৭ জন খেলোয়াড় নিয়েও জিতলো মধুহাটী প্রাইমারী স্কুল
#এলিস হক, ঝিনাইদহের চোখঃ
স্থান-বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়াম।
তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। সাধুহাটী ইউপি বনাম মহারাজপুর ইউপি। কিন্তু তা না হয়ে শিরোনাম লিখতে হবে-৭ জন খেলোয়াড় বনাম ১১ জন খেলোয়াড়!! মাঠে একটি দলের ১১ জন খেলোয়াড় নিয়ে খেলারই কথা। কী আশ্চর্য হলেন? আশ্চর্যের কিছু নাই।
বয়স কম থাকলেও দৈহিক গঠনে কিছুটা লম্বা। দৈহিক মাপার সময় ঐ ৪ কিশোরী বাদ পড়েন। কেউ কেউ বলছেন-বাদ পড়া এটা দুর্ভাগ্যজনক।
ম্যাচ শুরুর আগে আজ বুধবার বিকেলে দেখা গেলো-দলে বাড়তি খেলোয়াড় তালিকায় নাম থাকলেও মাঠে উপস্থিত ছিলেন না। তার উপর বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে উপস্থিত হন দলীয় ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম। তিনিই খেলোয়াড় সমেত দলটিকে সাধুহাটী ইউনিয়ন হতে সিএনজি গাড়িতে করে স্টেডিয়ামে নিয়ে আসেন। যাইহোক, দলীয় ম্যানেজার বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। ঐ ৪ জন বাদে বাকিরা বেশ হতচকিত হয়ে যান। তিনিই বুকে সাহস করে ৭ খেলোয়াড় নিয়ে মাঠে নামান।
অথচ মাঠে নেমেই মধুহাটী প্রাইমারী স্কুলের কিশোরী খেলোয়াড় কী দুর্দান্ত লড়াই! দৃঢ়জেতা মনোবল নিয়ে মাঠে নামলো। সবার চোখ ছানাবড়া! এটা বাস্তবের চেয়েও বড় কঠিন। অথচ তারাই কিনা রূপকথা গল্পের মতো করে শোনাবেন নানা-নাতিরা…কি করে সম্ভব?
এই ঝিনাইদহ শহরেও সম্ভবত কোনো গোষ্ঠীরা এই কমতত্ত্বের সংখ্যা নিয়ে মাঠে খেলতে সাহস করবে না। বা রাজিই হবে না কোনো মহাজনরা!! যা করে দেখিয়ে দিলেন-দেখেন ভাইয়া আমরাও ৭ জনকে নিয়ে ঐ ১১ জনের দলকে কিস্তিমাৎ করে এলাম…আপনেরা কি পারবেন না ভাইয়া আমাদের মতো করে ঐ ইতিহাস সৃষ্টি করতে?
লোকে বলবেনই-এটা একটা কাল্পনিক সিনেমার রূপ কাহিনী। কিচ্ছু করার নেই….ভায়া…নানা মুনিব নানা মত…।
এদিকে প্রতিপক্ষ দল মহারাজপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর সরকারি প্রাইমারী স্কুলের কিশোরীরা কম খেলোয়াড় খেলতে দেখে বেশ খুশিতে গদগদ!!
এই দলে ১১ জনই খেলেন লক্ষীপুর প্রাইমারী স্কুল। কিন্তু কোথায় কী!
মধুহাটী প্রাইমারী স্কুলের কিশোরী স্বর্ণা-সুমাইয়া-শাহারা-শিউলী-ফাহিমা-শাপলারা সারাক্ষণ মাঠে বল ধরে নিজেদের মধ্যে পায়ে পায়ে রাখেন। বেশ কয়েকবার জোরালো আক্রমণ চালিয়েছেন ঐ লক্ষীপুর স্কুলের সীমানায়…এদের খেলা দেখে উপস্থিত সকল দর্শক মধুহাটী স্কুলের পক্ষে সমর্থন দিতে দেখা যায়।
পূর্ণ সমর্থন পায় মধুহাটী স্কুলের কিশোরীরা। তারা আরো উজ্জীবিত হয়ে উঠেন। অথচ সাধুহাটী হতে কোনো দর্শক বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে কেউ আসেননি। তবুও ঝিনাইদহ শহরের মানুষ তাদের খেলা দেখে প্রতি মুহূর্মুহু করতালি দিয়ে সমর্থন প্রকাশ করেন।
খেলার শেষদিকে মধুহাটী প্রাইমারী স্কুলের ৭ নম্বর জার্সি ক্ষুদে কিশোরী খেলোয়াড় শিউলী চমৎকার শটে একমাত্র জয়সূচক গোল দিয়ে মাঠ ছাড়েন। পরে ওরা সবাই আনন্দ উল্লাস করতে করতে বাড়িতে ফিরে গেছেন।
খেলা শেষে বিজয়িনী ৭ কিশোরীরা এই প্রতিবেদককে বাগে পেয়ে বলছে-‘দেখেন ভাইয়া…আমরা ৭ জন মিলল্যা ম্যাচ বাইর কইরা নিয়াসছিনি..’! কিশোরীরা প্রমাণ করলো যে, ওদের ১১ জন তাদের কাছে কিছুই না। ৭ জন খেলোয়াড় নিয়েও ম্যাচ জেতানো যায়।
এই দুর্বিনীত খেলা দেখে মাঠের রেফারি শেখ মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন কেবলিই মুচকি হাসেন…আর তাদের খেলা দেখেন তিনিই মুখে বাঁশি নিয়ে…মধুহাটীর কিশোরীরা কি করে?
রেফারির দায়িত্বে ছিলেন রবিউল ইসলাম। সহকারীরা ছিলেন মোহাম্মদ আলী ও মোঃ সাইফুল ইসলাম।
এলিস হক
ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার