অন্যান্য

মহামারী করোনায় শ্রমিকের পাশে বিআরবি গ্রুপ–হাসিবুর রহমান রিজু

ঝিনাইদহের চোখঃ

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস আজ মহামারী ! লকডাউন এবং অচলাবস্থার কারণে বহুমাত্রিক সংকটে বাংলাদেশের শিল্প-বানিজ্য ও অর্থনীতি, পোষাক শিল্পও ধ্বংসের মুখে। আগেই বেড়েছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী খরচ। আর এবার গোদের উপর বিষফোঁড় লকডাউনের প্রভাব। কারখানায় উৎপাদন নেই, নেই ব্যবসায় গতি, বেঁচা-কেনায় মন্দা, শিল্প-কারখানায় স্থবিরতা। অতীব সত্য, বিগত চার দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিবাচক ইতিহাসে সর্বোচ্চ ধ্বংসের ধাক্কা এবছর।

করোনা পরিস্থিতিতে সব চাইতে বিপাকে সীমিত আয়ের কৃষক-শ্রমিক, মুটে-মজুর শ্রেণীর মানুষ। রাস্তায় বের হলেও পাচ্ছে না কাজ, জুটছে না তিন বেলা খাবার। শহরের ঘরবদ্ধ দিনমজুর মানুষগুলো ইচ্ছে করলেই যেতে পারছে না কাজের খোঁজে বাইরে, আর গ্রামের অভাবী মানুষটি ইচ্ছা করলেই আসতে পারছে না শহরে।

বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানীখাতেও এখন ধস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী কাজ করেন। যার মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান মধ্যপ্রাচ্যে। রেমিটেন্স প্রবাহ এখন নি¤œসূচকে। অনেক বাংলাদেশী বিদেশের মাটিতে বেতন পাচ্ছেন না ঠিক মতো। অনেকে চাকুরীচ্যুত হচ্ছেন, অনেকে মজুরী হ্রাসের কবলে। এছাড়াও করোনাকে ঘিরে সারা বিশ্বে চলছে লোক ছাঁটাই। ফলে রেমিটেন্স প্রবাহ আরো অবনতি হতে পারে এমন আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন অর্থনীতির ক্রান্তিলগ্নে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠা কষ্টকর। এমতাবস্থায় দেশের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান, কারখানার মালিক সরকারি সাধারণ ছুটিকালিন বেতন-ভাতা কেউ ৫০% আবার কেউ ৬০% পরিশোধ করেছেন। শতভাগ বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছেন এমন নজির খুবই কম। অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক আবার ঈদ বোনাসও ঠিকমত দেননি।

আর এসব টানা-পোড়েনের মধ্যেও নজীর স্থাপন করেছে কুষ্টিয়ার বিআরবি গ্র“প। জানা গেছে, বি আর বি গ্র“প এদের সকল প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকল শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাকে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি প্রদান করেছে এবং কর্মকান্ড বন্ধ রেখেও সকলকে শতভাগ বেতন পরিশোধ করেছে। লকডাউন বা সাধারণ ছুটির প্রায় তিন মাসে আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। তাছাড়াও পরিশোধ করেছে শতভাগ ঈদ বোনাসও। শুধু তাই নয়- সাধারণ ছুটিকালীন সময়ে নিরাপত্তার স¦ার্থে কিছু নিরাপত্তা কর্মী, জরুরী দাপ্তরিক কাজে কিছু কর্মচারী ও কর্মকর্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য কিছু শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা ডিউটি করেন। পরিবর্তে নিয়মিত বেতন ভাতাদি পরিশোধ ছাড়াও অতিরিক্ত কাজের জন্য তাদেরকে মাসিক বেতনের সমপরিমান হারে অতিরিক্ত কাজের মজুরী পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি ।

এতে করে প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট বেতন-ভাতাদি বাবদ আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা এবং ঈদ বোনাস পরিশোধের পাশাপাশি আরও অতিরিক্ত প্রায় কোটি টাকা প্রদান করেছে অতিরিক্ত কাজের মজুরী হিসাবে। প্রণোদনার বিষয়ে বলতে হয়, যদি প্রতিষ্ঠানটি সরকার কর্তৃক প্রণোদনা পেত তাহলে অবশ্যই তা প্রদান করতো। উল্লেখ্য, এই করোনার কারণে দুঃখী ও আর্তমানবতার সেবায় প্রতিষ্ঠানটি কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি ত্রাণ তহবিলেও সাধ্যমত আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন।

