‘গলাকাটা মসজিদ’, ঝিনাইদহ জেলার ঐতিহ্য
ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহ জেলার ঐতিহ্য ‘গলাকাটা মসজিদ’। জেলার বারোবাজারের তাহেরপুর রাস্তাটির পাশেই অবস্থিত ‘গলাকাটা দিঘি ঢিবি মসজিদ’। গলাকাটা মসজিদটির পাশেই অবস্থিত গলাকাটা দীঘি। এই দীঘিটি খান জাহান আলী কর্তৃক নির্মিত বলে জনমত রয়েছে। আর ঠিক এই দীঘির দক্ষিণ পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক ‘গলাকাটা মসজিদ’। গলাকাটা মসজিদ এর অবস্থান ঝিনাইদহ জেলা সদর হতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে।
নব্বই দশকের দিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর খনন করে এবং মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তী সময়ে মসজিদটি খুব ভালোভাবে সংস্কার করা হয়। চারটি ৬ কোণাকৃতি বড় পিলার এর উপর বর্গাকৃতি প্রধান মসজিদটি স্থাপিত এবং এর প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ২৫ ফুট এবং এর দেয়াল ৫ ফুট এর মত চওড়া। মসজিদটি ৬ গম্বুজ বিশিষ্ট এবং এর পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মেহরাব আর টেরাকোটার অলংকরণ করা আছে।
গলাকাটা মসজিদের পূর্ব দিকে রয়েছে তিনটি প্রবেশদ্বার এবং উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিকে দু’টি করে প্রবেশদ্বার রয়েছে। প্রবেশদ্বারগুলোর উপর রয়েছে সুচাল খিলান। উত্তর ও দক্ষিণ দিকের প্রবেশদ্বার দুইটি ইটের জাল করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেবলা করার দেয়ালটিতে তিনটি অর্ধবৃত্তাকৃতির সুসজ্জিত মেহরাব আছে আর এই মেহরাবগুলির দুই পাশে রয়েছে পোড়া মাটির দিগন্ত রেখাকৃতির বাধন।
আরো আছে বিভিন্ন প্রকার জ্যামিতিক ও ফুলের নকশা, এগুলোর ভিতর দিকে আছে পোড়া মাটির ঘণ্টা ও চেইন নকশা। তিনটি মেহরাবের প্রান্তভাগ ফ্রেম দ্বারা বাঁধানো। উত্তর ও দক্ষিন পার্শ্বের মেহরাবের আরো ক্ষেত্রাকৃতির ফ্রেমের মধ্যে পোড়া মাটির জ্যামিতিক নকশা রয়েছে। এই মসজিদের সাথে বাগেরহাট ষাট গম্বুজ মসজিদ এর মিল রয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সংস্কার ও সংরক্ষনের আগে মসজিদের দেয়ালগুলোর উচ্চতা নির্দিষ্ট ছিল এর কোনো গম্বুজ ছিল না। পরবর্তীতে কয়েকটি গম্বুজসহ মসজিদটি পূর্ণনির্মাণ করা হয়। এটি উদ্ধারের পূর্বে স্থানীয়দের মধ্যে অনেক মতভেদ ছিল। অনেকে এটিকে মন্দির বলেও দাবি করেছিল। তবে বৃটিশ সরকারের ভূমি রেকর্ডে এটি মসজিদ নামেই রেকর্ড ছিল। পরবর্তীতে খননের পর তাই প্রমাণ হয়।