ক্যাম্পাসজানা-অজানাদেখা-অদেখা

স্বপ্ন যখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ঝিনাইদহের চোখঃ

দুই পাশে গাছের সারি। মাঝখানে সবুজের বুক চিরে সৃষ্টি হয়েছে জনপথ কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক।

রাস্তার উপর থেকে তাকালে দেখা যায় অরণ্যের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এটি যেন প্রকৃতির রাজ্যের এক মুকুটহীন সম্রাট। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম একটি সেরা বিদ্যাপীঠ।

এটি স্থাপিত হয়েছে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর। ইতোমধ্যে ঢাবি, জাবি, জবি, রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। আবার দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সমাগত। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠিত হওয়া ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু আসন সংখ্যার বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেশি হওয়ায় নির্ধারিত আসনের বাইরে স্বপ্নের বিচ্ছুরণ ঘটেছে অনেকের। ফলে দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন স্বপ্নের ছুটোছুটি শিক্ষার্থীদের।

শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরের সবুজ রাণী ক্যাম্পাস খ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি নিমিষেই মন কেড়ে নেবে যে কারোর। তবে দীর্ঘ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এই সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এক দুরূহ ভর্তিযু্দ্ধে। ১৭৫ একরের এ ক্যাম্পাসে প্রতিবারের ন্যায় এবারও ভর্তি পরীক্ষা আগামী ৪-৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলছে। এবছর ৪টি ইউনিটের অধীনে ৩৪ টি বিভাগে মোট ২ হাজার ৩০৫ আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ৬১ হাজার ৯৪২ টি। প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বেন ২৭ জন ভর্তিচ্ছু। তবে কেমন হবে সেই কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর অদম্য মেধার প্রতিযোগিতা? কি কি পন্থা অবলম্বন করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আসন নিজের নামে করে নিতে পারবেন? বিগত পরীক্ষাগুলোর আলোকে কতটুকু প্রস্তুতি নিতে হবে প্রতিযোগীদের? কি কি নিয়ম অনুসরণ করে অতি সহজেই ইবির ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবেন শিক্ষার্থীরা?

এসব বিষয়ে নতুন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিট ভিত্তিক পরামর্শ দিয়েছেন বিগত ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ এবং ‘ডি’ ইউনিটে চান্সপ্রাপ্ত প্রথম সারির শিক্ষার্থীরা। ‘এ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া বর্তমান আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আব্দুল করিম ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘তোমরা যারা দিনের পর দিন দীর্ঘ দিন পরিশ্রম করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছ, তাদের জন্য ভর্তিযুদ্ধে সফল হওয়ার প্রথম এবং প্রধান শর্ত হচ্ছে আত্মবিশ্বাস এবং কঠোর মনোবলের উপর অটল থাকতে হবে। ‘এ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের জন্য বলবো, বাজারে প্রচলিত গাইড মুখস্তের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে দাখিল এবং আলিমের মূল বইয়ের অধ্যায়গুলো অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি দিয়ে পড়বে। বিশেষ করে আরবি ব্যাকরণের মৌলিক বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা ছাড়া ‘এ’ ইউনিটে চান্স পাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং মারফুয়াত, মানসুবাত, মাজরুরাত, মাজঝুমাত, এরাব, আদাদ, মাদুদ এবং মুরাব, মাবনি সম্পর্কে মৌলিক বিধি বিধানগুলো আয়ত্ব করতে হবে।

নৈর্ব্যক্তিকের সাথে লিখিত প্রশ্নগুলোর ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া। কারণ, এক্ষেত্রে লিখিত প্রশ্ন ক্রস নেই, অধিকাংশ শিক্ষার্থী গতবছর ফেল করেছে। সুতরাং বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে খেয়াল রাখতে হবে।’ এ দিকে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ২য় স্থান অর্জন করা বর্তমান আইন বিভাগে পড়ুয়া ছাত্রী এল এন সুলতানা বলেন, ‘যেহেতু এবার প্রতি আসনের বিপরীতে গড়ে ২৭ জন পরীক্ষার্থী লড়বে, সেহেতু একটি বেশ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হতে চলেছে।

