জমে উঠেছে সেমির লড়াই, দাবিদার ৮ দল
#ঝিনাইদহের চোখঃ
বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল, ফাইনালসহ অনুষ্ঠিত হবে মোট ৪৮টি ম্যাচ। এর মধ্যে ৩০টি ম্যাচ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। প্রতিটি দলের খেলার কথা ৯টি করে ম্যাচ। এর মধ্যে ৬টি কিংবা ৭টি পর্যন্ত ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে; কিন্তু এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি কারা খেলছে সেমিফাইনাল।
যদিও দুই দলের এখনও পর্যন্ত বিদায় নিশ্চিত হয়েছে, আফগানিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। দুই দলের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার কারণে সেমির চারটি জায়গার জন্য লড়াই এখন টিকে আছে ৮ দলের মধ্যে। অর্ধেকেরও বেশি পথ পাড়ি দেয়ার পর বিশ্বকাপ এখনও পুরোপুরি উন্মুক্ত। এই আট দলের মধ্যে যে কোনো চারটি দল যেতে পারে সেমিফাইনালে।
বোঝাই যাচ্ছে, বিশ্বকাপের শুরুতে বৃষ্টি যতই বাগড়া দিক না কেন, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পয়েন্ট টেবিলের লড়াই তুমুলভাবে জমে উঠেছে। প্রথমত শুক্রবার রাতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়ে পয়েন্ট টেবিল জমিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
পরেরদিন তো এবারের বিশ্বকাপের বড় অঘটনই ঘটতে যাচ্ছিল। আফগানিস্তানের কাছে হারতে বসেছিল ভারত। যদিও শেষ পর্যন্ত ১১ রানের জয়ে কোনোমতে মান রক্ষা করতে পেরেছিল কোহলির দল। আবার একই দিন দারুণ এক শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৫ রানে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ওই দুই ম্যাচের ফল যদি একটু এদিক-সেদিক হয়ে যেতো, তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায়, পয়েন্ট টেবিলের হিসাব-নিকাশ হয়ে উঠতো আরও জটিল। তবুও, রোববার দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিদায় করে দিয়ে সেমির রেসে পাকিস্তান ফিরে আসার পর টেবিলের হিসাব-নিকাশ নিয়ে আবারও বসতে হচ্ছে বোদ্ধাদের।
পয়েন্ট টেবিলে সবচেয়ে সবুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। কিউইরা তো খুবই সৌভাগ্যবান। তিনটি ম্যাচে হারতে হারতে জিতে গেছে তারা। যে কারণে, এখনও পর্যন্ত অপরাজিত ব্ল্যাক ক্যাপসরা। একটি ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। ৬ ম্যাচের ৫টিতে জিতে নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট এখন ১১। আর একটি ম্যাচ জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাবে কিউইদের। তাদের সামনের দুই ম্যাচ পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে।
অস্ট্রেলিয়া ৬ ম্যাচের একটিতে হেরেছে, জিতেছে ৫টিতে। পয়েন্ট ১০। দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও সেমি নিশ্চিত করার জন্য তাদের প্রয়োজন মাত্র ২ পয়েন্ট, অর্থাৎ একটি মাত্র জয়। ম্যাচ বাকি এখনও ৩টি। তিন প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। বলা যায় তিন কঠিন প্রতিপক্ষ। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে দুর্বল প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রমাণিত। কিন্তু কোনদিন জ্বলে ওঠে বলা কঠিন।
ভারতের সামনেও খুব সহজ পথ। এখনও চার ম্যাচ বাকি। যে ৫ ম্যাচ খেলেছে এর মধ্যে ৪টিতে জয়, ১টি পরিত্যক্ত। যে কারণে তাদের পয়েন্ট মোট ৯। বাকি চার ম্যাচের ২টিতে জিতলেই সেমি নিশ্চিত তাদের। বাকি থাকা চার প্রতিপক্ষ হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা। চার ম্যাচের অন্তত দুটিতে তো জিতবেই ভারত, আগাম বলা যায়।