বলাবাহুল্য, বি আর বি গ্র“প সরকার ঘোষিত যে সাধারণ ছুটি (উক্ত সাধারণ ছুটির মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটি, উৎসবছুটি সহ বিভিন্ন ছুটি পড়েছে) তাদের শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাকে প্রদান করেছেন তা কিন্তু কোন দায়বদ্ধতা বা বাধ্যবাধকতা থেকে নয় – কেননা শিল্প কারখানার জন্য এ ছুটি প্রযোজ্য ছিল না। কেননা কারখানা আইন সম্পূর্ণ আলাদা। তাই লোকাল প্রশাসন থেকেও বি আর বি কর্তৃপক্ষকে কারখানা খোলার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু বি আর বি কর্তৃপক্ষ তাদের শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের জানমালের নিরাপত্তা ও স¦াস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি স¦ীকার করেও মানবতার দায়বদ্ধতা থেকে উক্ত সাধারণ ছুটি প্রদান করেছেন।

একটি শিল্প সাম্রাজ্য চালাতে গেলে যেমন থাকবে শিল্পের উন্নয়নে শ্রমিকদের প্রতি ভালবাসার ছোঁয়া, তেমনি প্রশাসনিক ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে থাকবে আইনের শাসন। তবেই না কোন প্রতিষ্ঠান উঠতে পারে উন্নতির চরম শিখরে। তাই কেউ অনিয়ম, চুরি, অসদাচরণ করলে প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবে এটাই স্বাভাবিক। আর এরকমই ঘটনা-কুষ্টিয়া বিআরবি কেবল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডে রক্ষনাবেক্ষন বিভাগে কনষ্ট্রাকশন সেকশনের জুনিয়র ক্লার্ক হিসাবে কর্মরত থাকাবস্থায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া বিল প্রস্তুত করতঃ কোম্পানীর হিসাব বিভাগ হতে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে আসছিল। বিষয়টি ০১.০৬.২০২০ তারিখে বি আর বি কর্তৃপক্ষের গোচরে আসে। পরবর্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের পর বি আর বি কর্তৃপক্ষ ঐ জুনিয়র ক্লার্কের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ ও ভুয়া বিল তৈরির মামলা দায়ের করে।

সম্মানিত পাঠককুল এবারে নিশ্চয় স্পষ্ট হয়েছে যে, বি আর বি তে করোনার প্রভাবে শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই হয়েছে এমন বক্তব্য নিছক মিথ্যা ছাড়া কিছু নয়। তবে হ্যাঁ, ২৮ জন শ্রমিককে তাদের কর্তব্যে অবহেলা, গাফিলতি, ইচ্ছেমাফিক চলা, অননুমোদিত ভাবে অনুপস্থিত থাকা ইত্যাদি কারণে চাকুরী থেকে বাদ দেয়া হয়েছে -তা করোনা প্রাদুর্ভারে অনেক আগে। আর এর পিছনে অবশ্যই যৌক্তিক কারণে রয়েছে। একটি উৎপাদনমুখি শিল্প প্রতিষ্ঠানে যদি শ্রমিকদের কো¤পানীর কাজের প্রতি দরদ না থাকে, মনোযোগী না হয়, ইচ্ছেকৃতভাবে উৎপাদন ব্যাহত করে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নসাধন করা খুবই কষ্টকর। আর এ সমস্ত শ্রমিক পরিবেশ নষ্ট করে এবং অন্যদেরকে প্রভাবিত করে।

শোনা যায় উক্ত কর্মীগনকে ওভার টাইম করার জন্য কো¤পানী বলে। হ্যাঁ এরকম হয়েই থাকে – আর বি আর বি কর্তৃপক্ষ সঠিক নিয়মেই ওভার টাইমের পয়সাও পরিশোধ করে থাকে। এরপরও যদি কেহ অসদাচরণ করে, কাজে গাফিলতি করে তাহলে তো প্রতিষ্ঠানের স¦ার্থে অনেক সময় কিছু সিদ্ধান্ত নিতেই হয় – যা অপ্রিয় সত্য। জানা গেছে, তারপরও তাদেরকে পুনরায় নিয়োগ দেয়া যায় কি না সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা প্রতিষ্ঠানের ছিল এবং তাদের সাথে কথা বলাও হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বিষয়টি পিছিয়ে যায়।

বি আর বি কর্তৃপক্ষ তাদের ছুটির নোটিশ সমুহে এই মর্মে ঘোষনা দেয় যে, শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাগণ যেন ছুটিকালীন সময়ে ঘরেই থাকেন, এই সময়ে বাইরের কাউকে যেন নিজ বাড়ীতে প্রবেশের অনুমতি না দেন, সরকারি স¦াস্থ্য বিধি মেনে চলেন ইত্যাদি – আর এটা দোষনীয় কিছু নয় বরং সচেতনতা। আর সরকারও এরকমই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। অথচ তারপরও কিছু কর্মচারী কর্মকর্তা নিয়ম না মেনে স্থান ত্যাগ করেছেন সেকারণে তাদের হয়তো ঐ সময়ের বেতন সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। আর এটা প্রশাসনিক ভীত ঠিক রাখতেই করতে হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button