
রামিম হাসান, ঝিনাইদহের চোখঃ
মাঠের পর মাঠ পেয়াজ ক্ষেত। বাড়িগুলোতে বসার উপায় নেই, পারিদিকে ছড়িয়ে আছে পেয়াজ। রাতে ঘুমানোর মতো সামান্য জায়গা রেখে বাড়ির সবটুকু জায়গায় রাখা হয়েছে এই পেয়াজ। এখনও ক্ষেতে রয়েছে পেয়াজ, যা কৃষক উঠিয়ে বাড়িতে আনছেন। স্তুপ করে রাখছেন বিক্রির অপেক্ষায়। এই অবস্থা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সাধুহাটি গ্রামের।
স্থানিয়রা বলছেন, গোটা শৈলকুপা উপজেলায় প্রচুর পরিমানে পেয়াজের চাষ হয়ে থাকে। তার মধ্যে সবচে বেশি চাষ হয় এই সাধুহাটি গ্রামে। নানা জাতের পেয়াজের চাষ হয় তাদের গ্রমাটিতে। কৃষকদের ভাষায় এই চাষটি লাভজনক হওয়ায় তাদের আগ্রহ বেড়েছে, প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে পেয়াজ চাষ।
কৃষি বিভাগের একটি সুত্রে জানিয়েছেন, শৈলকুপা উপজেলায় মোট চাষযোগ্য জমি আছে ২৮ হাজার ৫০০ হেক্টর। তার মধ্যে এ বছর পেয়াজের চাষ হয়েছে ৬১৫৫ হেক্টর জমি। আর শুধু সাধুহাটি গ্রামেই পেয়াজের চাষ হয়েছে ৩৫০ হেক্টর জমিতে। যা ওই গ্রামের মোট চাষযোগ্য জমির অর্ধেক বলে জানিয়েছেন স্থানিয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনোজ কুমার বিশ^াস।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সনজয় কুমার কুন্ডু জানান, তাদের উপজেলাতে দিনের পর দিন পেয়াজের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সময়ের এই এলাকায় ধান চাষের প্রাধাণ্য ছিল। এখন সেখানে পেয়াজের চাষ বাড়ছে। গত ১০ বছরে এই চাষ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান, বারি-১, লাল তীর, লাল তীর কিং সহ বেশ কয়েকটি জাতের পেয়াজ বেশি চাষ হচ্ছে। এ বছর বেশ কিছু কৃষক সুখসাগর জাতটিও চাষ করেছে। গোটা উপজেলায় পেয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা তাদের ক্ষেত থেকে পেয়াজ উঠিয়ে ঘরে আনতে শুরু করেছেন। তবে বাজারে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর পেয়াজের মুল্য কিছুটা কম। উৎপাদন বেশি হওয়ায় তারপরও কৃষক পেয়াজ চাষে লাভবান হবেন বলে আশা ওই কর্মকর্তার।
সরেজমিনে শৈলকুপা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে মাঠের পর মাঠ শুধু পেয়াজের ক্ষেত। যেখানে কাজ করছেন কৃষকরা। কেউ পেয়াজ তুলছেন, কেউ বস্তা ভরছেন। আবার কেউ বস্তা মাথায় নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন।
উপজেলার সাধুহাটি গ্রামের কৃষক সমশের আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির বাইরে মেয়েরা পেয়াজ থেকে গাছ কেটে আলাদা করছেন। বাড়ির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পেয়াজ। ঘর-বারান্দা কোখাও একটু খালি জায়গা নেই। রাতে শোবার জন্য ঘরের মধ্যে যে খাটটি রয়েছে, তার নিচেও আছে পেয়াজ। তিনি জানান, এবছর তিনি সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে পেয়াজের চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৬ বিঘা করেছেন লাল তীর জাত, বাকিটা সুখসাগর জাত। যার মধ্যে অর্ধেক পরিমান জমির পেয়াজ বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। এখনও মাঠে পেয়াজ রয়েছে। তিনি জানান, প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এক বিঘায় ১ শত মন পেয়াজ পাচ্ছেন। যা বিক্রি করে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা হবে। এই চাষে ক্ষেতের ফসল ভালো হওয়ায় খুশি তিনি।
ওই গ্রামের আরেক কৃষক শাহিনুর রহমান জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে পেয়াজ চাষ করেছেন। মাঠ থেকে পেয়াজ উঠিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসার কাজে ব্যস্ত তিনি। এই ক্ষেত থেকে তিনি ৩ শত মন পেয়াজ পাবেন আশা করছেন। যা বিক্রি করে প্রায় দেড় লাখ টাকা পাবেন। এই চাষ করতে তার ৫০ হাজারের কিছু বেশি খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের এলাকায় পেয়াজের চাষ ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে প্রতিটি কৃষকের এই চাষ রয়েছে।
উপজেলার বাখরবা গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, এই পেয়াজ কাটার পর তারা পাট চাষ করবেন। পাট কেটে ধান করবেন। বছরে তিনটি ফসল পাচ্ছেন তারা। যে কারনে পেয়াজের চাষটি দ্রæত প্রসার ঘটছে। তিনি আরো জানান, সরকারি ভাবে এই উপজেলাতে পেয়াজ সংরক্ষনের কোনো ব্যবস্থা নেই। যে কারনে কৃষকরা সংরক্ষন করতে পারেন না। তাই তারা অনেক সময় সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন।
সাধুহাটি বøকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনোজ কুমার বিশ^াস জানান, তার এই বøকে ৭ হাজার হেক্টর চাষযোগ্য জমি আছে। আর ১৫৬০ টি কৃষি পরিবার রয়েছে। এ বছর সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেয়াজের চাষ হয়েছে। প্রায় সকল পরিবারের রয়েছে পেয়াজের চাষ। এই চাষটি ক্রমেই বাড়ছে বলে তিনি জানান।
শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোজ কুমার কুন্ডু জানান, উপজেলায় পেয়াজ চাষ ক্রমেই বাড়ছে। কৃষকরাও এই চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তবে এখানে একটি কোল্ডস্টোর প্রতিষ্ঠা জরুরী। তাহলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মুল্য পেতেন। অনেক সময় সংরক্ষন করতে না পেরে অল্প টাকায় তারা উৎপাদিত কৃষি পন্য বিক্রি করতে বাধ্য হন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।