ঝিনাইদহ থেকে বনপাড়া সড়ক হবে দুই লেন
#ঝিনাইদহের চোখঃ
সময়ের পরিবর্তন আর অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পল্লী এলাকার বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়ছে। অজপাড়াগাঁয়ের সড়কেও এখন চলাচল করে পণ্যবাহী ট্রাক। এর ফলে দ্রুতই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পল্লীর সড়ক। সীমিত বরাদ্দের কারণে পল্লীর সড়ক প্রতিবছর মেরামতও সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে যাতায়াতের অযোগ্যই থাকছে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সড়কগুলো। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) আওতাধীন সড়কগুলো দুই লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ২৬০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা হবে। স্থানীয় জনগণের সুবিধা বাড়াতে এসব সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত স্থানীয় সড়কগুলোও আসবে উন্নয়নের আওতায়। এ লক্ষ্যে ৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে বড় ধরনের আর্থিক সহায়তার অনুসন্ধান করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ‘পশ্চিম অঞ্চল অর্থনৈতিক করিডোর ও আঞ্চলিক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিল ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা মিলে ব্যয় করবে ৭ কোটি ডলার। অবশিষ্ট অর্থ ঋণ হিসেবে পেতে সম্ভাব্য উৎস খোঁজ করতে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় থেকে ইআরডিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর ভিত্তিতে প্রাথমিক আলোচনায় ৪০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের সংস্থা মাল্টিল্যাটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সির (মিগা) মাধ্যমে অন্য সংস্থার ঋণ হিসেবে সংগ্রহ করা হবে ১৮ কোটি ডলার। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক। এ প্রকল্পে এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) ঋণ পাওয়া যাবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয়েছে ধারণাপত্রে।
বিশ্বব্যাংক সূত্র জানায়, প্রকল্পটির আওতায় ২৬০ কিলোমিটার সড়ক করিডোর উন্নয়ন করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ভোমরা থেকে সাতক্ষীরা হয়ে যশোরের নাভারণ পর্যন্ত সড়ক। যশোর থেকে ঝিনাইদহ পর্যন্ত সড়কের উন্নয়ন করা হবে এর আওতায়। প্রকল্পটির অংশ হিসেবে ঝিনাইদহ থেকে বনপাড়া হয়ে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে অর্থ দেবে এআইআইবি।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক উন্নয়নের সুফল সড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনের কাছে পৌঁছাতে নেওয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। জেলা পর্যায়ের এসব সড়কের দুপাশের ইউনিয়ন সড়কের উন্নয়ন হবে প্রকল্পটির আওতায়। এর ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্থানীয় বাজার সুবিধা পাবেন এলাকার লোকজন। এ ছাড়া এসব সড়কের মাধ্যমে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
ধারণাপত্রে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট যাত্রীর ৭০ শতাংশ ও মোট পণ্যের ৬০ শতাংশ পরিবহন করা হয়ে থাকে সড়কপথে। দেশের মোট সড়কপথের দৈর্ঘ্য ৩ লাখ ৭৫ হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় ২১ হাজার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। সাত হাজার কিলোমিটার জাতীয় ও আঞ্চলিক সহাসড়ক। জেলা সড়কের দৈর্ঘ্য ১৩ হাজার ১০০ কিলোমিটার। আঞ্চলিক সড়কগুলোর উন্নয়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রাধান্য দিযে আসছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, দেশের আঞ্চলিক সড়কগুলোর দেখভাল করে এলজিইডি। এ সংস্থার আওতায় ৩৭ হাজার ৮০০ কিলোমিটার জেলা সড়ক, ৪৪ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক, ৪৪ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক ও ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক রয়েছে। দেশের ৬৬ শতাংশ মানুষ পল্লীর এ সড়কগুলো ব্যবহার করে থাকে। তাদের সুবিধা বাড়াতে এলজিইডি উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কগুলো দুই লেনে উন্নীত করতে চায়।
বিশাল দৈর্ঘ্যের সড়ক থাকলেও বাংলাদেশে বিনিয়োগের অভাবে স্থলপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, দেশের মাত্র ২৭ শতাংশ পল্লী সড়ক ইট দিয়ে বাঁধানো রয়েছে। ইটের ব্যবহারের আওতায় এসেছে ৪০ শতাংশ প্রধান সড়ক। ইটের আওতায় আসা সড়কের মাত্র অর্ধেকের অবস্থা ভালো। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ে নিয়ে যেতে এ খাতে প্রতিবছর ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার করে বিনিয়োগ করতে হবে। সরকারের এ সামর্থ্য না থাকায় বিশ্বব্যাংক সহায়তা দিচ্ছে বলে ধারণাপত্রে দাবি করেছে।