রামের মৃত আব্দুল করিম মোল্লার ছেলে মাস্টার আতিয়ার রহমান জানান, জামাল ও কোলা ইউনিয়নের সুদখোরদের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করে সবসময়।

চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেনের পৃষ্ঠপোষকতায় মানুষের সাময়িক অসুবিধা কে পুঁজি করে সরব অত্যাচার চালাচ্ছে সুদখোর রেজাউল, শরিফুল সহ ছোট-বড় অনেক সুদে কারবারিরা। ইউনিয়ন পরিষদের সব সুবিধা এই সুদে কারবারিদের প্রদান করে থাকে জামাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

জামাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন জানান, এইসব নোংরা কাজের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার কাছে কোন অভিযোগ আসলে আমি সমাধানের চেষ্টা করি এবং ভুক্তভোগীদের সতর্ক করি। রেজাউল কিংবা তার ভাইয়ের সাথে আমার কোন ব্যবসা নেই। সুদখোরদের বিরুদ্ধে আমি বরাবরই উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে কথা বলি।

উল্লেখ্য, ২৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ বড় তালিয়ান নিজ বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রেজাউল ও তার ভাই শরিফুলকে আটক করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করে তাদের নামে।এ সময় জব্দ করা হয় ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৪ টি স্ট্যাম্প ও ১৫০ পাতার একটি হিসাব লিখিত খাতা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button