উম্মতে মুহাম্মদির মর্যাদা
ঝিনাইদহের চোখঃ
আল্লাহ তায়ালা যে বিষয়কে আমাদের জন্য পূর্ণতা দিয়েছেন, যে বিষয়টিকে নিজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন, সম্মানিতদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তার অনুগ্রহ ও দয়ায় তার নাম দিয়েছেন দ্বীন ও নেয়ামত, সেটাই সর্বাধিক পরিপূর্ণ ও যথাযথ দ্বীন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সূরা মায়েদা : ৩)।
রাসুলুল্লাহ (সা.)ও বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করেছেন। তার পবিত্র সত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। এর মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন। প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। এটিই স্পষ্ট সত্য। সঠিক পথ। সুস্পষ্ট হেদায়েত। যে বিষয়টি এমন তাই অধিক উপযোগী অনুসরণ করা এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারকের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে পর্যন্ত এর ওপর অবিচল থাকার জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বলে দিন, হে মানবকুল! তোমরা যদি আমার দ্বীনের ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে থাক তবে জেন, আমি তাদের এবাদত করি না যাদের এবাদত তোমরা কর আল্লাহ ব্যতীত। কিন্তু আমি এবাদত করি আল্লাহ তায়ালার যিনি তুলে নেন তোমাদের।
আর আমার প্রতি নির্দেশ হয়েছে যাতে আমি ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত থাকি। আর যেন সোজা দ্বীনের প্রতি মুখ করি সরল হয়ে এবং যেন মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত না হই। আর নির্দেশ হয়েছে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকবে না, যে তোমার ভালো করবে না, মন্দও করবে না। বস্তুত, তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আর আল্লাহ যদি তোমার ওপর কোনো কষ্ট আরোপ করেন তাহলে তাকে ছাড়া খ-াবার মতো কেউ নেই। পক্ষান্তরে যদি তিনি কিছু কল্যাণ দান করেন, তবে তার মেহেরবানিকে রোহিত করার মতো কেউ নেই। তিনি যার প্রতি অনুগ্রহ দান করতে চান স্বীয় বান্দাদের মধ্যে তাকেই দান করেন; বস্তুত তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু। বলে দাও, হে মানবকুল, সত্য তোমাদের কাছে পৌঁছে গেছে তোমাদের পরোয়ারদিগারের তরফ থেকে। এমন যে কেউ পথে আসে, সে পথ প্রাপ্ত হয় স্বীয় মঙ্গলের জন্য। আর যে বিভ্রান্ত ঘুরতে থাকে, সে স্বীয় অমঙ্গলের জন্য বিভ্রান্ত অবস্থায় ঘুরতে থাকবে। অনন্তর আমি তোমাদের ওপর অধিকারী নই। আর তুমি চল সে অনুযায়ী যেমন নির্দেশ আসে তোমার প্রতি এবং সবর কর, যতক্ষণ না ফয়সালা করেন আল্লাহ। বস্তুত তিনিই হচ্ছেন সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।’ (সূরা ইউনুস : ১০৪-১০৯)।
আল্লাহ তায়ালা নবী ও তাঁর অনুসারীদের কাছ থেকে রাসুলে করিম (সা.) এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন সে বিষয়ে অঙ্গীকার নিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আল্লাহ যখন নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান এবং অতঃপর তোমাদের কাছে কোনো রাসুল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্য বলে দেওয়ার জন্য, তখন সে রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি অঙ্গীকার করছ এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বললো, আমরা অঙ্গীকার করছি। তিনি বললেন, তাহলে এর সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সঙ্গে সাক্ষী রইলাম। অতঃপর যে লোক এ ওয়াদা থেকে ফিরে দাঁড়াবে, সে হলো নাফরমান। তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তারই অনুগত হবে এবং তার দিকেই ফিরে যাবে।’ (সূরা আলে ইমরান : ৮১-৮৩)।
