দরুদ পাঠের বহমুখী উপকার
রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওপর দরুদ পড়ার ব্যাপারে হাদিসে অগণিত ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। সৌভাগ্যবান ওই ব্যক্তি, যে দরুদ পাঠ করে। সে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়জগতে সফলকাম। দুনিয়াবাসীর সামনে কখনও লাঞ্ছিত এবং অপমাণিত হবে না। আল্লাহ তায়ালার দরবারেও নিরাশ হবে না। দুনিয়ায় সব পেরেশানি থেকে মুক্ত হয়ে সফলকাম হবে। আখেরাতেও গোনাহ থেকে পবিত্র হয়ে শহীদি মর্যাদা পাবে। জান্নাতে যাবে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা আমার নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সর্বাপেক্ষা বেশি দরুদ পড়ার নিয়মিত অভ্যাস বানাবে।’ (তিরমিজি : ৪৪৬)।
ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওপর দরুদ পড়া না হলে কোনো দোয়া আসমানের ওপরে ওঠে না অর্থাৎ কবুল হয় না। বরং আসমান ও জমিনের মাঝে থেমে থাকে।’ (তিরমিজি : ৪৪৮)।
দরুদ ও সালাম সম্পর্কে কোরআনে বর্ণিত আছে, ‘হে মোমিনরা! তোমরা নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ করো।’ (সূরা আহজাব : ৫৬)।
একবার দরুদ পাঠে ত্রিশটি লাভ
হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওপর কেউ একবার দরুদ পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার জন্য তিনটি সুসংবাদ ঘোষণা করা হয়।
এক. আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার ওপর দশটি রহমত বর্ষিত হয়।
দুই. তার দশটি গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
তিন. তার জন্য দশটি মর্যাদা বৃদ্ধির ফয়সালা করা হয়।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশটি রহমত বর্ষণ করেন। দশটি গোনাহ মাফ করেন এবং তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।’ (নাসাঈ : ১২৮০)।
দরুদ পাঠে শহীদি মর্যাদা
হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পড়বে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশটি রহমত বর্ষণ করবেন। দশবার পড়লে একশটি রহমত বর্ষণ করবেন। একশবার পড়লে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার জন্য তিনটি সুসংবাদ ঘোষণা করা হয়।
এক. আল্লাহ তায়ালা তার কপালে মোনাফেকির কলুষতা মুক্ত হওয়ার মহর অঙ্কিত করে দেন। সুতরাং এমন ব্যক্তি কখনও দুনিয়ায় পেরেশান হবে না। বরং সম্মানের সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করবে।
দুই. জাহান্নাম থেকে মুক্তির পরোয়ানা প্রদান করবেন।
তিন. কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে শহীদি সম্মান প্রদান করবেন।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশটি রহমত বর্ষণ করেন। যে ব্যক্তি দশবার দরুদ পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর একশটি রহমত নাজিল করেন। আর যে ব্যক্তি একশবার দরুদ প্রেরণ করে, আল্লাহ তায়ালা তার কপালে দোজখ থেকে মুক্তি এবং মোনাফেকি থেকে পবিত্রতার ঘোষণা লিখে দেন। আর কেয়ামতের দিন আল্লাহপাক তাকে শহীদি মর্যাদা দান করবেন।’ (আল-মুজামুল আওসাত লিত-তাবরানি : ৭৪৪২)।
দরুদে দুনিয়া-আখেরাতের যাবতীয় ইচ্ছা পূরণ
উবাই বিন কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি দোয়া করি, তাতে আপনার ওপর কতটা দরুদ পাঠ করব? তিনি বললেন, ‘যতটুকু তোমার ইচ্ছা’। আমি বললাম, দোয়ার এক-চতুর্থাংশ? তিনি বললেন, ‘যতটুকু তোমার ইচ্ছা। তবে এর চেয়ে বেশি পাঠ করলে তোমার জন্য উত্তম হবে।’ আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, ‘যতটুকু তোমার ইচ্ছা। তবে এর চেয়ে বেশি পাঠ করলে তা তোমার জন্য আরও বেশি উত্তম হবে।’ আমি বললাম, দুই-তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, ‘যতটুকু তোমার ইচ্ছা। তবে এর চেয়ে বেশি পাঠ করলে তোমার জন্য উত্তম হবে।’ আমি বললাম, পুরো দোয়ায় শুধু আপনার ওপর সালাত পাঠ করতে চাই। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তাহলে তোমার দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় ইচ্ছা পূর্ণ হবে এবং তোমার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (তিরমিজি : ২৩৮১)।