টপ লিডশৈলকুপা

ঝিনাইদহে যুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে জরাজীর্ণ টিনের ঘর

মনজুর আলম, ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহের কামান্না মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে মাধচন্দ্র ভৌমিকের টিনের ঘর আজো মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তবে অযতেœ আর সংস্কারের অভাবে ঘরগুলো দিনদিন জরাজীর্নে পরিনত হয়েছে। অন্যদিকে শহীদের স্মরনে মিলাদ মাহফিলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। পুর্নবাসন করা হয়নি শহীদ পরিবারগুলোকে।

গণকবর গুলো সঠিক ভাবে রক্ষনাবেক্ষন করা হয়নি। তবে প্রশাসনের দাবি অতিদ্রæতই একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হানাদার মুক্ত করার দৃড় প্রত্যয় নিয়ে, মাগুরা জেলার হবিপুরের আবু বকর ও শৈলকুপার আলমগীর নেতৃত্বে ভারতে প্রশিক্ষন শেষে কামান্না গ্রামে এসে পৌছান। পরদিন শৈলকুপায় ও মাগুরায় অভিযানের প্রস্তুতি নেয় তারা। ২৬ নভেম্বর, ১৯৭১। সন্ধ্যার পরপরই ৪২ জন তরুন মুক্তিপাগল যুবকের মধ্যে ৩২ জন মাধচন্দ্র ভৌমিকের বাড়ির টিনের ঘরে এবং ১০ জন সামেনা বেগমের খড়ের ঘরে অবস্থান নেয়।
কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের কথা রাতেই, স্থানীয় রাজাকার-আলবদর-আল শাম্সদের-গোপন তৎপরতায় দ্রæতই পাকিস্থানী দোষরদের নিকট পৌয়ে যায়।

ভাবতে আবাক..! লাগে। শৈলকুপা উপজেলা শহর থেকে দীর্ঘ ১৪ কিলোমিটার দূরে অদুর পল্লী, কুমারনদের পূর্ব পাড়ে কামান্না। মুহুত্বের মধ্যেই হানাদার বাহিনীর নিকট খবর পৌগে গেল কি করে ? ভুলে গেলে চলবে না। পাকবাহিনীর দোষর, হায়না- শকুনের মত নিলজ্জ স্বভাব, তারাই দ্রæত খবর পৌছে দিয়েছে, তাদের পাকিস্তানি প্রভুদের নিকট।

২৭ শে নভেম্বর। ভোর ৪ টা, মুক্তিযুদ্ধের সাহসি সৌনিকেরা তখনও গভীর ঘুমে মগ্ন। হঠাৎ করেই ভোরের কুয়াশা ভেদ করে, গর্জে ওঠে শত্রæর রাইফেল, এলএমজি।

হঠাৎ আক্রমনে ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা ঘুম ভেঙে হতবিহŸল, বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে তারা। শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রানপনে চেষ্টা করেও পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু তার আগেই ঘরের মধ্যে, বারান্দায়, উঠানে শত্রæর গুলিতে লুটিয়ে পড়ে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা।

এখানেই শহীদ হন-মোমিন, কাদের, রাজ্জাক, রিয়াত, মতলেব, শরিফুল, মনিরুজ্জামান, শহিদুল, ছলেমান, ওয়াহেদ, আলমগীর, আলী হোসেন, আলিউজ্জামান, আনিছুর, নাসিম, কওছার, আজিজ, সেলিম, রাশেদ, অধীর, তাজুল, রাজ্জাক, ছালেক, আকবর, হোসেন, গোলজার এবং গোউর।
রাত গড়িয়ে ভোর হয়। দুঃসংবাদ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। মায়ের আর্তনাদ, বোন, নিকটজনের কান্নায় ভারি করে তোলে কামান্নার বাতাস। হাজারো মানুষের দীর্ঘ শ^াস আর চোখের জলে কুমার নদের পাড়ে ৫ টি গণকবরে সমাহিত করা হয় তাদের।

তাদের সাথে ওই রাতে আরও দু’জন গ্রামবাসি মারা যান। তাদের একজন হল-রঙ্গ বিবি, যিনি তার মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের রাতে রান্না করে খাইয়ে ছিলেন। অপরজন হলেন মুক্তিযোদ্ধাদের পথ প্রদর্শক ফনি ভূষণ কুন্ডু।

এলাকাবাসী সহযোগিতায় দেশ স্বাধীনতা লাভের পরপরই গঠিত হয় ‘কামান্না ২৭ শহীদ স্মৃতি সংঘ’। দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছর পর, আজও ২৭ শহীদের রক্তস্নাত স্থানটি সংরক্ষণ বা স্মরন করে রাখার মত কিছুই নির্মিত হয়নি। শুধুমাত্র গণকবরগুলো ঘেষে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেছে গ্রামবাসী।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের কমান্ডার বলেন, শহীদ পরিবারগুলো খুঁজে পূনর্বাসনসহ স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কিছু একটা করা অতি জরুরি।

এ বিষয়ে শৈলকুপা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওসমান গণি বলেন, অতিদ্রæতই একটা ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button