যে ব্যক্তি এ অঙ্গীকার পূরণ করবে তার জন্য রয়েছে পরিপূর্ণ প্রতিদান এবং দ্বিগুণ রহমতের সুব্যবস্থা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মোমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর। তিনি নিজ অনুগ্রহের দ্বিগুণ অংশ তোমাদের দেবেন, তোমাদের দেবেন জ্যোতি, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়। যাতে কিতাবধারীরা জানে, আল্লাহর সামান্য অনুগ্রহের ওপরও তাদের কোনো ক্ষমতা নেই, দয়া আল্লাহরই হাতে, তিনি যাকে ইচ্ছা, তা দান করেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।’ (সূরা হাদিদ : ২৮-২৯)।
মোমিনরা যেহেতু সব নবী-রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছে তাই তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও আলোর ব্যবস্থাপনা। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রাসুল বিশ্বাস রাখেন ওইসব বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও। সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থগুলোর প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরদের প্রতি। তারা বলে, আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না। তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (সূরা বাকারা : ২৮৫)।
এই উম্মতের বয়সসীমা স্বল্প, তবে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণ দেওয়া হবে। দুনিয়াতে সময়ের বিবেচনায় এই উম্মত শেষে, তবে দুনিয়া ও আখেরাতে অবস্থান হিসেবে সর্বাগ্রে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা এবং উভয় আহলে কিতাব (ইহুদি ও খ্রিষ্টান) এর উদাহরণ হলো এমন এক ব্যক্তির মতো, যে কয়েকজন মজদুরকে কাজে নিয়োগ করে বলল, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এক কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আমার কাজ কে করবে? তখন ইহুদি কাজ করে দিল। তারপর সে ব্যক্তি বলল, কে আছ যে, দুপুর থেকে আসর পর্যন্ত এক কিরাতের বিনিময়ে আমার কাজ করে দেবে? তখন খ্রিষ্টান কাজ করে দিল। তারপর সে ব্যক্তি বলল, কে আছ যে, আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দুই কিরাত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করবে? আর তোমরাই (মুসলিমরা) হলে তারা (যারা অল্প পরিশ্রমে অধিক পারিশ্রমিক লাভ করলে)। তাতে ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা রাগান্বিত হলো, তারা বলল, এটা কেমন কথা, আমরা কাজ করলাম বেশি, অথচ পারিশ্রমিক পেলাম কম। তখন সে ব্যক্তি (নিয়োগকর্তা) বলল, আমি তোমাদের প্রাপ্য কম দিয়েছি? তারা বলল, না। তখন সে বলল, সেটা তো আমার অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা দান করি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য এই মিল্লাতে ইবরাহিমে এবং মুহাম্মদি শরিয়তে পরিপূর্ণতা ও ইবাদতের সহজতার মিলন ঘটিয়েছেন। এই দ্বীন আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বপ্রিয় দ্বীন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বপ্রিয় দ্বীন হচ্ছে মহানুভব ও হানিফ দ্বীন।’ তাই সৌভাগ্যবান সে যে ইসলামী ও নববি মত ও পথের ওপর অবিচল থাকে। যে এমনটি করবে তাকে আল্লাহ তায়ালা অহংকার, অহমিকা, শিরক, সন্দেহ, কপটতা ও ঝগড়া, সর্বোপরি মন্দ চরিত্র থেকে বাঁচিয়ে রাখেন।
অতএব ইসলামকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরুন। এই দ্বীনে ইসলামী মহান পালনকর্তার দ্বীন। মানুষ ও জিন উভয় জাতির জন্যই এই দ্বীন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কারও কাছ থেকে এই দ্বীন ব্যতীত অন্য কোনো দ্বীন গ্রহণ করবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্যকোনো ধর্ম তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সূরা আলে ইমরান : ৮৫)। অন্যদিকে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার সব উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে। তবে যে অস্বীকার করবে সে নয়। সাহাবায়ে কেরাম বলেন, কে অস্বীকার করবে ইয়া রাসুলাল্লাহ? রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে যাবে। আর যে অবাধ্য হবে সে অস্বীকার করল।’
৬ জমাদিউস সানি ১৪৪১ হিজরি মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত
অনুবাদ মুহিউদ্দীন ফারুকী