একে তুচ্ছভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ থাকছে না ভর্তিযোদ্ধাদের। শেষ মুহূর্তে এসে নতুন কিছু না পড়ে আগে পড়া বিষয়গুলো বারবার রিভিশন দিতে হবে। সব টপিক সম্পর্কে জানার থেকে বেশি জরুরি টপিকগুলো সম্পর্কে যেন সুস্পষ্ট আর পরিপূর্ণ ধারণা থাকে, সে দিকে নজর দিতে হবে। ২০ নম্বরের লিখিত প্রশ্ন থাকবে এবং সেখানে ন্যূনতম ৭ না পেলে খাতা মূল্যায়ন হবে না, বিধায় এমনভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে, যেন প্রশ্ন দেখলে অপশন ছাড়াই উত্তর করা যায়।

ইংরেজির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ইবিতে বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে খুব বেশি কমন পাওয়া যায় না। তবে প্রশ্নব্যাংক সমাধান করার গুরুত্ব অবশ্যই আছে। কারণ, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ই একটা নিজস্ব প্যাটার্নে প্রশ্ন করে থাকে। বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে সেই প্যাটার্ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এতে প্রস্তুতি নেয়া আরও সহজ হয়ে যায়। সব টপিক থেকে তো আর প্রশ্ন হয় না। প্রশ্ন হয় কিছু নির্দিষ্ট টপিক থেকে। প্রথমে সেই প্যাটার্নটা বুঝতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় জয়ী হতে অতিরিক্ত পড়াশোনার চেয়ে কৌশলী পড়াশোনা বেশি ফলদায়ক।

নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে ভর্তি পরীক্ষার বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা জানিয়েছেন ‘সি’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ২য় হওয়া বর্তমান হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের শিক্ষার্থী সোনিয়া তূন সারা।তিনি বলেন, ‘কখনোই হতাশ হওয়া যাবে না। ব্যর্থ হলেই সাফল্য শেষ হয়ে যায় না।দৃঢ় মনোবল নিয়ে সামনে এগোতে হবে। চান্স পাওয়াটা অনেকাংশে নিজের আত্মবিশ্বাস এবং পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে। আমি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ডি’ ইউনিটে ১০১তম হয়েছিলাম। কিন্তু বাতিল হয়ে পরবর্তী পরীক্ষায় ৪৬৯ তে চলে গেছি। সামান্যর জন্য ‘সি’ ইউনিটে চান্সটা কেটে গেছে। তাই বলে আমি নিজের মনোবল সামান্যও কমাইনি।ঠিক ইবি এর বিবিএতে ২য় স্থান করে নিয়েছি।

সুতরাং, তোমরাও পারবে। শুধু ভালোভাবে তোমাদের নির্ধারিত বিষয়গুলো পড়ে যাও। ‘ ‘ডি’ ইউনিটি ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৬তম স্থান করে নেয়া বর্তমান ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত রিমান আল হেলাল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার পূর্বে আমি ভাবতাম, যেভাবে পারি আমাকে চান্স পেতে হবে। আত্নবিশ্বাসী ছিলাম আমি চান্স পাব।

এজন্য যতটুকু পারি পড়াশোনার মধ্যে থাকতাম, মন না চাইলেও পড়তাম। ইবিতে ডি ইউনিটে চান্স পেতে হলে আমি মনে করি, লিখিত অংশে ভালো করতে হবে। এজন্য বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বারবার পড়তে হবে। প্রশ্নব্যাংক বার বার অনুশীলন করে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বারবার পড়তে হবে। যে যত অনুশীলন করবে, তার চান্স পাওয়া তত বেশি সহজ হয়ে যাবে।’

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button