শীত আসলেই কালীগঞ্জে দেখা মেলে মৌসুমী নারী পিঠা ব্যবসায়ীদের
হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহের চোখঃ
শীত আসলেই ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ফুটপাতগুলোতে দেখা যায় মৌসূমী পিঠা ব্যবসায়ীদের। শীত মৌসূম এলেই এ সব মৌসূমী পিঠা ব্যবসায়ীরা রাস্তার ধারে বসে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরী এবং বিক্রিয় করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তাই শীতের আবহে কালীগঞ্জে জমে উঠছে শীতের পিঠার ক্ষুদ্র ব্যবসা। পথে চলতে প্রায়ই দেখা মিলবে পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত নারীদের।
পুরুষদের পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহ করতে নারীরাও শীত আসলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পিঠা তৈরিতে। একটি বা দু’টি চুলার সাথে শীতের পিঠা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে রাস্তাার পাশে বসে পড়েন নারীরা। শীতকাল এলেই শহর অঞ্চলে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ী অধিকাংশই অসহায় গরীব নারীরা। তারা পিঠা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিছু দিনের জন্য হলেও এই উপার্জনে খানিকটা সহায়তা পায় তাদের পরিবার।
পিঠা তৈরিকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেয় অনেক খেটে খাওয়া দরিদ্র নারীরা। তাছাড়া পিঠা তৈরীর সরঞ্জামের দাম অনেক কম। তাই পিঠা কারীগর নারীরা শীত মৌসূম এলেই পিঠা তৈরির কাজে লেগে যান। অনেক জায়গায় দেখা যায় ক্রেতারা পিঠার সাথে ফ্রি পাওয়া যায় অনেক রকম ভর্তা। সর্ষে ভর্তা, শুটকি ভর্তা ও মরিচ ভর্তা এদের মাঝে অন্যতম। ফুটপাতেই তারা চুলার পাশে বসে পিঠা তৈরি করেন।
পিঠা বিক্রি করে তারা আর্থিক ভাবে কেমন লাভবান হচ্ছেন এমন কথা জিজ্ঞাসা করতে কালীগঞ্জের কোটচাঁদপুর রোডের নতুন বাজারের ছালমা বেগম (৩৫) নামক এক নারী পিঠা ব্যবসায়ী জানান, তার বাসা নতুন বাজার এলাকায়।
প্রতিদিন তিনি পিঠা বানাতে নতুন বাজারের সামনে পিঠা তৈরির সরঞ্জামাদি নিয়ে বসেন। তার কাছে প্রশ্ন করতেই উঠে আসে জীবিকা হিসেবে নেওয়া পিঠা তৈরির দৈনন্দিন জীবন। ভাপা পিঠা বিক্রি করেন তিনি। পিঠার দাম জানতে চাইলে তিনি জানান-ভাপা পিঠা ৫ টাকা। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলে তার পিঠা বিক্রি। মৌসুমি এই নারী পিঠা ব্যবসায়ীরা শুধু শীত কালেই এই ব্যবসা করেন।
তবে অন্য ঋতুতে তাদের কাজ কী? জানতে চাইলে আরেক নারী পিঠা ব্যবসায়ী সয়রোন নেছা বলেন, ‘যখন যা পাই তাই করি। তবে শীতের সময়ই শুধু পিঠা বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে। সারাদিন অনেক মানুষকে পিঠা বানিয়ে খাওয়ালেও তিনি তার নিজের পরিবারকে কখনও পিঠা বানিয়ে খাইয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিক্রি না হওয়া বাড়তি ঠান্ডা পিঠাগুলো আমরা খাই। বিক্রি শেষে প্রতিদিনই কিছু না কিছু পিঠা বেচে যায়। সেগুলো রাতের খাবার হিসেবে খাই।
কালীগঞ্জ ভূষন রোডের সর্ষে হাটের ফুটপাতে বসে পিঠা বিক্রয় করেন সাফুদা বেগম নামে আরেক নারী পিঠা ব্যবসায়ী তিনি পিঠা তৈরী করেন এবং তার স্বামী শফিকুল বিক্রিয় করেন। স্বামী-স্ত্রী দূজনে দূপুরের পর বসে পড়েন ফুটপাতে ভাপা পিঠা তৈরী এবং বিক্রয় করতে। রাত ১০ টা পর্যন্ত চলে তাদের ব্যবসা। তিনি জানান শীত সিজেনে পিঠা বিক্রি করে যা আয় হয় তার ওপর নির্ভর করে এ সময় আমাদের চলতে হয়।
তার স্বামী শফিকুল জানান, পিঠা তৈরির কাঁচামালের খরচ বেশি না হওয়ায় লাভের পরিমাণ বেশি। শহরের বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসাতে হলে চাঁদা দিতে হয় কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন না এসবের সম্মূখীন কোনদিন হননি। তবে পিঠা বিক্রি করে সঞ্চয় করা যদিও খুব একটা সহজ নয় তারপরও জানতে চাইলাম কোনো সঞ্চয় হয় কিনা?
সফুদা বেগম হেসে বললো সঞ্চয় অনেক দূরের ব্যাপার। এই টাকা দিয়ে সংসারের কিছুটা খরচ সাশ্রয় পায় তাঁর পরিবার। এই হচ্ছে খেটে খাওয়া নারী এবং পুরুষের দৈনন্দিন জীবন। অনেক কষ্ট করার পরও আমরা কোন সময় বসে থাকি না। কিছু না কিছু আমাদের উপার্জন করতেই হয়।