আল্লাহর হক আদায়ে মানুষের যা করা জরুরি
ঝিনাইদহের চোখঃ
মানুষ সামাজিক জীবন। সমাজ জীবনে মানুষ বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তাদের সময় অতিবাহিত করে। আর দুনিয়াতে মানুষের অন্যতম দায়িত্ব হলো যথাযথভাবে আল্লাহর তাআলার ইবাদত-বন্দেগি করা।
দুনিয়াতে মানুষের অন্যতম কাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে শিরক না করে তার হুকুম আহকাম পালনসহ সব কাজে তাকে স্মরণ করা। প্রতিটি কাজকেই ইবাদত-বন্দেগিতে পরিণত করা।
সব কাজকে ইবাদত-বন্দেগিতে পরিণত করার মানে এমনটি নয় যে, দুনিয়ার জাগতিক কর্মকাণ্ড ফেলে রেখে শুধু মসজিদ কিংবা উপাসনালয়ে বসে বসে জিকির-আজকারে বসে থাকা।
বরং মানুষের কাজ হলো দুনিয়ার প্রতিটি কাজই বৈধ পন্থায় আল্লাহকে স্মরণের মাধ্যমে করে যাওয়া। তখন সে কাজ শুধু দুনিয়ার প্রয়োজনেই সম্পন্ন হবে না বরং তা আল্লাহর ইবাদতে পরিণত হবে।
সুতরাং মানুষের উচিত দুনিয়ার প্রতিটি কাজে আল্লাহর হুকুম আহকাম-পালনের পাশাপাশি তাঁর নামে কাজ শুরু করা এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। নাফরমানি ও অবাধ্যতামূলক সব কাজ থেকে ফিরে থেকে তার আনুগত্য করা।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে তার অন্যায়, অবাধ্যতা ও নাফরমানিমূলক কাজে বাড়াবাড়ির কারণে অনেক সময় আজাব বা শাস্তি দেন। বান্দার প্রতি আল্লাহর এ ধরণের শাস্তি জুলুম নয়।
বরং কেউ যদি এ ধরণের আজাব বা শাস্তি জাতীয় কোনো কিছু দেখে তবে তাদের উচিত অন্যায় কাজ থেকে ফিরে আসা এবং নিজেদের সংশোধন করে নেয়া ও হাদিসে উল্লেখিত দোয়া বেশি বেশি পড়া। হাদিসে এসেছে-
হজরত মুয়াজ ইববে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে ‘উফায়ের’ নামক গাধার উপর বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি বললেন, ‘হে মুয়াজ! তুমি কি জান বান্দার উপর আল্লাহর হক এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কি?
মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই বেশি জানেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
> বান্দার উপর আল্লাহর হক হলো, ‘একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে অংশীদার স্থাপন করবে না। আর
> আল্লাহর উপর বান্দার হক হলো, ‘যে তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না তাকে শাস্তি না দেয়া।’
মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি এ ব্যাপারে মানুষকে সুসংবাদ দেব?
তখন তিনি (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তাদের সুসংবাদ দিও না, কারণ তারা হাত-পা গুটিয়ে পরনির্ভরশীল হয়ে কাজ-কর্ম এবং ইবাদত ছেড়ে দেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
এ হাদিসটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ প্রতি কাজের মাধ্যমে আল্লাহর অধিকার আদায় করবে। আর আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাদের ন্যায্য অধিকার দান করবেন। যাতে কারো প্রতি জুলুম করা হবে না।
আল্লাহ তাআলা কুরআনের অনেক স্থানে মানুষকে শিরক না করার নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা শিকর হচ্ছে সবচেয়ে বড় জুলুম। তাই মানুষের উচিত সব সময় আল্লাহর স্মরণে প্রতিটি কাজ শুরু করা এবং আল্লাহ তাআলা অবাধ্যতা ও শিরক থেকে বেঁচে থাকতে তার কাছে প্রার্থনা করা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামও মানুষকে শিরক থেকে বেঁচে থাকতে অনেক দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। শিরক থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার উপায়ও শিখিয়ে দিয়েছেন।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেখানো সে প্রার্থনা হলো-
اَللهثمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكِ اَنْ اُشْرِكَ بِكَ وَ اَنَا اَعْلَمُ وَاسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا اَعْلَمُ
উচ্চারণ :আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন উশরিকাবিকা ওয়া আনা আলামু ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আলামু।’ (মুসনাদে আহমাদ)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার স্বজ্ঞানে তোমার সঙ্গে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আর অজানা অবস্থায় যদি শিরক হয়ে যায়, তবে তা থেকে ক্ষমা চাই।’
সুতরাং বান্দার প্রতি আল্লাহর হক শিরক থেকে মুক্ত থাকতে তার কাছে সাহায্য লাভের পাশাপাশি দুনিয়ার সব কা আল্লাহর স্মরণের সঙ্গে আদায় করে পরকালের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।