নিরাপদে রয়েছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ তিন দলই। চার নম্বরে রয়েছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। তাদেরই থাকার কথা ছিল সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায়। কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, যে তাদেরও বিদায় নেয়ার সম্ভাবনা আছে। তাদের আগামী তিন প্রতিপক্ষ খুবই কঠিন, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং নিউজিল্যান্ড।
ইংল্যান্ড ৬ ম্যাচ খেলে ৪ জয়ের পয়েন্ট অর্জন করেছে ৮। আর একটি ম্যাচ জিতলে শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে টিকে থাকবে, তিন ম্যাচে হারলে তো কথাই নেই, বিদায় নিশ্চিত। ইতিহাস বলছে, গত ২৭ বছর বিশ্বকাপে ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে পারে না ইংলিশরা।
শীর্ষে থাকা চার দলে তিনটি নিরাপদ, ইংল্যান্ড অনিরাপদ থাকার কারণে পয়েন্ট টেবিলের পঞ্চম, ৬ষ্ঠ, সপ্ত এবং অষ্টম স্থানে থাকা বাকি চার দলের সামনে সেমিতে খেলার সম্ভাবনা এখনও টিকে আছে। কিভাবে? সে হিসেব দেখুন…
৫ নম্বরে থাকা শ্রীলঙ্কার অর্জন ৬ পয়েন্ট। বাকি আছে এখনও তিন ম্যাচ। এই তিন প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ভারত। এই তিন ম্যাচের দুটিতেও যদি তারা জিততে পারে, তাহলে পয়েন্ট হবে ১০। তিনটিতে জিতলে তো কথাই নেই…, পয়েন্ট হয়ে যাবে ১২। ১টিতে জিতলে হবে ৮। ৮ কিংবা ১০ পয়েন্ট- যাই হোক শেষ পর্যন্ত রান রেটের ব্যবধানে হয়তো বা টিকেও যেতে পারে তারা। সামনের ম্যাচগুলোতে যে কি করবে লঙ্কানরা, সেটা এখনই বলা মুস্কিল।
৬ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচ থেকে অর্জন ৫ পয়েন্ট। সামনের তিন প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারত। টাইগারদের লক্ষ্য, এই তিন ম্যাচ থেকে অন্তত দুটি জয়। তখন পয়েন্ট হবে ৯। যদি ইংল্যান্ড কোনো ম্যাচ আর জিততে না পারে, শ্রীলঙ্কা সর্বোচ্চ এক ম্যাচে জয় পায়, তাহলে কপাল খুলতে পারে বাংলাদেশেরও। যদি টাইগাররা বাকি তিন ম্যাচেই জিতে যেতে পারে, তাহলে তো কথাই নেই, সেমির দরজা হয়তো অটোমেটিক খুলে যাবে তাদের সামনে।
সাত নম্বরে থাকা পাকিস্তানেরও পয়েন্ট ৫। বাকি এখনও তিন ম্যাচ। তিন প্রতিপক্ষ হচ্ছে নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ। কিউইদের বিপক্ষে পাকিস্তান সব সময়ই ফেবারিট। এটা শ্বাশত বিধান যেন। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তারা যেভাবে খেলেছে, এভাবে যদি নিউজিল্যান্ডকেও হারিয়ে দেয়, বাকি দুই প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ। তিন ম্যাচেই তাদের জয়ের সম্ভাবনা আছে।
পাকিস্তান যদি তিন ম্যাচের দুটিতেও জেতে, বাংলাদেশের কাছে হারে- তখন বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের পয়েন্ট হয়ে যাবে সমান। তখন রান রেট বিবেচনায় আসবে। তবে তার আগে শর্ত হচ্ছে ইংল্যান্ডকে তিন ম্যাচেই হারতে হবে এবং শ্রীলঙ্কাকে অন্তত দুই ম্যাচে হারতে হবে।
এর মধ্যে সম্ভাবনা আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও। যদিও ৬ ম্যাচ খেলে তাদের অর্জন কেবল ৩ পয়েন্ট। বাকি আছে ৩ ম্যাচ। এই অবস্থায় খালি চোখে হয়তো ক্যারিবীয়দরে সম্ভাবনা একেবারেই নেই। কিন্তু কাগজে-কলমে তো এখনও তারা টিকে আছে সেমির লড়াইয়ে। সেই হিসেবটা হচ্ছে, শেষ তিন ম্যাচে তারা যদি ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানকে হারিয়ে দেয়, তাহলে পয়েন্ট হয়ে যাবে ৯।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানেরও পয়েন্ট যদি ৯ হয়, তাহলে রান রেটের হিসাব সামনে চলে আসবে। তবে, তার আগে সেই একই শর্ত, ইংল্যান্ডকে তিন ম্যাচেই হারতে হবে এবং শ্রীলঙ্কাকে অন্তত দুই ম্যাচে হারতে হবে। তবেই এই হিসেবে আসা সম্ভব।
নিশ্চিত জটিল হিসাব-নিকাশের সামনে দাঁড়িয়ে পয়েন্ট টেবিলে থাকা শেষ চারটি দলের বিশ্বকাপে সেমির ভাগ্য। আগামী দিনগুলোতে কার কি অবস্থা দাঁড়ায়, এখন সেদিকেই চোখ পুরো ক্রিকেট বিশ্বের।